কাপ্তাই হ্রদে পানি কমায় নৌ যাত্রীদের চরম ভোগান্তি

fec-image

রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদকে ঘিরে লাখো মানুষের জীবন-জীবিকা। বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য, যাতায়াতের ক্ষেত্রে এই হ্রদের উপর ভরসা করতে হয় রাঙামাটিবাসীকে। জেলা সদরের সাথে লংগদু, বিলাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি, বাঘাইছড়ি ও নানিয়ারচর এই উপজেলাগুলোর যোগাযোগ এবং ব্যবসা বাণিজ্যের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে এ হ্রদ।

সম্প্রতি কাপ্তাই হ্রদে অস্বাভাবিক মাত্রায় পানি কমে যাওয়ায় রাঙামাটি জেলা সদরের সঙ্গে উপজেলা গুলোর লঞ্চ চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পরেছে নৌপথে যাত্রীসহ উপজেলার সাথে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীরা। যার কারণে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের।

সংশ্লিষ্টরা বলছে, তীব্র দাবদাহ ও হ্রদের তলদেশ ভরাট হওয়ায় এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

লংগদু থেকে রাঙমাটি সরকারি কলেজে পড়তে আসা ছাত্রী হেলথি চাকমা বলেন, রাঙামাটি থেকে মারিশ্যা লঞ্চগুলো এখন মাইনী পর্যন্ত যেতে পারে। যাত্রীরা সেখান থেকে ছোট বোটে করে যাতায়াত করে। তবে মাইনী পর্যন্ত লঞ্চ গেলেও এক-দেড় ঘন্টা সময় বেশি লাগে। অনেক জায়গায় লঞ্চ আটকে যায়। ভাড়াও আগের তুলনায় বেড়েছে।

বিলাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি দেওয়ান জানান, লেকে পানি কমে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে বিলাইছড়িবাসী। ইতিমধ্যে রাঙামাটি-বিলাইছড়ি লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। রাঙামাটি থেকে লঞ্চ যাত্রী নিয়ে অর্ধেক পথ কেংড়াছড়ি পর্যন্ত এসে পরে ছোট ট্রলারের করে ঠেলে ঠেলে উপজেলা বোটঘাট পর্যন্ত আসে।

তিনি আরও বলেন, রাইখ্যং খালটি ড্রেজিংয়ের জন্য আমাদের বিলাইছড়িবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। কিন্তু সে দাবি এখনও পূরণ হয়নি।

জুরাছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমা জানান, রাঙামাটি থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী লঞ্চ জুরাছড়ি উপজেলা সীমানা পর্যন্ত আসে। ছোট ট্রলারে করে জুরাছড়ি রাস্তা মাথা পর্যন্ত এতে তারপর রাস্তা মাথা থেকে মোটরসাইকেলের করে উপজেলা সদর পর্যন্ত আসতে হয়। চার-থেকে পাঁচগুণ ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হয়।

তিনি জানান, মিটিঙ্গাছড়ি থেকে বনযোগীছড়া পর্যন্ত সংযোগ সড়কটি যদি হয় যাতায়াতে কিছুটা সুবিধা হবে। জুরাছড়ি উপজেলার একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম নৌ-পথ হওয়ায় এখন চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এখানকার বাসিন্দারা। প্রতি বছর হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় ব্যবসা বাণিজ্যের বিরুপ প্রভাব পড়ে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হয় বেশি দামে। ২০ টাকার জিনিস ৮০ টাকায় কিনে খেতে হয় বলে তিনি জানান।

বিলাইছড়ির ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস বলেন, নদীর পানি এখন নাই। শহর থেকে মাল নিয়ে আসলেও উপজেলাতে পৌছাতে খুব কষ্ট হয়। পরিবহন ভাড়া বেশি হওয়ায় আমরা চরম বিপাকে পড়েছি। বৃষ্টি না হলে হয়তো কিছু দিনের মধ্যে এটাও সম্ভব হবে না। যদি কাপ্তাই হ্রদের বেশ কিছু জায়গায় খনন করা হয় তাহলে যাতায়াত ব্যবস্থা সুগম হবে।

রাঙামাটি লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দীন সেলিম জানান, জেলা সদরের সাথে বিলাইছড়ি বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি ও বরকল উপজেলার লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে লংগদু উপজেলা পর্যন্ত লঞ্চ চললেও খুব কষ্ট করে সেবা দিতে হচ্ছে।

কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তথ্যমতে, হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় ৩টি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। বাকি ২টি ইউনিটে মাত্র ৫৮ থেকে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বৃষ্টি না হওয়ায় হ্রদের পানি কমে আসছে, যার ফলে একে একে লঞ্চ চলাচলও বন্ধ হচ্ছে । এ পেশার সাথে জড়িত শ্রমিক এবং মালিক উভয়ই চরম অর্থ সংকটে পড়বে।

তারা আরও জানান, কাপ্তাই হ্রদ ড্রেজিংয়ের কোনো বিকল্প নেই। বর্তমানে কিছু শাখা ও খাল যদি অতি দ্রুত খনন করা না হয় তবে এই হ্রদের জীববৈচিত্রও চরম সংকটে পড়বে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কাপ্তাই, নৌপথে, পানি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন