খাগড়াছড়িতে ছাত্রলীগ কর্মী রাসেল হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি:

খাগড়াছড়িতে ছাত্রলীগ কর্মী মো. রাসেল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত পৌরসভার মেয়র মো. রফিকুল আলমসহ অন্য আসামীরা গ্রেফতারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে খাগড়াছড়িতে জেলা ছাত্রলীগ।

বৃহস্পতিবার(২৯ মার্চ) সকালে খাগড়াছড়ি শহরের কদমতলী এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে তারা এ সংবাদ সম্মেলন করে।

এসময় লিখিত বক্তব্যে তারা বলে, ছাত্রলীগ কর্মী রাসেল হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

খাগড়াছড়ি শহরের কদমতলী এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আমিন হোসেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নুরন্নবী চৌধুরী, সিনিয়র সহ সভাপতি রণ বিক্রম ত্রিপুরা, কল্যাণ মিত্র বড়ুয়া, মনির হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মংক্যাচিং চৌধুরী, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ সদস্য পার্থ ত্রিপুরা জুয়েল, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাংবাদিক নুরুল আজম, সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার দে, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাবেদ হোসে, জেলা যুবলীগের সভাপতি যতন কুমার ত্রিপুরা, সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান হেলাল, সাধারণ সম্পাদক কে এম ইমাইল হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি টেকো চাকমা, নিহত রাসেলের বাবা নুর হোসেন, মা মাজেদা বেগম ও বোন নুর বানুসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ছাত্রলীগ কর্মী রাসেল হত্যাকাণ্ডের ৫দিন অতিবাহিত হলেও এখন মামলার প্রধান আসামি পৌর মেয়র রফিকুল আলম, ছোট ভাই দিদারুল আলমদের গ্রেফতার করা হয়নি। উল্টো প্রকাশ্যে প্রশাসনের সহযোগিতায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। গত পৌর নির্বাচনের পর থেকে দলের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল আলম, তার ছোট ভাই রফিকুল আলম ও দিদারুল আলমের অনুসারীদের হামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অন্তত ২৬ নেতাকর্মী পঙ্গু হয়েছে। হামলার পর মিথ্যা মামলায় অন্তত ২ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

নিহত রাসেলের বাবা নুর হোসেন, মা খোদেজা বেগম ও বোন নুর বানুর অভিযোগ ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর মেয়র রফিকুল আলমের অনুসারীরা তাদের বাসায় ভাংচুর হামলা ও রাসেলের মা’কে কুপিয়ে আহত করে। এই ঘটনায় থানায় মামলা হলেও পুলিশ এখনও পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেননি। ফলে রাসেলকে হত্যার ঘটনায় মামলা তুলে নেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়ায় রাসেলের পুরো পরিবার এখন নিরাপত্তাহীতায় দিন পার করছে। পক্ষান্তরে আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র মো. রফিকুল আলম পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, মাদক সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ছাত্রলীগ কর্মী রাসেল খুন হয়েছে। আমরাও এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। কিন্তু আওয়ামী লীগ নামধারী একটি মহল ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাহাদত হোসেন টিটু, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঘটনায় মামলা হওয়ার আগ থেকে পুলিশ প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতারে তৎপর রয়েছে। এ পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ নির্মম হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

গত ২৪ মার্চ জেলা শহরের মিলনপুর ব্রিজ এলাকায় ওয়ার্ড ছাত্রলীগ কর্মী মো. রাসেল শেখ(১৭)কে এলোপাথারী কুপিয়ে ব্রিজের নিচে ফেলে দেয় সন্ত্রাসীরা। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ১০টায় জেলার মানিকছড়ি এলাকায় রাসেল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

এ ঘটনায় নিহত রাসেলের মা খোদেজা বেগম রবিবার(২৬ মার্চ) রাতে বাদী হয়ে খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম ও জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পাদক দিদারুল আলমসহ প্রতিপক্ষের ১৯জনের নাম উল্লেখ করে আরও অন্তত ১০/১৫ অজ্ঞাত নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করে।

উল্লেখ, গত পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়াকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ি আওয়ামী লীগে বিভক্তি দেখা দেয়। সে থেকে দুই পক্ষের মধ্যে প্রতিনিয়ত হামলা, মামলা ও সংঘর্ষ লেগেই ছিল।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন