চকরিয়ায় উপজেলা নির্বাচনে এমপি’র বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘণের অভিযোগ

চকরিয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৮ মার্চ (সোমবার)। কিন্তু দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়ে কক্সবাজার-১ আসনের এমপি জাফর আলম আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও নির্বাচন কমিশন তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

শনিবার (১৬ মার্চ) তিনি বিভিন্ন এলাকায় ভোট চান নৌকার পক্ষে। নির্বাচনের দিনও তিনি এলাকায় অবস্থান করবেন এমন খবরে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ও সাধারণ ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকায় এমপির উপস্থিাতি ও প্রভাব বিস্তারের কারণে এখানে সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠান নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ও সাধারণ ভোটাররা।

দলের বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, উপজেলার ৯৯টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে অন্তত ৫০টি কেন্দ্র বাছাই করে কিভাবে ভোট কারচুপি করা যায় সেজন্য নৌকার প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের পক্ষে সন্ত্রাসী শ্রেণীর লোকদের ঠিক করা হয়েছে কেন্দ্রভিত্তিক। মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ হওয়া এসব কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারের সহায়তায় ভোট গ্রহণের আগের রাতে তারা এসব কেন্দ্র দখলে নিয়ে ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করবে।

ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, প্রশাসনের কড়াকড়িতে যদি রাতের অপারেশন কোন কারণে ব্যর্থ হয় তাহলে বিকল্প পন্থা হিসেবে ভোটগ্রহণের সময় তিন পদের ব্যালটের মধ্যে শুধুমাত্র দুই ভাইস চেয়ারম্যান পদের ব্যালট ভোটারদের হাতে দেওয়া হবে। চেয়ারম্যান পদের ব্যালট যাতে ভোটারদের হাতে না যায় সেজন্য চূড়ান্ত পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এমনকি চেয়ারম্যান পদের হুবহু বিকল্প ব্যালট ছাপিয়ে বাক্সে ঢুকিয়ে দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে নৌকার প্রার্থীর।

আবার গ্রামে গ্রামে গিয়ে সাধারণ ভোটারদেরও কেন্দ্রে না আসতে দলীয় নেতাকর্মীর মাধ্যমে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। এই অবস্থাায় চকরিয়ায় সুষ্ঠ, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। সেখানে আমি স্পষ্ট বলেছি, এমপি মহোদয় এলাকায় অবস্থান করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করছেন। ভোটের দিনও যদি এমপি এলাকায় অবস্থান করেন তাহলে প্রশাসন সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ ভোট উপহার দিতে পারবেন না। কিন্তু এরপরও এমপি মহোদয় তাঁর কাজ নির্বিঘ্নে করে যাচ্ছেন।

এতে ভোটের সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে না। তাই আমি এবং সাধারণ ভোটারদের আশা, সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের চাওয়া অনুযায়ী এমপি মহোদয় সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠান উপহার দিতে প্রশাসনকে সহায়তা করবেন।

চেয়ারম্যান পদে অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী জহিরুল ইসলাম বলেন, এমপি যেভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মাঠে-ঘাটে চষে বেড়িয়েছেন, এতে নির্বাচনের সুষ্ঠ, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে না ভোটের দিন। এতে আমরাও আতঙ্কে রয়েছি।

এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. বশির আহমদ বলেন, এবারের নির্বাচন সুষ্ঠ, শান্তিপূর্ণ, গ্রহণযোগ্য করতে যা যা করার দরকার তার সবই চূড়ান্ত করা হয়েছে। নির্বাচনে ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের কোন অনিয়ম সহ্য করা হবে না। এর পরও কোন কেন্দ্রে কেউ প্রভাব বিস্তার বা অন্য কোন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে ওই কেন্দ্রে নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া হবে। তাই একটি সুষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য ভোট উপহার দিতে প্রতিদ্বন্দ্বি সকল প্রার্থীর উচিত নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে সহায়তা করা।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার-১ আসনের এমপি জাফর আলম বলেন, প্রশাসনের মতো আমিও চাই একটি সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। আর যেসব প্রার্থী আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন, তার কোন সত্যতা নেই।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: চকরিয়ায় উপজেলা নির্বাচনে এমপি’র বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘণের অভিযোগ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন