কাউখালীর আদর্শ শিক্ষক আব্দু মিয়া: বিদায়ে কাঁদলেন, কাঁদালেন সবাইকে

Abdu mina pic

কাউখালী প্রতিনিধি :

রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার রাঙ্গীপাড়া গ্রামের মৃত জাফর আলীর বড় ছেলে আব্দু মিয়া (৫৯)। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বল্লভদী গ্রামে। ১৯৭২ সালে মুরাদনগর ঘোরাশাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পাশ করেন। পরবর্তীতে রাঙামাটির কাউখালীতে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। গুণী এই শিক্ষকের ৩ ছেলে ১ মেয়ে। বড় ছেলে ডিগ্রি, মেজো ও ছোট ছেলে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ছোটখাট পেশায় জড়িত রয়েছেন। একমাত্র মেয়েকে এইচ.এস.সি পাশ করার পর বিয়ে দিয়ে দেন।

১৯৮৩ সালে আড়াইশ টাকা বেতন স্কেলে কাশখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। স্বল্প বেতনে চাকুরী করে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করাটাই তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু সব বাঁধা পেরিয়ে ছেলে মেয়েদের গড়ে তুলেছেন নিজের মতো করে। শিক্ষকতার পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন কাজে জড়িত থাকতে চেষ্টা করেন সবসময়। সদা হাস্যজ্জল সাদা পাঞ্জাবী পায়জামা পরা এই আদর্শ শিক্ষক এতটুকু কাদা লাগতে দেননি নিজে সাদাসিধে জীবনে। দূরে থেকেছেন সবধরণের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে।

১৯৮৩ সালে কাউখালীর কাশখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি একই স্কুল থেকে অবসরে যান এই আদর্শ শিক্ষক। শিক্ষকতার জীবনে স্কুলের ছোট ছোট কোমলমতি শিশুদের অতিপ্রিয় মানুষে পরিণত হন তার কর্মকাণ্ডে। তেত্রিশ বছরের কর্মজীবনে পড়ানোর পাশাপাশি স্কুলে তার প্রধান কাজ ছিল ছাত্র-ছাত্রীদের বই সেলানো। নতুন বছর আসলে অভিভাবকদের কখনো চিন্তা করতে হয়নি বইয়ের যত্ন নেয়ার ব্যাপারে।

গুণী এই শিক্ষক সারা স্কুলে হেঁটে হেঁটে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে বই সংগ্রহ করে এনে নিজের টেবিলে জড়ো করতেন। বিনা খরচে সেলাই করতেন প্রায় দুই শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীর পাঠ্য বই। বই সেলাইয়ের প্রয়োজনীয় উপকরণ সুঁই, সুতা, কাঠের টুকরো নিজের কাঁধে থাকা একটি কালো ব্যাগে সবসময় রেখে দিতেন। বিনিময়ে কোন টাকা পয়সা নেননি। তবে কখনো কখনো একটু চোখ রাঙ্গানী খেতে হত সন্তান সুলভ শিশুদের। সারাটা জীবন এভাবেই বিনা মূল্যে ছাত্র-ছাত্রীদের বই সেলাই করতে করতে বিদায় নিলেন এ স্কুল থেকে।

তাইতো তেত্রিশ বছরের কর্মজীবন শেষে বিদায় বেলায় শেষ কর্মস্থলের বাইরে দাঁড়িয়ে ছোট ছোট শিশুদের জড়িয়ে ধরে অঝোরধারায় কাঁদলেন নিজে। কাঁদালেন উপস্থিত সকল শিক্ষক শিক্ষার্থীদের। এমন শিক্ষক প্রতিটি স্কুলের জন্য আদর্শ হয়ে থাকুক এটাই সকলের প্রত্যাশা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন