টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে পেকুয়ায় ফের ব্যাপক এলাকা প্লাবিত

এম.জুবাইদ, পেকুয়া প্রতিনিধি:
টানা তিন দিনের বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে পেকুয়ায় ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে করে বহু বীজতলা, রাস্তা আবারো পানিতে নিচে তলিয়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতবারের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় মানুষের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে গেলেও এখনোও তা পুষিয়ে উঠতে না উঠতে ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে গেছে দুহাজার মানুষ।

বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৭ টি গ্রাম। ফলে, চরম ভোগান্তির শিকার হয়ে ৭ গ্রামের মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ওই সব গ্রাম গুলিতে সামনের আমন চাষাবাদে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, সম্প্রতি দু’দফা বন্যায় আক্রান্ত হয় পুরো পেকুয়া উপজেলার মানুষ। এসময় বিস্তীর্ণ বেড়িবাঁধের অংশ ভেঙে জলাবদ্ধতার শিকার হয় লোকালয়ের মানুষ। বিশেষ করে পূর্ব মেহেরনামা রাবারড্যাম সংলগ্ন বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেলে পেকুয়া, শিলখালী ও বারবাকিয়ার কিছু অংশ ব্যাপক বন্যায় প্লাবিত হয়। ওই বন্যার পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য বেড়িবাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টের বাঁধ কেটে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। এর ফলে দ্রুত নামতে শুরু করে বন্যার পানি।

পরবর্তীতে জরুরী ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ সংষ্কারের উদ্যোগও নেয় সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু উপজেলার সদর ইউনিয়নের দূর্গম ও অবহেলিত ছিরাদিয়াগ্রামের কেটে দেয়া বেড়িবাঁধের ৪টি স্পটের সংষ্কার বরাদ্ধ অপ্রতুল জানিয়ে তার সংষ্কারের দায়িত্ব নেয়নি কেউ। আর অদ্যাবধি কেটে দেয়া বেড়িবাঁধের ওই অংশগুলো মেরামত না হওয়ায় উপজেলার দরিদ্র পীড়িত ছিরাদিয়া, হরিণাফাড়ি, জালিয়াখালী, পূর্ব বাইম্যাখালী, বিলহাচুড়া, নন্দীরপাড়া, বলিরপাড়াসহ ৭ টি গ্রাম পরিণত হয় জোয়ার ভাটার লোকালয়ে। ফলে, এ যাবত ওই এলাকার মানুষ জোয়ারের পানিতে ডুবছে আর ভাটারকালে কাদা মাটি আর পানিতে চরম ভোগান্তি ভোগ করছেন।

এ দিকে হরিণাফাঁড়ি গ্রামের বেশ কিছু কৃষক এ প্রতিনিধিকে জানান, সামনের চাষাবাদের জন্য বীজতলা তৈরী করলে তা সিরাদিয়া কেটে দেওয়া বেড়িবাঁধ দিয়ে পনি লোকালয়ে প্রবেশ করায় তাও গত ৪ দিন ধরে পানিতে ডুবে গেছে। ফলে কৃষকরা আমন মৌসুমে চাষাবাদের অনিশ্চয়তায় রয়েছে।

স্থানীয় ছিরাদিয়া সমাজ কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোঃ নাজিরুল ইসলাম লালা বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের বরাবরে অবহিত এ প্রতিবেদকের স্মরণাপন্ন হন।

খবর পেয়ে গত রোববার সকালে এ প্রতিবেদক সরেজমিন গ্রামটি ঘুরতে যান। এসময় সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ওই এলাকার শত শত লোকজন ছুটে এসে তার কাছে জানায়, দফায় দফায় বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় তাদের গ্রামটির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রচুর। কিন্তু এ যাবত তারা পায়নি পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী। এখনো তাদের ভাগ্যে জোটেনি পুনর্বাসন সহায়তাও। শুধু মাত্র ছিরাদিয়া সমাজ কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোঃ নাজিরুল ইসলাম লালা ও তার লোকজন বন্যাকালীন যে ত্রাণ সাহায্য দিয়েছে তাই পেয়েছেন।

তারা এবারের বন্যার ভয়াবহতায় সবাই পথে বসেছেন বলে জানান। হারিয়েছেন বাড়িঘর আর সহায় সম্পদ সর্বস্ব। গ্রামে বিরাজ করছে নিরব কান্না, হাহাকার, অভাব ও দূর্ভিক্ষ। তারপরেও খবর নিচ্ছেনা কেউ। তাদের জানমাল রক্ষায় এগিয়ে আসছেনা কোন মহল। তার উপর ওই এলাকার কেটে দেয়া বেড়িবাঁধের অংশগুলোর দ্রুত সংষ্কার ব্যবস্থা না নেয়ায় গ্রামগুলো পরিণত হয়েছে জোয়ার ভাটার লোকালয়ে। শুধু তাই নয়, সংষ্কার বঞ্চিত বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে নিয়মিত জোয়ার ভাটার পানি উঠানামা করায় আশপাশের এলাকাসহ ৭ টি গ্রামে জলাবদ্ধতার প্রকট। এ অবস্থা অব্যাহত থাকায় সেখানে বসবাসকারী লোকজন পারছে না বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর মেরামত করতে। পারছে না নিয়মিত কাজ করে আয় করতে। তাদের দিনের আয় রাতের ঘুম নেই মন্তব্য করে লোকজন অবিলম্বে তাদের ছিরাদিয়াগ্রামের কেটে দেয়া বেড়িবাঁধের সংষ্কারের পাশাপাশি ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া জোরদারে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের সু’দৃষ্টি পদক্ষেপ কামনা করেছেন।

পেকুয়ার ইউএনও মোঃ মারুফুর রশিদ খান এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন