“কক্সবাজারে ঘূর্ণিঝড় ফণী’র প্রভাবে মাছের বাজারে উত্তাপ বাড়ছে”

ঘূর্ণিঝড় ফণী’র প্রভাব রোজার বাজারে

 

রমজান সামনে রেখে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, চিনি, ছোলার দাম এমনি ঊর্ধ্বমুখী। আর এর মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় ফণী’র প্রভাবে মাছের বাজারে উত্তাপ বাড়ছে। সাগরে মাছ ধরা বন্ধের কারণে বাজারে মাছের সংকট দিয়েছে। গোশতের দামও এখন চড়া।

গতকাল শনিবার কক্সবাজার শহরের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শাকবসজির সরবরাহ কিছুটা স্বাভাবিক রয়েছে। পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যেরও। অনেকটা প্রশাসনের বাজার মনিটরিংয়ের মধ্যেও ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। বাজারভেদে মূল্যের তারতাম্যও রয়েছে।

কয়েকদিন ধরে সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় বাজারে সামুদ্রিক মাছ তেমন নেই। তবে পুকুর ও খামারের মাছের সরবরাহ বাড়ছে। জীবিত রুই, কাতলা, কৈ, মাগুর, তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে, দামও খুব চড়া। রুই মাছ ২৮০-৩০০ টাকা, কাতল ৩০০-৩৫০, তেলাপিয়া ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাংসের দামের উত্তাপ এখনও কমেনি। ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি ১৮০-১৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৩৯০ থেকে ৪৫০ টাকা। হাড়ছাড়া গরুর গোশত ৭০০ টাকা, হাড়সহ ৬০০ টাকা, খাসি ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে সবজির দাম কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। কাকরোল ৬০-৭০ টাকা, পটল ৪০-৫০, বরবটি ৫০-৫৫, লাউ ৪০, ঢেঁড়স ৬০, তিতা করলা ৫৫-৬০, ঝিঙ্গে ৪৫-৫০, চিচিঙ্গা ৫০-৫৫, মিষ্টি কুমড়া ৩০-৩৫, শসা ৫০-৬০, পেঁপে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি আলু ৩৫-৪০, টমেটো ৪০-৫০, কাঁচামরিচ ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পেঁয়াজের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৫-৭ টাকা বেড়েছে। ভারতীয় পেঁয়াজ মানভেদে ২২-২৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজের কেজি ৩০-৩৫ টাকা, রসুনের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আদার দামও বেড়েছে। প্রতিকেজি আদা ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনির দাম কেজিতে ৩-৫ টাকা বেড়েছে। বাড়ছে ছোলার দামও। ভালমানের ছোলা ৮৫-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভোজ্যতেলের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শতাধিক বোট কক্সবাজার শহরের ফিশারী ঘাট ও মাঝের ঘাটসহ অন্যান্য আশপাশের এলাকায় নোঙ্গর করেছে। এতে করে বোটের মালিক ও জেলেদের মাঝে বিরাজ করছে চরম হতাশা।

অন্যদিকে একদিন পরেই পবিত্র রমযান মাস শুরু। রমযানকে সামনে রেখে অনেকে প্রয়োজনীয় সদায় সারতে বাজারে গিয়ে পড়েছে মহা বিপদে। কাঁচা শাকসবজি থেকে শুরু করে বেড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মাছ, মাংস ও দেশী মুরগীর দাম। অপরদিকে ঘূর্ণিঝড় ফণী‘র প্রভাব জেলেদের মধ্যে আরও আতংক বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে হাজার হাজার মাঝি-মাল্লারা পড়ে গেছে চরম বেকায়দায়।

জেলেরা জানান, একদিকে ফণী আতঙ্ক অপরদিকে সাগরে মাছের আকাল ফলে বাজারে মাছের সরবরাহ অনেক কম। অন্যদিকে বোট মালিকরা জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণী’র আগাম বার্তা থাকায় বোট নিয়ে সাগরে যেতে না পারায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারের উপকুলীয় এলাকা কুতুুবদিয়া, মহেশখালী, চকরিয়া, উখিয়া, টেকনাফ, পেকুয়া, সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিদিন ৪ হাজার ছোট-বড় ফিশিং বোট জীবন জীবিকার তাগিদে ছুটে যায় গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে। এ কাজের সাথে জড়িত রয়েছে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মাঝি-মাল্লা। সাগরে মাছ শিকারের পর এরা ফিরে আসে কক্সবাজার শহরের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক জোনখ্যাত ফিশারিঘাট, মাঝির ঘাটসহ কয়েকটি পল্টন এলাকায়। মৌসুমে শত শত বোট এখানে নোঙ্গর করে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিক্রি করে আসছে।

জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় ফণি‘র প্রভাব থাকায় ব্যস্ততম এই বাণিজ্যিক এলাকা ফিশারিঘাটে মাছ ব্যবসায়ী কিংবা জেলেদের কোলাহল নেই বললেই চলে। এছাড়া মাছ ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ও লক্ষ্য করা যায়নি। জেলেরা জানান, গত কিছুদিন যাবৎ সাগরে মাছের আকাল দেখা দেয় আর এখন ফণি আতংকে তারাও পড়েছেন মহা বিপাকে। শহরের বড়বাজার, বাহারছড়া বাজার, কানাইয়াবাজার, কালুর দোকান, কলাতলী বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সামুদ্রীক মাছের সংগ্রহ অনেক কম। যা আছে তাও আবার সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।

ঘূর্ণিঝড় ফণী’র প্রভাব পড়েছে কক্সবাজার শহর, উখিয়া ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ অন্যান্য বাজারেও। সাগর উত্তাল থাকায় কয়েকদিন ধরে সাগরে মাছ ধরতে পারছেননা উপকূলের জেলেরা। এতে কক্সবাজারে ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে মাছের দাম।

শনিবার সকাল ও বিকেলে বিভিন্ন বাজার ও ফিশারি ঘাট ঘুরে দেখা যায়, বাড়তি দামে হিমায়িত মাছ বিক্রি করে চাহিদা মেটানো হচ্ছে। বাজারে মাছের সরবরাহ ঘাটতি থাকায় কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে প্রায় ৫০-১০০ টাকা। যার ফলে শুটকি মাছের কদর বেড়েছে।

ক্রেতারা জানান-এই মুহুর্তে পণ্যের দাম বাড়ার পেছনে প্রায় ৯০ ভাগ কারণ অজুহাত ও ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট। তিনি বলেন, ‘এই দেখেন না ঘূর্ণিঝড় ফণি আসছে। তার জন্য এক দফা দাম বাড়ছে। রোজা আসবে, তার ১৫/২০ দিন আগ থেকে দাম বাড়ানো হয়েছে।’

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, ঘূর্ণিঝড় ফণী’র প্রভাব, বাজারে উত্তাপ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন