নির্বাচনে অংশ নেয়া অনিশ্চিত হয়ে গেল ওয়াদুদ ভুঁইয়াসহ ৫ বিএনপি নেতার
স্টাফ রিপোর্টার:
নিম্ন আদালতে দুই বছরের বেশি সাজা হলে আপিলের রায় হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার(২৭ নভেম্বর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
তবে আপিল বিভাগে দণ্ড স্থগিত ও বাতিল হলেই কেবল নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন বলে জানায় আদালত।
দুর্নীতির দায়ৈ বিচারিক আদালতের দেওয়া দণ্ড ও সাজা স্থগিত চেয়ে বিএনপির পাঁচ নেতার করা আবেদন খরিজ করা রায়ে আদালত এ আদেশ দেন।
দুর্নীতির অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত (কনভিকশন অ্যান্ড সেন্টেন্স) বিএনপি নেতা আমানুল্লাহ আমান, ভাইস চেয়ারম্যান ও ড্যাব নেতা ডা. জেড এম জাহিদ হোসেন, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ ওয়াদুদ ভুঁইয়া, ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক সাংসদ ও জেলা বিএনপির সভাপতি মো. মশিউর রহমান, এবং ঝিনাইহদ-১ আসনে বিএনপির সাবেক সাংসদ মো. আব্দুল ওহাব এই পাঁচ নেতার দণ্ড স্থগিত চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত। এর ফলে এই পাঁচ নেতা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আদালত পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, সংবিধানে ৬৬(২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কারও দুই বছরের বেশি সাজা বা দণ্ড হলে সেটার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় অভিযু্ক্ত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবনে না, যতক্ষণ না আপিল বিভাগ ওই রায় বাতিল বা স্থগিত করে তাকে জামিন দেন।
এর আগে গতকাল এই পাঁচ নেতার দণ্ড স্থগিত চেয়ে করা আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়।
রায়ের পর নিজের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ওয়াদুদ ভূঁইয়া, মো. মশিউর রহমান ও মো. আবদুল ওহাব দণ্ড স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছিলেন। আদালতে আমি বলেছিলাম, ফৌজদারি আদালত, বিশেষ করে ফৌজদারীরি আপিল আদালত অবশ্যই তাদের সাজা স্থগিত করতে পারেন।
‘কিন্তু কনভিকশন বা তাকে যে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, সেটির স্থগিত নেই। বিশেষ করে সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের ২(ঘ) উল্লেখ করে বলেছিলাম, সেই সমস্ত ব্যক্তি জাতীয় সংসদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না বা সংসদ সদস্য হতে পারবে না, যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কারণে অন্যূন দুই বছরের জন্য সাজাপ্রাপ্ত হন এবং মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর সময় অতিবাহিত না হয়।’
তিনি বলেন, যারা দরখাস্ত করেছিলেন, তারা সবাই দণ্ডপ্রাপ্ত। তাদের দণ্ড থেকে মুক্তি লাভ করেননি। তাদের পাঁচ বছর সময় অতিবাহিত হয়নি।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, যদি তাদের দণ্ড স্থগিত করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়া হয়, তা হবে আমাদের সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।
তিনি আরও বলেন, আদালত আমাদের আবেদন গ্রহণ করে তাদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোনো অবকাশ থাকবে না বলে আমি মনে করি।
ওয়াদুদ ভুঁইয়া খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও ২৯৮ নং সংসদীয় আসনে বিএনপির মনোনীত একমাত্র ও সম্ভাবনাময় প্রার্থি। তার মাধ্যমে এই আসনটি পুণরুদ্ধারের আশা করেছিল বিএনপি।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির একাধিক নেতাকে টেলিফোন করলেও তারা কেউ কল রিসিভ করেননি। তবে এই পাঁচ নেতা উচ্চ আদালতে আপীল করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, তথ্য গোপন ও দুর্নীতির মাধ্যমে ছয় কোটি ৩৬ লাখ ২৯ হাজার ৩৫৪ টাকার সম্পদ অর্জন করার অভিযোগ এনে ওয়াদুদ ভূঁইয়াকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার রায় দেন। তিনি এ বিষয়ে আপিল করে ২০০৯ সালের ২৮ এপ্রিল জামিন লাভ করেন।