চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী বন্ধ হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা তুলে নেয়া হবে- মহিউদ্দীন খান আলমগীর

Untitled-1

আলমগীর মানিক,রাঙামাটি:
পদত্যাগী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর এমপি বলেছেন, যারা দেশের স্বার্থ ও আনুগত্যের বিরুদ্ধে কাজ করবে এমন দুর্বৃত্তদের শক্ত হাতে দমনের জন্য সরকার সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন মানচিত্রের সাথে ৭২ সালে এই জাতির জন্য যে সংবিধান উপহার দিয়েছেন তার মুলমন্ত্রই হলো সকল জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাই পাহাড়ি-বাঙালিসহ দেশের সকল জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণে সরকার বদ্ধ পরিকর।

তিনি বলেন, কতিপয় বিপথগামী ব্যক্তি তাদের নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার মানসে সবসময় বিপরীতমুখি অবস্থান নিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালায় এদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে বরং ঐক্যবদ্ধভাবে এদের প্রতিহত করতে হবে। তিনি বলেন, চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী বন্ধ হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা তুলে নেয়া হবে। তিনি বলেন সন্ত্রাসী চাঁদাবাজি করে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডে বাধা সৃষ্টিকারীরা টিকে থাকতে পারবে না শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে বেসামরিক প্রশাসন চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসাবে সাজেক থানা স্থাপন করা হয়েছে। এই থানার আইন শৃঙ্খলা রায় পুলিশী কার্যক্রমে সকলকে সহযোগিতা করার আহবান জানান।

মঙ্গলবার সাজেক থানা নামে রাঙামাটি জেলায় নতুন একটি থানার কার্যক্রম উদ্বোধনের পর অনুষ্ঠিত এক সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। রাঙামাটির পুলিশ সুপার আমেনা বেগমের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার এমপি, বাংলাদেশ পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নওশের আলী, র‌্যাবের উপ-পরিচালক ফরিদ আহম্মেদ, রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তফা কামাল, বাঘাইহাট জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল কবির আহাম্মদ ও বিজিবি কমান্ডার এসময় উপস্থিত ছিলেন।

সুধী সমাবেশে অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি। এর আগে মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হেলিকপ্টার যোগে সাজেক আসেন। এরপর তিনি ফিতা কেটে মাচালং পুলিশ ফাঁড়িকে সাজেক থানা হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষনা দেন। এদিকে দূর্গম সাজেকে বহুল প্রত্যাশিত সাজেক থানার উদ্বোধনে এলাকাবাসীর মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।

অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দিপংকর তালুকদার এমপি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, নানাভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি বিশেষ অবস্থার সৃষ্টি হওয়ায় সরকার বাধ্য হয়ে এই এলাকার আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সেনা সদস্যদের কাজে লাগাতে বাধ্য হয়েছে। সময়ের প্রয়োজন শেষ হলে সেনা সদস্যরা ধীরে ধীরে আবার তাদের স্বস্থানে ফিরে যাবে। শান্তি চুক্তি অনুযায়ীও সেনা সদস্যদের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা। সরকার সে ল্েযই কাজ করছে এবং ধীরে ধীরে পার্বত্য এলাকা থেকে সেনা ছাউনীগুলো সরিয়ে নিচ্ছে। তিনি বলেন, কিন্তু সেনাবাহিনী সরিয়ে নেওয়ার পর পার্বত্য এলাকায়াইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে যে শূণ্যতা সৃষ্টি হবে। তাতো যেকোনোভাবেই পুরণ করতে হবে। সেই শূণ্যস্থান পুরণের লইে বেসামরিক প্রশাসনকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। এই বিবেচনা থেকেই বর্তমান সরকার সাজেকে এই নতুন থানা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।

তিনি সাজেক থানা স্থাপনে পাহাড়ি একটি পরে বিরোধিতার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, কিন্তু যারা এই কাজে বিরোধিতা করছেন তাদের কথা ও কাজের মধ্যে মিল নেই। একদিকে তারা সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারের দাবি তুলছেন অন্যদিকে এই দাবি পুরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। আসলে তাদের উদ্দেশ্য হলো পাহাড়ি-বাঙালি বিভাজন সৃষ্টি করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর মাধ্যমে শান্তি বিনষ্ট করা। জনগণকে এ ব্যাপারে সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার পার্বত্য এলাকার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়ে কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে এখানকার পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে জাইকা ইসিমোডের সাথে পৃথক দু’টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সংস্থা দুটি পর্যটন শিল্পের বিকাশে ইতোমধ্যে ৫০ মিলিয়ন ডলার করে মোট এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা হাতে নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এ ছাড়া প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য সেবার মান বৃদ্ধির লরে সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। ইউএনডিপি তাদের প্রকল্প শেষ করে চলে গেলে তাদের অধীনে কাজ করা সহস্রাধিক মানুষকে যাতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে স্বাস্থ্যসেবার কাজে লাগানো যায় সে লক্ষ্যে সরকার এসব স্বাস্থকর্মীকে আত্মীকরণের জন্য নতুন একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

প্রসঙ্গত ১৯৮৩ সালে মাচালং এলাকায় একটি পুলিশি থানা প্রতিষ্ঠিত করা হলেও পরে নানা কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৩ সালে সরকার পুণরায় এই এলাকায় একটি পুলিশি থানা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে অবশেষে চলতি বছরের জুনমাসে এই থানা প্রতিষ্ঠার যাবতীয় পরিকল্পনা চুড়ান্ত করা হয় এবং সেপ্টেম্বরে জনবল নিয়োগ করা হয়। বর্তমানে এই থানায় একজন ইন্সপেক্টার, একজন সাব- ইন্সপেক্টার ও একজন এএসআইসহ মোট পঁচিশজন পুলিশ সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার এই থানা পূণাঙ্গভাবে তার কার্যক্রম শুরু করলো।

উল্লেখ্য, জনগণের নিরাপত্তা বিধানের স্বার্থে সাজেকে থানা প্রতিষ্ঠা করা হলেও পাহাড়িদের একটি গ্রুপ এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। থানা উদ্বোধনের প্রতিবাদে তারা গতকাল সাজেক বাজারের সকল দোকানপাট বন্ধ রেখে এর প্রতিবাদ জানায়। তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আগমনের সময় কালো পতাকা টানিয়ে এবং মানববন্ধন করে এর বিরোধিতা আরো স্পষ্ট করার চেষ্টা চালায়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন