প্রেমের ভিডিও ধারণ করায় মাদরাসা কর্মচারী খুন, জড়িত সন্দেহে আটক ২

fec-image

বান্দরবান নাইক্ষ্যংছড়িতে চাকঢালা মহিউচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদরাসার শিক্ষার্থীদের প্রেমের ভিডিও ধারণ করায় হত্যাকাণ্ডে শিকার হয়েছে একই মাদরাসার কর্মচারী। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ছৈয়দুল আমিন ও আকাশ নামের দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।

আটক ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া হাফেজ ছৈয়দুল আমিন (১৮) পূর্বাআমতলী মাঠের মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে এবং অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া তানবিরুল ইসলাম আকাশ (১৫) একই এলাকার আশরাফ আলীর ছেলে। তারা দুজনই চাকঢালা মহিউচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদরাসার ছাত্র।

নিহত মাদরাসার কর্মচারী দিদারুল আলম (২৭) ফজুরছড়া চাকঢালা এলাকার মো. ইসলামের ছেলে। সে চাকঢালা মহিউচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদরাসায় দপ্তরি পদে কর্মরত ছিলেন। তার ৪ বছরের মেয়ে ও আড়াই বছরের একটি ছেলে সন্তান আছে।

ঘটনার কথা স্বীকার করে মামলার আইও ধীমান বড়ুয়া বলেন, তাদের ২ জনকে থানায় আনা হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে। খুন হওয়া দিদারুলের পরিবার তাদের দুজনকে আসামি করে মামলা করলে তাদের গ্রেফতার দেখানো হবে।

লামা সার্কেলের এএসপি সার্কেল আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি নিজেই খুনের আলামত সংগ্রহের জন্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। তবে তারা আসামি না। তবে নিহতের আত্মীয়স্বজন বাদী হয়ে মামলা করলে অথবা জিজ্ঞাসাবাদের পর কোন খুনের সত্যতা পাওয়া গেলে তাদের আসামি করা হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানান, একই মাদরাসার ছাত্র ছৈয়দুল আমিন ও রেজাউল করিমের সাথে নারী ঘটিত একটি ঘটনার বিষয়ে দিদারুল আলম জানতো। যা নিয়ে মাদরাসায় একাধিকবার বৈঠক হয়েছে।

নিহতের স্ত্রী খালেদা বেগম জানান, তার স্বামী দিদারুল মাগরিবের আগে বাচ্চাদের জন্য নাস্তা আনবে বলে বাড়ি থেকে দোকানে যায়। এশার নামাজ পড়ে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তার স্বামীকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে বলে দাবি করেন তিনি।

এলাকাবাসী জানান, পুলিশ খবর পেয়ে সাথে সাথে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। রাত ২টায় লাশ উদ্ধার করে বুধবার (৯ নভেম্বর) সকালে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

বুধবার (৯ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সহকারী পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন।

এদিকে স্থানীয়দের কয়েকজন জানান, দিদারুল একজন হাফেজ হলেও দুইবছর আগে মাসিক ২ হাজার টাকা বেতনে সে দপ্তরির চাকরি নেন।
এরই মধ্যে সরকারিভাবে দপ্তরি নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হলে সেখানে সে আবেদন করে। তারা প্রতিদ্বন্ধী ৩ জন। তাদের মধ্যে দিদারুলও আছে।

মহিউচুন্নাহ দাখিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, দুই ছাত্রদের সমস্যার বিষয়টি মাদরাসায় সমাধান হয়েছে। আর দিদারুল আলম একজন শান্ত ও ভদ্র ছেলে। সে মাদরাসায় যোগদানের পর থেকে সকলের সাথে মিলেমিশে কাজ করে আসছে।

নাইক্ষংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আবছার বলেন, এ যুবক নাইক্ষংছড়িস্থ চাকঢালা মহিুউচুন্নাহ দাখিল মাদরাসার খণ্ডকালীন দপ্তরি হিসেবে চাকরি করতো। সে খুব ভালো ছেলে। তার পারিবারিকভাবে কোন শক্র নেই।

নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি (তদন্ত) মো. শাহাজাহান জানান, নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অপরাধী যেই হোক, রহস্য উদঘাটন করে আইনের আওতায় আনা হবে।

আজ বিকাল ৫টার সময় নিহত দিদারুল আলমের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। তার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। নিহতের পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক বিচারের দাবি করেন।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) রাতে বান্দরবান নাইক্ষ্যংছড়ির আমতলী মাঠের শাহা আলম ও আবু তাহেরের বাড়ির মাঝখানে রাস্তার উপর দুর্বৃত্তের হাতে খুন হন দিদারুল আলম (২৭)।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আটক, নাইক্ষ্যংছড়ি, হত্যাকাণ্ড
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন