কে এই জামাল, খুঁটির জোর কোথায় তার?

fec-image

সাধারণ মানুষের মূর্তিমান আতঙ্ক, কিশোর গ্যাং লিডার মোহাম্মদ জামাল। বাড়ি কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল মনু পাড়ায়।

মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাইসহ এমন কোন অপরাধ নেই যা জামাল করে না। উঠতি বয়সী এই তরুণের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে লজ্জিত, বিব্রত এলাকাবাসী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, খুরুশকুল ও শহরের বিভিন্ন এলাকার ছেলেদের নিয়ে জামালের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং।

জামালের গ্রুপে রয়েছে ১৫ জনের মতো সদস্য। যাদের বয়স ১৮ বছর থেকে ২৫ বছর। তাদের নিয়ে ‘জামাল ভাই’ নাম দিয়ে একটি ফেসবুক আইডিও খুলেছে। গ্রুপের নেটওয়ার্ক ও অপরাধ কর্ম কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, খুরুশকুলের মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয়ে রয়েছে জামালের গ্যাংটি। এলাকার কিছু অসাধু ব্যক্তি তাদের ব্যবহার করে। প্রয়োজনে অর্থের যোগান ও রাজনৈতিক প্রশ্রয়ও দিয়ে থাকে। যে কারণে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠে এই সিন্ডিকেট।

জামালের নেতৃত্বাধীন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করতে উচ্চ শব্দে গান বাজায়। এলাকায় দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালায়। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর চড়াও হয়। ভাড়ায় খুনোখুনিও করে।

সম্প্রতি আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় বোরকা ও হিজাব পরিহিত একজন নারীকে বখাটেদের হাত থেকে রক্ষা করতে গিয়ে আব্দুল মোনাফ নামের এক যুবককে বেদম মারধর ও নির্যাতনের ঘটনায় নেতৃত্ব দেয় বখাটে জামাল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি উপযুক্ত প্রমাণ।

গত ২৫ মে খুরুশকুল রাস্তার মাথা এলাকায় মো. লোকমান হাকিম আজাদ নামের যুবককে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল, মানিব্যাগসহ সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ওই ঘটনার নেতৃত্বে ছিল এই জামাল।

খুরুশকুলের স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, জামালের নেতৃত্বে রয়েছে শক্তিশালী কিশোর গ্যাং। আরমান, রায়হানসহ অন্যান্য গ্যাং সদস্যরা প্রতিদিন চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ কর্ম করে যাচ্ছে। নিরীহ মানুষকে জিম্মি করে চাঁদাও আদায় করে তারা। এসব অপরাধীচক্রের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা চায় এলাকাবাসী।

স্থানীয়দের প্রশ্ন, কিশোর গ্যাং লিডার জামালের খুঁটির জোর কোথায়? এত অপরাধের পরেও কেন ধরাছোঁয়ার বাইরে?

জামালকে আটক করলে অনেক অপরাধের ভয়ঙ্কর তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে এলাকাবাসীর ধারনা।

এদিকে, নারীকে রক্ষা করতে গিয়ে মারধরের ঘটনায় সরাসরি জড়িত আরমান ও রায়হান নামের দুই বখাটেকে আটক করেছে পুলিশ।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস রবিবার (১২ জুন) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ঘটনাটি অবগত হওয়ার পর শনিবার রাতেই পুলিশের ২টি টিম ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। তারা সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে দুই জনকে আটক করে।

অভিযুক্ত আরেকজনের নাম মোহাম্মদ জামাল। তাকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান ওসি।

এ ঘটনায় ভিন্ন ধরনের বক্তব্যও পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুনীর উল গিয়াস।

হামলার শিকার যুবক আব্দুল মোনাফ ও ভুক্তভোগী তরুণী খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার বাসিন্দা। আর হামলাকারী যুবকদের মধ্যে মো. জামাল ও মো. রায়হান মনুপাড়া এবং মো. আরমান একই ইউনিয়নের কুলিয়াপাড়ার বাসিন্দা।

ভিকটিম আব্দুল মোনাফ বলেন, ইভটিজিংয়ের শিকার তরুণী আমার বোন। খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে আমাদের ফ্ল্যাট রয়েছে। বোন মামার বাড়ি যাওয়ার পথে প্রকল্পের বেড়িবাঁধ এলাকায় পৌঁছালে জামাল, রায়হান ও আরমান পথে উত্যক্ত করে। নোংরা ভাষায় কথা বলে। আমার বোন ফিরে আসতে চাইলে বখাটেরা বার বার পথ আটকাচ্ছিল। প্রকল্প থেকে ঘটনাটি দেখে আমি দৌঁড়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। প্রতিবাদ করলে আমাকে উল্টো বেদম মারধর করে বখাটেরা। তবু বোনের ইজ্জত বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করি। তিনি আরও বলেন, ঘটনার পরেই আমি থানাতে লিখিত অভিযোগ করেছিলাম। কোন ব্যবস্থা নেয়নি। শনিবার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে টনক নড়ে পুলিশের।

এদিকে, মারধরের শিকার যুবক সম্পর্কে ভিকটিম তরুণীর ভাই দাবি করলেও স্থানীয়রা ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন বলে জানান স্থানীয় ইউপি সদস্য নাছির উদ্দিন।

এলাকাবাসীর বরাতে নাছির বলেন, ভিডিওতে হামলায় অংশ নেয়া যুবকের সঙ্গে ভুক্তভোগী তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে সম্পর্ক ভেঙে যায়। পরবর্তীতে ওই তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে ভিডিওতে মারধরের শিকার যুবকের। এ নিয়ে তরুণীর বর্তমান ও সাবেক প্রেমিকের মধ্যে তিক্ততা থেকে এমন ঘটনার সৃষ্টি হয়।

তবে প্রকাশ্যে মারধর ও নারীর শ্লীলতাহানির বিষয়টি মারাত্মক অপরাধ মনে করছেন স্থানীয়রা। ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি চায় তারা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন