বান্দরবানে শান্তিচুক্তির ২২তম বর্ষপূর্তিতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খন্দকার মো: শহিদুল ইমরান

চুক্তি ও উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতায় এখনো অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা

fec-image

বান্দরবানে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ২২তম বর্ষপূর্তি। সোমবার (২ ডিসেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গনে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে দিনের কর্মসূচি উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি বান্দরবান ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খন্দকার মো: শহিদুল ইমরান পিএসসি।

পরে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে রাজার মাঠে গিয়ে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।

চুক্তির বর্ষপূতি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেনা রিজিয়নের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খন্দকার মো: শহিদুল ইমরান পিএসসি বলেছেন- শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার অত্যান্ত আন্তরিক। চুক্তির ধারা অনুসারে দুই তৃতীয়ংশ সেনা ক্যাম্প পার্বত্যঞ্চল থেকে সরানো হয়েছে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো অস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসীরা ঘুরছে, চাঁদাবাজি করছে, উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। শান্তি প্রতিষ্ঠা ও চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়নে এখনো প্রতিবন্ধকতা সেই অস্ত্রধারীরা।

সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজির এই সমস্যা থেকে উত্তোরণের জন্য সাধারণ মানুষকে সজাগ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর প্রধান আরো বলেন- সরকার শান্তি চুক্তি করার সময় পাহাড়ে একটিমাত্র আঞ্চলিক দল ছিল। কিন্তু চুক্তি করার পরে পার্বত্যঞ্চলে চারটির অধিক দল গঠিত হয়েছে এবং প্রত্যেকের সস্বস্ত্র ক্যাডার বাহিনী রয়েছে। নিজেদের অবস্থান জানান দিতে এবং চাঁদা আদায়ের সুবিধার্থে তারা বিভিন্ন এলাকা নিয়ন্ত্রণে তৎপর রয়েছে। তাদের কারণেই পাহাড়ে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের সৃষ্টি হচ্ছে। সেনা রিজিয়নের এই কর্মকর্তা আরো বলেন- পার্বত্যমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিক ও উদার পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য। তিনি সকল জাতিগোষ্ঠীর কাছে শান্তির সুবাতাস পৌছে দেয়ার জন্য কাজ করছে। শান্তি চুক্তির শর্ত অনুসারে পাহাড়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ করে অস্ত্র জমা দেওয়ার জন্য পুন: আহ্বান জানান সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম বলেছেন- প্রতিটি এলাকায় বিদ্রোহ বা বিক্ষোভ জন্ম নেয় বঞ্চনা থেকে। একসময় পার্বত্যঞ্চলে দারিদ্রতা ছিল। শান্তি চুক্তির পর থেকে ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে সেই বঞ্চনা দূর করার জন্য তীব্রগতিতে কার্যক্রম চালাচ্ছে সরকার।

জেলা প্রশাসকের মতে, বঞ্চনা থেকে ক্ষোভের সঞ্চার হয় আর ক্ষোভ থেকে হয় বিক্ষোভ, সংগ্রাম বা সস্বস্ত্র সংগ্রাম। পার্বত্য এলাকার এনজিওর কর্মকান্ডকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন- আমাদের বঞ্চনাকে পুঁজি করে ক্ষুদ্র সাহায্য দেয়ার জন্য এখনো পার্বত্যঞ্চলে অনেকে আমাদের উপর খবরদারি, মাতবরি করেন। যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা শান্তিচুক্তি করেছিলাম তার প্রতিবন্ধকায় কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পার্বত্য এলাকায় শান্তি হউক তারা চায় না। সেসব প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠির মতে, পাহাড়ে অশান্তি থাকলে উন্নয়ন হবে না। আর সেই সুযোগে তারা আমাদের উপর সারাজীবন মাতবরি করতে পারবে। বর্তমান সরকার আগামীতেও পার্বত্য অঞ্চলে সমতা ভিত্তিক উন্নয়ন, স্কুল, কলেজে কোয়ালিটি শিক্ষা দান করে একেকজন সত্যিকারের মানুষ সৃষ্টি করবে। এতে করে অর্থনৈতিক বঞ্চনা দূর হওয়ার পাশাপাশি সন্ত্রাস কমবে পাহাড়ে।

বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মজুমদার বলেছেন- সরকার শান্তি চুক্তি করেছেন আমাদের শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে অর্থনৈতিক বিকাশ, অর্থনৈতিক, অবকাঠামো, যোগাযোগ, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নসহ সমস্থ ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটাতে হবে। সেই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী কাজ করে যাচ্ছেন এবং পার্বত্য বান্দরবানে অধিক বরাদ্দের মাধ্যমে পাহাড়ের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। আর সেই শান্তি ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠায় পাহাড়ে সেনা-পুলিশ বিজিবি সহযোগিতা করে যাচ্ছে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় শতভাগ সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। আর তাই পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণকে আইন শৃংখলা বাহিনীর সঙ্গে থাকতে হবে। চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীদের আশ্রয় প্রশ্র্রয় দেওয়া যাবে না। দেশের উন্নয়ন ও শান্তির জন্য সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে একযোগে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

শান্তিচুক্তির ২২বছর পূর্তি অনুষ্ঠানকে সাফল্যমণ্ডিত করায় জেলা প্রশাসক, সেনাবাহিনী, সিভিল সার্জন দপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সি য়ং ম্রো কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সভাপতির বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সেনা রিজিয়নের জিটু মেজর ইফতেখার হাসানের পরিচালনায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাহাড়ি-বাঙ্গালী শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা সামগ্রি বিতরণ করেন প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।

পরে রাজার মাঠে সেনাবাহিনী ও সিলিভ সার্জন দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে শুরু হওয়া দুই দিন ব্যাপী চিকিৎসা ক্যাম্প ঘুরে দেখেন অতিথিরা। এসময় কয়েক হাজার অসহায় শীতার্থদের মাঝে শীতবস্ত্র, চিকিৎসাসেবা ও বিনামূল্যে ঔষুধ বিতরণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকির হোসেন মজুমদার, জোন কমান্ডার লে. কর্নেল আখতার উস সামাদ রাফি পিএসসি, জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম কাউছার, আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য মোঃ শফিকুর রহমান, পৌর মেয়র মোহাম্মদ ইসলাম বেবী, উপজেলা চেয়ারম্যান এ.কে.এম জাহাঙ্গীর, সিভিল সার্জন অং সুই প্রু, জেলা পরিষদ সদস্য লক্ষীপদ দাস, প্রেসক্লাব সভাপতি মনিরুল ইসলাম মনু।

চুক্তির বর্ষপূতি অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনৈতিক নেতৃবর্গসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পার্বত্য চট্টগ্রাম, শান্তিচুক্তি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন