সাহরি খেয়ে ফজরের নামাজ আদায় করতে গিয়ে অপহৃত হয় ফয়সাল

টেকনাফে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণে সাবেক মেম্বারের ছেলের মুক্তি

মাথায় ও বুকে বন্দুক তাক করা, বুকে পা, গলায় লম্বা কিরিচ ধরে আছে। চোখে গামছা বাঁধা। মাটিতে শুয়ে রেখেছে। যেন এক্ষুণি গলায় কিরিচ চালিয়ে এবং বন্দুকের ট্রিকার চেপে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবে। অপহরণকারীরা মা-বাবা, আত্মীয়স্বজনের কাছে যেন এক্ষুণি মেরে ফেলবে এরকম ভয়ঙ্কর কিছু ছবি বা ফুটেজ পাঠিয়ে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করে বড় অঙ্কের টাকা আদায় করে চলেছে প্রতিনিয়ত।

এভাবে প্রায়ই অপহরণ করে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। এটি গল্পের ডায়লগ নয়, বাস্তবে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের ফুলের ডেইল গ্রামের সাবেক মেম্বার সামশুল আলম বাবুলের ছেলে ও কক্সবাজার সিটি কলেজের শিক্ষার্থী আল ফায়সালকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করেছে। ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে পাঁচদিন পর প্রাণে ফিরিয়ে দিয়েছে অপহরণকারীরা। এসময় তাকে প্রচুর শারীরিক-মানষিক নির্যাতন করা হয়েছে।

জানা যায়, গত ১৫ এপ্রিল ভোরে সাহরি খেয়ে ফজরের নামাজ আদায় করতে প্রতিদিনের মতো মসজিদে যায় ফায়সাল। সে যে গেলো আর ফিরে না আসায় পরিবারের লোকজন আত্মীয় স্বজনসহ সম্ভাব্য সকল স্থানে খুঁজতে থাকে। কোথাও না পেয়ে এক পর্যায়ে বাড়ির সি.সি ক্যামরার ফুটেজ চেক করে দেখতে পায় একটি সিএনজির আনাগোনা হয়েছে। ফলে অপহরণ হওয়ার সন্দেহ হয়। কারণ সম্প্রতি টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় সিএনজি অটোরিকশা ও টমটম গাড়ি করে অপহরণের অহরহ ঘটনা ঘটছে।

অবশেষে একদিন পর মুঠোফোনে কল আসে ফায়সালকে অপহরণ করা হয়েছে। জীবিত ফেরত পেতে চাইলে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। পুলিশ কিংবা আইনশৃংখলা বাহিনীকে জানালে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করা হয়। এমন কি অপহরণকারীরা ওয়াট্স আপ ব্যবহার করে কল দিয়ে যোগাযোগ করতো।

অবশেষে ২০ এপ্রিল ভোরে লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্রিক ফিল্ডস্থ স্থানে ফায়সালকে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণের মাধ্যমে ফিরিয়ে দেয়।

অপহৃত ফায়সালের পিতা ২নং হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার সামশুল আলম বাবুল জানান, কিছু স্থানীয় দুষ্কৃতকারী মিলে অপহরণের এ ঘটনা ঘটিয়েছে। জমি বিক্রি করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছেলে ফায়সালকে অপহরণকারীদের কবল থেকে ফিরিয়ে এনেছি। ছেলেকে অমানুষিক নির্যাতন করেছে।

এব্যাপারে টেকনাফ মডেল থানায় মামলা রুজু করার প্রস্তুতি চলছে। ২১ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবেন বলেও জানান তিনি।

টেকনাফ মডেল থানার ওসি (তদন্ত) নাছির উদ্দীন জানান, এখনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ, সম্প্রতি পুরো টেকনাফবাসী অপহরণ আতঙ্কে বিরাজ করছে। সন্ধা নামলেই গ্রাম-গঞ্জে ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে। এমনকি মসজিদে নামাজ আদায়ে যাচ্ছেনা। প্রশাসন নীরব ভূমিকায় রয়েছে। দৃশ্যত কোন অভিযান নেই। ফলে এক প্রকার ফুঁসে উঠছে টেকনাফবাসী। এই দুর্বৃত্তদের দমন করতে পাহাড়ে ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প সাঁড়াশি অভিযান জরুরি বলে মনে করেন অনেকে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: টেকনাফ, মুক্তিপণ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন