থানচি উপজেলা নির্বাচনে আ’লীগ তৎপর: বিএনপি আটকে আছে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত জটিলতায়

নিজস্ব প্রতিনিধি, বান্দরবান:

উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় টিকেট পেতে বান্দরবানের থানচি উপজেলা আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান পদে ১জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২জন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪জন মনোনয়ন চেয়ে দলীয় ফরম পুরণ করেছেন।

এদিকে ইতোমধ্যে বিএনপি কেন্দ্রীয় হাই কমাণ্ড উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। নির্বাচনের অংশ নিলে বহিস্কার হওয়ার ভয়ে নির্বাচন করার বিষয়ে এখনও পর্যন্ত বিএনপির কেউ মুখ খুলছেনা। অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে জনসংহতি সমিতি থানচি উপজেলা শাখার সভাপতি বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান চসাথোয়াই মারমার চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়া কথা চায়ের কাপে আড্ডায় নেতাদের মুখে শোনা যাচ্ছে। এদিকে ইউপিডিএফ কেন্দ্রীয় সাবেক সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান ক্যহ্লাচিং মারমা স্বপদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া কথাও শোনা যাচ্ছে।

২০ জানুয়ারি উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীতা যাচাই বাছাই সভা আয়োজন করা হয়েছিল। সভা সকাল ১১ টায় শুরু হলেও পরবর্তী তিন ঘণ্টায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আগ্রহী প্রার্থী পাওয়া যায়নি। পরে বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ও থানচি আ’লীগের দেখভাল করার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সাধন কান্তি দাশের প্রস্তাবে বর্তমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা পরিষদের সদস্য থোয়াইহ্লামং মারমাকে  প্রতিদ্বন্দ্বী করার জন্য মৌখিকভাবে চাপ দিলে তিনি প্রার্থীতা ঘোষণা করে। এসময় অপর প্রান্ত থেকে সভায় উপস্থিত সদস্য সাবেক সভাপতি বাশৈচিং মারমা, বর্তমান সহসভাপতি অংপ্রু ম্রো, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অলসেন ত্রিপুরাকে প্রার্থীতা ঘোষণা করেন । তবে এখন পর্যন্ত থোয়াইহ্লামং মারমা আ’লীগের দলীয় ফরম পুরণ করে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মনোনয়ন চেয়েছেন।

ভাইস চেয়ারম্যানের জন্য মনোনয়ন প্রত্যাশী ৩ জন হলেন আ’লীগের প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা বর্তমানে সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোহসীন মিঞা, কৃষক লীগের সভাপতি শৈসাচিং মারমা, যুব লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অনিল ত্রিপুরা।

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের জন্য মহিলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নুমেউ মারমা, সহ সভাপতি ইচ্ছামতি ত্রিপুরা, সভাপতি ও থানচি সদর ইউপি সংরক্ষিত আসনে সদস্যা ও  উপজেলা পরিষদে সংরক্ষিত আসনে মহিলা সদস্যা  ডলিচিং মারমা, ২০১৪ সালে বিএনপির মনোনয়নের উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ২০১৫ সালে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী বর্তমান সাধারণ সম্পাদিকা ও উপজেলা পরিষদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান বকুলি মারমা মনোনয়ন চেয়েছেন।

বান্দরবানে থানচি উপজেলায় চায়ের কাপে আড্ডা চলছে কে হবে থানচি উপজেলার পিতা । কাকে ভোট দিলে বর্তমান সরকারের কোটি কোটি টাকা উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়নে ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বীর বাহাদুরের হাতকে শক্তিশালী করবে- সে নিয়ে বহু হিসাব নিকাশ চলছে সাধারণ জনগণ ও আ’লীগের নেতা কর্মীদের মধ্যে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রভাশালী হেভিওয়েট প্রার্থী মংথোয়াইম্যা মারমা (রনি)কে মনোনয়ন দেয়া হয়। তিনি চাক্কা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও  ভোটের তিন  দিন পূর্বে রহস্যজনক কারণে মাঠ ছেড়ে দেন। সে সময় বিএনপি থেকে মনোনীত প্রার্থী  খামলাই ম্রো মাছ প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান ক্যহ্লাচিং মারমা ঘড়ি প্রতীকে অল্প ভোটে ব্যবধানে হেরে যান।

