চকরিয়ায় চলাচল পথে স্থায়ী দেওয়াল নির্মাণে ব্যবসায়ীদের মাঝে উত্তেজনা

Chakaria Pic. 24.07.16
নিজস্ব প্রতিনিধি :
বাংলাদেশ পুলিশের মহা পরিদর্শক (আইজি) এ কে এম শহীদুল হক কক্সবাজার আসার কারণে বিভিন্ন থানার পুলিশ কর্মকর্তারা স্টেশন ছেড়ে জেলায় অবস্থান করেন রবিবার। একইভাবে চকরিয়া থানার ওসিসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারাও এদিন খুব সকালেই জেলায় চলে যান। আর এ সুযোগে চকরিয়া পৌরশহর চিরিঙ্গার আনোয়ার শপিং কমপ্লেক্সের নিচতলার ৩৭ নম্বর দোকান তথা সততা ক্রোকারিজের দক্ষিণ পাশের গ্রিলের বাইরের অংশে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে সিড়ির পরিবর্তে স্থায়ী দেওয়াল নির্মাণের কাজ শুরু করে জনৈক ছলিম উল্লাহ ও নেজাম উদ্দিনের উপস্থিতিতে একদল দখলবাজ।

এ সময় বেশ কিছু সশস্ত্র সন্ত্রাসী ওই স্থানে পাহারাও বসায়। ইতিপূর্বেও এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে পাশ্ববর্তী অপর একটি বিপনী বিতানের দোকানঘর দখল করে অবৈধভাবে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

রবিবার সকাল থেকে সিড়ির নাম দিয়ে স্থায়ী দেওয়াল নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করছে। অবশ্য লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর বিকেল চারটার দিকে থানার এসআই আশরাফুল আলমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অবৈধ নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে চলে যান। কিন্তু পুলিশ চলে যাওয়ার পর দখলবাজরা ফের নির্মাণকাজ শুরু করে।

আনোয়ার শপিং কমপ্লেক্সের সততা ক্রোকারিজের সত্ত্বাধিকারী মো. নবীর হোছাইন অভিযোগ করেন, তার দোকানটি (জীবিত থাকাবস্থায়) জনৈক আব্বাছ মিয়া ড্রাইভারের কাছ থেকে ৯৯ বছরের জন্য চুক্তিমূলে সেলামীতে দোকানঘরের দখল পজিশন নেন। কিন্তু আব্বাছ মিয়া মারা যাওয়ার পর তার ছেলে ছলিম উল্লাহ ও নেজাম উদ্দিন বিভিন্ন ভাড়াটিয়া থেকে পুনরায় সেলামী দাবি করে। এমনকি বিভিন্ন সময় মিথ্যা তথ্য দিয়ে থানা ও আদালতে নালিশী অভিযোগ করে হয়রানি করে আসছিল ভাড়াটিয়াদের।

এমনকি নতুন চুক্তিনামা করতে হবে এমন অযৌক্তিক দাবি তুলে মোটা অংকের টাকাও হাতিয়ে নেয় ইতিপূর্বে। বিষয়টি নিয়ে থানায় একাধিকবার সালিশ-বৈঠক হয় এবং সর্বশেষ দুইপক্ষের মধ্যে নন জুডিশিয়াল স্টাম্পের মাধ্যমে নতুনভাবে চুক্তিনামা সম্পাদন এবং উভয়পক্ষের ব্যবহারের জন্য সততা ক্রোকারিজের দখলে থাকা দক্ষিণাংশের কয়েকফুট জায়গায় চলাচলের সুবিধার্থে একটি সিড়ি নির্মাণেরও জন্য জায়গা ছেড়ে দেওয়া হয়। ওইসময় থানার ওসির মধ্যস্থতায় সম্পাদিত চুক্তিপত্রেও উল্লেখ করা হয় উভয়পক্ষের চলাচলের জন্য সিড়ি বা চলাচল পথ উম্মুক্ত থাকবে, কোন ধরনের স্থায়ী দেওয়াল নির্মাণ করা যাবে না।

এই শর্ত ভঙ্গ করে ইতিপূর্বে বেশকয়েকবার স্থায়ী দেওয়াল নির্মাণের চেষ্টা চালালে থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুল আজম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেওয়াল নির্মাণ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেন। কিন্তু রবিবার পুলিশের মহা পরিদর্শক কক্সবাজার আসায় থানার ওসিসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা এনিয়ে ব্যস্ত থাকার সুযোগে দখলবাজ চক্র পুনরায় সিড়ির বদলে দলবল নিয়ে এবং সন্ত্রাসী জড়ো করে স্থায়ী দেওয়াল নির্মাণকাজ শুরু করে।

ভুক্তভোগী সততা ক্রোকারিজের মালিক নবীর হোছাইন আরো অভিযোগ করেন, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির ইন্ধনে দখলবাজ চক্রটি গত একবছর ধরে তার মতো বিভিন্ন বিপনী বিতানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করে আসছিল। এনিয়ে থানা ও আদালতে অসংখ্য অভিযোগ করা হয় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে। এর পরও তাদের এই অপতৎপরতা লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না ওই প্রভাবশালীর ইন্ধন থাকায়। এতে ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত পথে বসার উপক্রম এবং নানাভাবে হয়রানি ও হুমকির সম্মুখিন হয়েছেন।

এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার এসআই আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুল আজম স্যারের নির্দেশনা পেয়েই ঘটনাস্থলে গিয়ে দেওয়াল নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে যেহেতু আগে থেকে থানায় বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেহেতু আজকের অভিযোগটিও নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।’

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন