নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে প্রস্তাবে সমর্থন দিলো চীনও

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ সোমবার রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযান বন্ধ এবং বিতাড়িত হাজার হাজার মুসলিম রোহিঙ্গাকে তাদের বাড়ি ফিরে যেতে দেয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

চীন সমর্থিত সর্বসম্মত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ামনারের রাখাইন রাজ্যে সংঘটিত সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। ওই ঘটনায় ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ রক্ষার্থে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। খবর এএফপি’র।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, নিরাপত্তা পরিষদ ‘মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের’ দ্বারা রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা, ধর্ষণ এবং বাড়িঘর ও সম্পত্তিতে অগ্নিসংযোগের মতো মানবাধিকার লংঘনের ঘটনায় ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করছে।

এছাড়া বিবৃতিতে রাখাইন প্রদেশে সামরিক বাহিনীর আবারো অতিরিক্ত বল প্রয়োগ না করা এবং সেখানে বেসামরিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার জন্যে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে ব্রিটেন ও ফ্রান্স গত মাসে যে খসড়া প্রস্তাব পেশ করেছিল তার অধিকাংশই রাখা রয়েছে। তবে মিয়ানমারের সাবেক জান্তা সরকারের সমর্থক চীন ওই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধীতা করে।
কূটনীতিকরা জানান, প্রস্তাবটি ঠেকাতে চীন তার ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগের ইঙ্গিত দেয়। তবে শেষ পর্যন্ত বেইজিং সমঝোতার মাধ্যমে বিবৃতিতে সম্মতি প্রদান করে।

আগস্ট মাসের শেষ থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের কারণে ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। জাতিসঙ্ঘ মিয়ানমারের এই দমনপীড়নকে জাতিগত নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে ভারতের সাথে পাকিস্তানও

আশরাফ আলী
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে অবস্থান নিয়েছে সিপিএভুক্ত দেশের প্রতিনিধিরা। ৬৩তম সিপিসি সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী প্রায় প্রতিটি দেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে অবস্থান নিয়ে মিয়ানমারকে তাদের দেশের নাগরিকদের উপর বর্বরতার নিন্দা জানিয়েছেন। অনেকেই এ বরবরতাকে গণহত্যা বলেও আখ্যায়িত করেছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের এমন মনোভাবই পোষন করেছে।

গতকাল ভারতের লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন নয়া দিগন্তকে বলেন, রোহিঙ্গা ইসূতে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট। ভারত এর বিশেষ নিন্দা জানায়। বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। ভারত চায় রোহিঙ্গা সমস্যাটি যেহেতু মিয়ানমারের সৃষ্ট তাই বিষয়টি তাদের সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। আলাপ আরেঅচনার মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি হওয়া জরুরী।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা যেভাবে নিপীড়িত-নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশ চলে আসতে বাধ্য হচ্ছে তা কোন ভাবেই কাম্য নয়। আমরা চাই অচিরে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিক। বাংলাদেশ যেভাবে রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়িয়েছে তা প্রশংসার যোগ্য। বিশেষ করে শেখ হাসিনা যেভাবে তাদের আশ্রয় ও খাবার, চিকিৎসা দিচ্ছেন তা প্রশংসার যোগ্য। তিনি মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেবার জন্য আহ্বান জানান। জাতিসঙ্ঘসহ বিশ্বের সবগুলো আন্তর্জাতিক সংস্থাকে এগিয়ে এসে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বিশেষ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোকেও এবিষয়ে ভূমিকা রাখতে পারে বলেও জানান সুমিত্রা মহাজন।

একইভাবে ভারতের রাজ্যসভার বিজেপি সদস্য প্রখ্যাত অভিনেত্রী রুপা গাঙ্গুলী এ বিষয়ে বলেন, আমি রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের নিন্দা জানাচ্ছি। রোহিঙ্গারা যে মানবেতর জীবন যাপন করছে, তারা নিজ ভিটে মাটি ছেড়ে যেভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে বাধ্য হয়েছে তা সত্যিই খুবই বেদনাদায়ক। আমি চাই মিয়ানমার সরকার তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিক। এবং সেদেশের সেনা বাহিনীসহ তাদের দোসররা যেভাবে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে এবং নির্যাতন করছে তা বন্ধ হোক। ভারত ও ভারতের জনগণ বাংলাদেশের এ সমস্যায় তাদের পাশে আছে এবং থাকবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন রুপা।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে পাকিস্তানও
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে অবস্থান নিয়েছে সিপিএভুক্ত পাকিন্তানও। সিপিএ সম্মেলনে দেশটির প্রতিনিধিও রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে অবস্থান নিয়ে মিয়ানমারকে তাদের দেশের নাগরিকদের উপর বর্বরতার নিন্দা জানিয়েছেন।

সিপিএ’র অন্যতম সদস্য দেশ পাকিস্তানের আইন প্রণেতা নাফিসা ড. নাফিসা শাহ গতকাল এ প্রতিনিধিকে রোহিঙ্গাদের উপর নিপীড়ন ও নির্যাতনের জন্য মিয়ানমারকে দায়ি করে বলেন, মিয়ানমারের সেনা বাহিনী যেভাবে রোগিঙ্গাদের হত্যা করছে, যেভাবে তারে উপর নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়ে তাদেরকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য করেছে তা সত্যিই নিন্দনীয়। পাকিস্তান সব সময় গণতন্ত্র ও সংহতির পক্ষে। আমরা চাই এ উপমহাদেশে শান্তি বিরাজ করুক। মিয়ানমার সরকার তাদের দেশের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে নিজ দেশে ফেরৎ নিক। তবে বাংলাদেশকে তিনি রোহিঙ্গা আশ্রয় দেবার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের জন্য তিনি বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত হয়ে মিয়ানমার সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির আহ্বানও জানান।

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের সংসদ সদস্য (এমপিএ) মঈন তারিক মাহম্মুদ বলেন, আমরা চাই রোহিঙ্গা সমস্যার একটা সন্তোষজনক ও স্থায়ী সমাধান। বাংলাদেশে তারা যেভাবে আশ্রয় পেয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করার জন্য তিনি সিপিএভুক্ত দেশগুলোকে আহ্বান জানান।

গত রোববার বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হোসেন মাহম্মুদ আলী রোহিঙ্গা ইস্যূতে সিপিসি সদস্যদেরকে একটি প্রেস ব্রিফ্রিং করেন। এসময় রোহিঙ্গা ইসূটির উপর জনমত সৃষ্টি হয় এবং এটিকে প্রস্তাব হিসেবে গ্রহণ করার প্রস্তাব ওঠে। এদিকে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে সিপিসি সম্মেলনে অন্তত ১৮টি দেশ বিশেষভাবে মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছে। এবিষয়ে সিপিএির ৬৩ তম সম্মেলনে রেজুলেশনভুক্ত করার জন্য তারা দাবিও জানিয়েছেন। এসময় সম্মেলনে আসা ৪৪টি দেশের সদস্যরা হাত উঁচু করে বাংলাদেশের প্রস্তাবে সম্মতি জ্ঞাপন করেন।

 

সূত্র: নয়া দিগন্ত

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন