ধর্মান্তরিত হয়েছেন বিশ্বের যেসব তারকা

fec-image

বিশ্বজুড়ে গত কয়েক দশকে সংস্কৃতি জগতের অনেক তারকাই ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। হলিউড কিংবা বলিউড হোক, পরিবেশ পরিস্থিতি ও দর্শনগত কারণে তাদের এ ধর্মান্তর হওয়া। এক্ষেত্রে তারা কোন ধর্ম থেকে এসেছেন সেটা মুখ্য নয়। শুধু জানিয়ে দিচ্ছি-কারা এই তারকা।

জেনিফার গ্রাউত : আমেরিকান কণ্ঠশিল্পী জেনিফার গ্রাউত। ইসলাম ধর্ম নিয়ে গবেষণা করতে করতে তিনি এ ধর্মের ভক্ত হয়ে যান ও তা গ্রহণ করে এর অনুসারী হন। ২০১৩ সালে ‘আরব গট ট্যালেন্ট’-এর ফাইনালিস্ট হয়েছিলেন তিনি। আরবি গানেই তিনি তার ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন।

টিয়ারা জ্যাকুলিনা : ১৯৮৮ সালে মালয়েশিয়ান সিনেমায় অভিষেক হয়েছিল টিয়ারা জ্যাকুলিনার। ১৯৯৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘বেয়ন্ড রেঙ্গুন’ ছিল তার সুপারহিট সিনেমা। ২০০৪-এর পর আর সিনেমায় অভিনয় করেননি তিনি। ১৯৯৩ সালে অভিনেতা মানি মোহসিনকে বিয়ে করতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এই তারকা। পরে অবশ্য তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়িও হয়।

দিপিকা কক্কর : ভারতীয় অভিনেত্রী দিপিকা কক্কর ২০১৮ সালে সহ-অভিনেতা শোয়েব ইব্রাহীমকে বিয়ে করতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নাম ধারণ করেন দিপিকা ইব্রাহীম ফাইজা। মূলত তিনি টিভি অভিনেত্রী হিসাবে সুনাম কুড়িয়েছিলেন।

রাখি সাওয়ান্ত : ভারতীয় মডেল, অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী রাখি সাওয়ান্ত মুসলিম হন ২০২২ সালে। তার প্রথম স্বামী নন-রেসিডেন্ট ইন্ডিয়ান রিতেশের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর আদিল খান দুররানিকে বিয়ে করতে ধর্মান্তরিত হন। পরে তার নাম হয় ফাতিমা দুররানি।

এ.আর. রহমান : ভারতের বিখ্যাত সংগীত তারকা এ.আর. রহমানের পূর্ব নাম ছিল এ.এস. দিলিপ কুমার মুধালিয়া। ১৯৮৯ সালে তিনি পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এরপরই নিজের নাম রাখলেন আল্লা রাখা রহমান, যা সংক্ষেপে এ.আর. রহমান।

কবির সুমন : ১৯৯২ সালে ডেইব্যু অ্যালবাম তোমাকে চাই দিয়ে সংগীতশিল্পী হিসাবে দুই বাংলায় পরিচিতি পান কলকাতার সুমন চট্টোপাধ্যায়। ২০০০ সালে বাংলাদেশের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনকে বিয়ে করতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি। পরে তার নাম হয় কবির সুমন। বসে আঁকো, ইচ্ছে হলো, গানঅলা, ঘুমাও বাউন্ডুলে, চাইছি তোমার বন্ধুতা, নিষিদ্ধ ইশতেহার তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি অ্যালবাম।

শর্মিলা ঠাকুর : ভারতের কিংবদন্তি ক্রিকেট তারকা মনসুর আলী খানকে বিয়ে করে ১৯৬৮ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর। এরপরই তার নাম হয় আয়েশা সুলতানা। ৫০টিরও বেশি সিনেমার এই অভিনেত্রীর ছেলে সাইফ আলী খান, মেয়ে সোহা আলী খানও বলিউডে প্রতিষ্ঠিত। আরেক মেয়ে সাবা আলী খান মনোযোগী হন ব্যবসায়।

মাইকেল জ্যাকসন : পাশ্চাত্যের কিংবদন্তি পপতারকা মাইকেল জ্যাকসন ২০০৮ সালে ৫০ বছর বয়সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মিকাইল নাম ধারণ করেন। সে সময় দি সান পত্রিকা জানিয়েছিল টুপি ও জুব্বা পরে আরব শেখদের মতো কুরআন হাতে নিয়ে ইমামের সামনে বসেছিলেন। পরের বছর ২৫ জুন তার মৃত্যু হয়। এ কিংবদন্তি শিল্পীর উল্লেখযোগ্য অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে- গট টু বি দেয়ার, বেন, মিউজিক অ্যান্ড মি, থ্রিলার, ব্যাড, ডেঞ্জারাস প্রভৃতি।

জেনেট জ্যাকসন : মাইকেল জ্যাকসনের বোন আমেরিকান কণ্ঠশিল্পী জেনেট জ্যাকসন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন ২০১২ সালে। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম বিলিয়নেয়ার উইসাম আল মানাকে বিয়ে করে মুসলমান হন। কিন্তু তার নামটি বিখ্যাত হয়ে যাওয়ায় সে নাম আর পরিবর্তন করেননি তিনি। তার উল্লেখযোগ্য অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে-ড্রিম স্ট্রিট, অল ফর ইউ, ডিসিপ্লিন, আনব্রেকেবল প্রভৃতি।

ধর্মেন্দ্র-হেমা মালিনী : শোলে সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেমে হাবুডুবু খান ধর্মেন্দ্র ও হেমা মালিনী। তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলে বাদসাধে হিন্দু প্রথা। ধর্মেন্দ্রকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে হলে ধর্মান্তরিত হতে হবে। তারা যৌথ সিদ্ধান্তে ১৯৭৯ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং ১৯৮০ সালে বিয়ে করেন। ধর্মেন্দ্র হয়ে যান দিলওয়ার খান এবং হেমা মালিনী হন আয়েশা।

অমৃতা সিং : ৮০-৯০ দশকের সাড়া জাগানো অভিনেত্রী অমৃতা সিং ১৯৯১ সালে সাইফ আলী খানকে বিয়ে করতে গিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। মার্দ, চামেলি কি শাদি, খুদগার্জ, আয়না, বেতাব প্রভৃতি সিনেমা দিয়ে তারকায় পরিণত হয়েছিলেন অমৃতা সিং। সাইফের চেয়ে ১২ বছরের বড় অমৃতা। তাদের ঘরে জন্ম নেয় মেয়ে সারা আলি খান ও ছেলে ইব্রাহিম আলি খান।

আয়শা তাকিয়া : মিশ্র সংস্কৃতিতে জন্ম হওয়া ও বেড়ে ওঠা আয়শার বাবা ছিলেন গুজরাটি হিন্দু, মা ছিলেন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান। বলিউডে আত্মপ্রকাশের আগে মডেল হিসাবে সুনাম কুড়িয়েছেন। টারজান, সালাম-ই-ইশক, ওয়ান্টেড, নো স্মোকিং তার অভিনীত আলোচিত সিনেমা। ২৩ বছর বয়সে ২০০৯ সালে ফারহান আজমীকে বিয়ে করার সময় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। বিয়ের পরই তিনি অভিনয় জগৎকে বিদায় জানান।

মমতা কুলকার্নি : ভারতের সুন্দরী অভিনেত্রী মমতা কুলকার্নি ‘ঘটক’ সিনেমার মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছিলেন। ২০১৩ সালে ভিকি গোস্বামীকে বিয়ে করার সময় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ১৯৯৭ সালে ভিকি একটি মাদক চোরাচালান মামলায় ২৫ বছরের সাজা পান। আরব আমিরাতের ওই মামলার শাস্তি কমানোর জন্য ভিকি আগেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। পরে সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ২০১২ সালে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

শন ও’কনর : আইরিশ কণ্ঠশিল্পী শিনাড ও’ কনর ১৯৯০ সালে বিখ্যাত হয়েছিলেন ‘নাথিং কম্পেয়ার্স টু ইউ’ গানটির জন্য। নিছক ধর্মবিশ্বাসের কারণে ধর্মান্তরিত হন ২০১৮ সালে। আর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেই তিনি মুসলিম নাম ধারণ করেন। তিনি তার নাম রাখেন শুহাদা সাদাকাত। এরপরই তিনি তার টুইটার অ্যাকাউন্টে একের পর এক ইসলামি কনটেন্ট আপলোড দিতে থাকেন।

লিল জন : আমেরিকার বিখ্যাত র‌্যাপার লিল জন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন এ বছর। ১৬ মার্চ লস অ্যাঞ্জেলেসের কিং ফাহাদ মসজিদের এক বিশাল জমায়েতের সামনে প্রকাশ্যে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে জর্জিয়ার আটলান্টায় জন্ম নেওয়া এ র‌্যাপার ২০১০ সালে একক অ্যালবাম ‘ক্রাঙ্ক রক’-এর মাধ্যমে পশ্চিমা সংগীত জগতে পরিচিত হয়ে ওঠেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন