থানচিতে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে সড়কের কাজ, বন্ধ করে দিয়েছে প্রকৌশলী
বান্দরবানের থানচি-আলিকদম সড়ক থেকে ঐতিহ্যবাহী থানচি হেডম্যান পাড়ায় যেতে (অভ্যন্তরীণ) সড়কে গাইড ওয়াল্ড নির্মার্ণে নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে নির্মাণ কাজ করায় বন্ধ করে দিয়েছে প্রকৌশলী। এর আগেই ঠিকাদার সংস্থা কর্তৃক নিয়োজিত শ্রমিকরা সড়কে ছিটিয়ে দেয়া তেলাক্ত ঘাম সব বৃষ্টিতে সড়কে পাশে ছিটিয়ে পড়ার অবস্থায় কার্পেটিং কাজ শেষ করে ফেলেছে বলে জানান উপজেলা প্রকৌশলী ইমদাদুল হক।
সংশ্লিষ্ঠদের সূত্রে জানা যায়, ২০১১-১২ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) অর্থায়নে প্রায় ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ের এক কিলোমিটার রাস্তা (এইচবিবি) ইট সলিং নির্মাণ করেন। একই অধিদপ্তর বান্দরবান জেলা কার্যালয় হতে একই স্থানে ২০২১-২২ অর্থসালে ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ের সড়কের কার্পেটিংয়ের জন্য টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে । বান্দরবান জেলা বালাঘাটা বাসিন্দা রতন সেন এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। কার্পেটিং নির্মাণ কাজের বাস্তবায়নে বান্দরবানের বাসিন্দা বিএনপি নেতা আবদুল মান্নান, নুরুল ইসলাম, জেএসএস সভাপতি থানচি উপজেলা পরিষদে ভাইস চেয়ারম্যান চসাথোয়াই মারমা তিনজনের যৌথ শেয়ারে ১০% লাভে নির্মাণ কাজটি ক্রয় করেন রতন সেন থেকে। এলজিইডি ও ঠিকাদার সংস্থার কাজের চুক্তিতে জুন ২০২১-২০২২ এক বছর মেয়াদে নির্মাণ কাজের শেষ করার কথা থাকলেও আদৌ কোন কাজ শেষ হয় নি । ক্রয় সূত্রে যৌথ ঠিকাদার সংস্থা কাজ শুরু করেন ২০২১ সালের জুন মাসের। একই বছরে ইট কংক্রিট বিছিয়ে দুই বছর পর গত মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে কার্পেটিং কাজ শুরু করেন ঠিকাদার সংস্থা।
সম্প্রতি সরেজমিনে থানচি হেডম্যান পাড়া গেলে থানচি আলিকদম উপজেলা অভ্যন্তরীণ সড়কের পাশে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘেঁষা সড়ক বেঁয়ে হেডম্যান পাড়ায় যেতে একমাত্র রাস্তা এটি। সংযোগ সড়ক থেকে পাড়ায় যাওয়া প্রায় ৫০০ কি. মি. হলেও পাড়ার ভিতরে আরও ৫০০ কি. মি. এর মতো যাতায়াতের রাস্তা রয়েছে। পাড়ার ভিতরে সড়কের ইটে কংক্রিটগুলি বর্ষায় পানিতে অনেকটা তলিয়ে গেছে।
ঠিককদার কর্তৃক নিয়োজিত শ্রমিকের হেড মিস্ত্রি মো. বেলাল হোসেন জানান, আমরা শ্রমিক মানুষ, আমাদের মালিক (ঠিকাদার) যে মালামাল দিবে যে সময়ে করার জন্য বলবে সে সময় করছি। আমাদেন বাড়ির সমতলে এ ধরনে দুই নাম্বারী ইট ও নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী বা অসময়ের নির্মাণ কাজ করলে শ্রমিকসহ ঠিকাদারের উপর উপকারভোগীরা মারধর করতো। কিন্তু পাহাড়ে শান্তি প্রিয় মানুষ আমাদের মাথা উপর রেখেছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য ও হেডম্যান পাড়া বাসিন্দা মংচথোয়াই মারমা ৬৬ জানান, নির্মাণ কাজ (কার্পেটিং) বৃষ্টির সময় না করার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেব আমাদের সামনে কথা বলেছিল নির্মাণ শ্রমিকদের কিন্তু কার কথা কে শুনে? গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির সময় কার্পেটিং কাজ করে ফেলেছে তারা। যেহেতু চেয়ারম্যান বলার পরও কর্ণপাত করলেন না পাড়াবাসীদের কথা শুনার কেউ নেই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পাড়া শিশু শ্রেণি হতে শুরু করে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পড়ুয়া ছেলে-মেয়ে প্রায় ২০০ রয়েছে। তারা প্রতিদিন এ রাস্তায় দিয়ে স্কুলের আসা যাওয়া করে থাকেন। এছাড়াও সরকারি চাকুরিজীবী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, গণ্যমান্য অনেকে রয়েছেন। এ সড়কের জন্য আমাদের বিশুদ্ধ পানির মগক ঝিড়ির কুয়া থেকে সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এ চরম ভোগান্তির কথা কাকে বলবো।
পাড়ার বাসিন্দা দোঅংপ্রু মারমা জানান, যাতায়াতে চেয়ের বিশুদ্ধ পানি সঙ্কট বেশি কষ্টদায়ক। বর্তমান বর্ষা মৌসুমের মধ্যে সড়কের কার্পেটিং নির্মাণ কাজ শুরু করলে টেকসই নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে আমাদের।
থানচি হেডম্যান পাড়া বাসিন্দা মংসাগ্য মারমা, সাঅংপ্রু মাস্টার বলেন, সড়কের বিশুদ্ধ পানির জন্য জিএসএফ পাইপ লাইন ছিল, নির্মাণ কাজ করার সময় উঠিয়ে দিয়েছিল। যেনতেনভাবে কার্পেটিং কাজ শেষ করলেও পানির জন্য পাইপ লাইনটা করার লক্ষণ দেখছি না।
যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কাজের তদারকিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জাকের হোসেন বলেন, কাজের গুণগতমান ভালো করতে হলে শুকনো মৌসুমে কাজ শুরু করতে হবে। পাড়াবাসীদের দাবিতে যথাযথ যুক্তি রয়েছে। ঠিকাদার সংস্থা বর্ষা মৌসুমে নির্মাণ কাজে হাত দিলেও পরিস্থিতির কারণে আমরা নিরুপায়।
এ ব্যাপারে যৌথ অংশিদারি ঠিকাদার সংস্থা মালিক আবদুল মান্নানের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয় নি।
যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিতপ্তরে (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইমদাদুল হক বলেন, আমাদের কার্যালয়ের লোকবল খুবই কম থাকায় সঠিক সময়ের তদারকি করা সম্ভব হচ্ছে না। গতকাল বৃহস্পতিবার দুই নম্বার ইট ব্যবহার করায় নির্মাণ কাজ বন্ধ করেছি। এরপর ও শ্রমিকরা শুক্রবার সকালে রীতিমতো কাজ করতে দেখে ২য় বার বন্ধ কাজ না করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।