২০১৪ সালে আ’লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক, জেলা পরিষদের সদস্য থোয়াইহ্লামং মারমাকে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে আনারস প্রতীক, আ’লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অলসেন ত্রিপুরা চিংড়ি মাছ প্রতীক, বর্তমান চেয়ারম্যান ক্যহ্লাচিং মারমা হেলিকাপ্টার প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী, বিএনপি মনোনয়ন নিয়ে হরিণ প্রতীকের চেয়ারম্যান পদে খামলাই ম্রো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সে সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী ক্যহ্লাচিং মারমা বিপুল ভোটে ব্যবধানে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী খামলাই ম্রোকে হারিয়ে চেয়ারম্যান হন। সে সময়ের আ’লীগের মনোনীত প্রার্থী  থানচি উপজেলা সর্বমোট ১৫ হাজার ১৮২ ভোটে মধ্য থেকে ১৫০০ ভোট পেয়ে ৪র্থ স্থান লাভ করেন।

আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা স্বপন কুমার বিশ্বাস জানান, দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার পক্ষে কাজ করার জন্য তারা অঙ্গীকার বদ্ধ। তবে অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করছিলাম ২০১১ সাল হতে এই পর্যন্ত দলের শৃঙ্খলা ছিল না, দলের শৃঙ্খলা আনা খুবই জরুরী।

তিনি বলেন,  ১৯৯১ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত  জাতীয় নির্বাচন গুলিতে নিঃস্বার্থভাবে সৎ কর্মদক্ষতার কারণে আওয়ামী লীগ পক্ষে বান্দরবান ৩০০ আসনে বর্তমান পার্বত্যচট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী  বীর বাহাদুরকে বিজয় করেছেন।

আওয়ামী লীগের সূত্রে জানা গেছে, থোয়াইহ্লামং মারমা  ছাত্রজীবন হতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ করে আসছে। ২০০৮ সালে ১৪ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের যোগ দান করেন । ১৯৯১-১৯৯৬-২০০১ জাতীয় নির্বাচনে নৌকা বিপক্ষে কাজ করেছিল। ২০১১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আ’লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান উপজেলা আ’লীগের সহসভাপতি উবামং মারমা বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল । সে সময়ের অল্পের জন্য উবামং জয়লাভ করতে সক্ষম হয় নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আ’লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা জানান, ১৯৭১, ১৯৭৫ ও ২০০১ এ দলের দুঃসময়ের কাণ্ডারী সৎ নিষ্ঠাবান নিঃস্বার্থ সাদাসিদে ব্যক্তিত্ববান নেতারা আজ দলে কোণঠাসা। তাদের দলের মনোনয়ন চাওয়ার সুযোগ বা পরিবেশ তৈরি ছিল না । ওই সময় যোগ্য নেতাদের যে কাউকে  দলের মনোনয়ন দিলে সে জয়ী হতে পারতো।

দলের নেতা কর্মীরা  আরো জানান, স্থানীয় নির্বাচনে দলে শৃঙ্খলা না থাকায় নির্বাচনে এখন পর্যন্ত সাফল্য লাভ করতে পারেনি তারা। তবে ২০১৬ সালে  থানচি উপজেলার ৪ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান জয় লাভ করেছে আওয়ামী লীগ । কিন্তু উপজেলা পরিষদে নির্বাচনের জয় লাভ করার নজির নেই।

বর্তমান উপজেলা নেতাদের সম্পর্কে তারা বলেন,  নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছে নেতারা। প্রাকৃতিক সম্পদ ধংস করে সাংগু নদীতে অবৈধ পন্থায় বালু উত্তোলন, পাথর আহরণ, মূল্যবান কাঠ পাচারসহ দলের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির কারণে এখানে দলের সমর্থন দৃঢ় হয়নি।

এদিকে বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতারা জানান, অবাধ সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক  নির্বাচন হলে বিএনপির সভাপতি খামলাই ম্রোকে হারানো সম্ভব নয়। তবে দলের হাই কমান্ডের নির্দেশের উপর নির্ভর করছে নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ করা।

জনসংহতি সমিতির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা জানান, আমাদের দলের মনোনয়ন নিয়ে স্থানীয় নির্বাচনের স্বাধীনতা পরবর্তীতে অংশগ্রহণ করা হয় নি। তবে ২০১৪ সালে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় লাভ করেছে। আগামী নির্বাচনে দলের হাই কমান্ড মনোনয়ন দিলে বা অংশগ্রহণ করলে অবশ্যই জয় সুনিশ্চিৎ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন