দীপা ত্রিপুরার ধর্ষণকারীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে

fec-image

Followup-Logo2

সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার :
ঘটনার দুই মাসেরও বেশী সময় অতিবাহিত হলেও বিচারপ্রার্থী না থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে দীপা ত্রিপুরার ধর্ষণকারীরা। এখনো তারা সকলেই ধরাছোঁয়ার বাইরে। অপরাধ করলেও তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি। ফলে বীরদর্পে পুরো এলাকায় নানা অপরাধমূলক কাজ করে যাচ্ছে ইউপিডিএফ সমর্থিত পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ-পিসিপি‘র স্থানীয় নেতা ক্রিফল ত্রিপুরা, নেপাল ত্রিপুরা, সজীব ত্রিপুরা‘র নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা।

চলতি বছরের ১২ এপ্রিল খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে বাইল্যাছড়ি স্কুলের সামনে বাস থামিয়ে জেলার দীঘিনালা উপজেলার ক্ষেত্রলাল ত্রিপুরার মেয়ে দীপা ত্রিপুরা (১৮) ও চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার আহমদ কবীরের ছেলে মো: আবদুল হান্নান (২৪)-কে অপহরণ করে পিসিপি‘র সন্ত্রাসীরা।

অপহরণের পর স্থানীয় সন্ত্রাসী ক্রিফল ত্রিপুরা ও নেপাল ত্রিপুরা দীপা ত্রিপুরাকে মোটরসাইকেলে করে রেংকুম-এ একটি ঝুম ঘরে আটকে রাখে। আর সজীব ত্রিপুরার নেতৃত্বে আদিত্য ত্রিপুরা, রাজু ত্রিপুরা, উৎপল ত্রিপুরা আবদুল হান্নানকে পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। বিষয়টি জানার পর মাটিরাঙ্গা জোনের ক্যাপ্টেন আসিফ আহমেদ‘র নেতৃত্বে সেনাসদস্যরা পুরো এলাকায় তল্লাশী চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে স্থানীয় পাঁচ জনকে আটক করে গুইমারা থানায় সোপর্দ করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা দায়ের করেনি গুইমারা থানা পুলিশ। উল্টো মুচলেকা নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। অন্যদিকে আটককৃতদের মধ্যস্থতায় এদিন রাত ন‘টার দিকে আবদুল হান্নানকে ছেড়ে দেয় সন্ত্রাসীরা।

এদিকে রেংকুম-এ একটি ঝুম ঘরে আটক করে দীপা ত্রিপুরাকে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে পিসিপি‘র স্থানীয় নেতা ক্রিফল ত্রিপুরা, নেপাল ত্রিপুরা, সজীব ত্রিপুরা, সুরঞ্জিত ত্রিপুরা, অভি ত্রিপুরা, রাজু ত্রিপুরা। একাধিকবার গণ-ধর্ষণের পর গভীর রাত পর্যন্ত দীপা ত্রিপুরাকে নিয়ে উল্লাস করে এসব সন্ত্রাসীরা। এসময় রাজু ত্রিপুরা পুরো গণ-ধর্ষণের দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করে। গেল শনিবার বিকালে সেনাবাহিনীর হাতে আটক ইউপিডিএফ সমর্থিত পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ-পিসিপি‘র নেতা সজীব ত্রিপুরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব কথা বলে। সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেছে, পুরো ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছে পিসিপি‘র স্থানীয় নেতা ক্রিফল ত্রিপুরা ও নেপাল ত্রিপুরা।

পরদিন দ্বিতীয় দফায় গণ-ধর্ষণের পর বেলা তিনটার দিকে দীপা ত্রিপুরাকে বাইল্যাছড়ি সাইনবোর্ড এলাকায় স্থানীয় গুইমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেমং মারমা, ফাতেমা বেগম মেম্বার, শরণার্থী নেতা হেমেন্দ্র ত্রিপুরা, দিগেন্দ্র ত্রিপুরা ও সুজাউ মারমার মধ্যস্থতায় তার মা-বাবার কাছে হস্তান্তর করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একটি বিশেষ মহল থেকে ধর্ষণকারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা না করতে দীপা ত্রিপুরার পরিবারকে চাপ দেয়া হয়। ফলে তারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে সাহস পায়নি। এমনিক পুলিশের পক্ষ থেকেও কোন ধরনের মামলা করা হয়নি এ ঘটনায়। ফলে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে গণধর্ষণকারী সন্ত্রাসীরা।

পাহাড়ী এ জনপদে উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক অহরহ ঘটেছে নারী ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির ঘটনা। বিভিন্ন স্থানে এভাবেই নারী ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির ঘটনাগুলো পাক সময়কার বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। কোন ঘটনারই সুষ্ঠু বিচার হয়নি এখনো। কোন এক অদৃশ্য ক্ষমতাবলে এসব অপরাধীরা রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আর নিরীহ নারীদের মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন