পার্বত্য চট্টগ্রামকে ইসলামীকরণ করা হচ্ছে- সন্তু লারমা

পার্বত্য নিউজ রিপোর্ট:

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা  পার্বত্য চট্টগ্রামকে ইসলামীকরণের ষড়যন্ত্র হচ্ছে অভিযোগ করে বলেন, “একদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ইসলামীকরণের ষড়যন্ত্র চলছে, অন্যদিকে তৎপর হয়ে উঠছে ইউপিডিএফসহ আরো অন্যান্য চুক্তিবিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠন। চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের সদিচ্ছার অভাব তাদের উৎসাহিত করছে।” সন্তু লারমা জনসংহতি সমিতিরও সভাপতি। পাহাড়ের একসময়ের সশস্ত্র সংগঠন শান্তিবাহিনীর প্রধান ছিলেন তিনি। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার শান্তিবাহিনীর সঙ্গে চুক্তি করলে পাহাড়িদের সশস্ত্র অভিযান শেষ হয়। চুক্তির বিরোধিতা করে ইউপিডিএফ নামের একটি সংগঠন এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।  

এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে সন্তু লারমা বলেন, শান্তিচুক্তি করে ওই সময়ের এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সরকারগুলোর এই চুক্তি বাস্তবায়নের কোনো সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, চুক্তির বিরোধিতা করে পাহাড়ে এখন একটি সংগঠন নানা সন্ত্রাসী কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের দমনেও সরকারের তেমন কোনো আন্তরিকতা নেই। এ অবস্থায় আদিবাসীরা তাদের অধিকার রক্ষায় আত্মরক্ষার জন্য যা করার, তা করতে বাধ্য হতে পারে।

তিনি বলেন, পাহাড়ে অপহরণ বা জিম্মি ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে আদিবাসীদের ক্ষোভ সন্দেহাতীতভাবে কাজ করছে। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় সেখানে নানাভাবে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে। দ্রুত চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে পাহাড়ে বসবাসরত আদিবাসীরা আত্মরক্ষার জন্য নিজেরাই ব্যবস্থা নেবে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে আদিবাসী ফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সন্তু লারমা এসব কথা বলেন। আগামী ৯ আগস্ট জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপন উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সন্তু লারমা বলেন, “সরকারের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার অভাবে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এখনো আমাদের দেশে আদিবাসীদের প্রতি বৈরী মনোভাব রয়েছে। পার্বত্য অঞ্চল এখনো অশান্ত। সন্ত্রাস, শোষণ, নিপীড়ন অব্যাহতভাবে চলছে।”

 “এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে পরিস্থিতি আরো অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে না, চুক্তিবিরোধী ইউপিডিএফ এবং চুক্তি পক্ষকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটবে না- তা আমরা কীভাবে বলতে পারি?” পাহাড়ে বেশ কিছুদিন ধরেই অপহরণ পাল্টা অপহরণের মতো ঘটনা ঘটছে।

সর্বশেষ সোমবার রাঙামাটির লংগদু উপজেলা থেকে অপহৃত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) অপহৃত ৫২ জন নেতাকর্মীর ৩৪ জনকে মুক্তি দেয় অপহরণকারীরা । ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে তাদের অপহরণ করা হয়েছিল।

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকে দায়ী করে সন্তু লারমা বলেন, “চুক্তি সাক্ষরের পর আওয়ামী লীগ সরকার ৩ বছর ৮ মাস সময় পেয়েছিল। সেই সময়ে সরকারের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাইনি। “বর্তমান সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম বাস্তবায়ন চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সাড়ে ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও কোন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই।”

চলতি বছরের ১৬ জুন জাতীয় সংসদে সংশোধনের জন্য বিল আকারে উত্থাপিত ভূমি কমিশন আইন ২০১৩ (সংশোধিত) পার্বাত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তাবায়ন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রণীত হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি। সন্তু লারমা বলেন, “ ১৩ দফা সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়ায় ১০টি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে। বাকি ৩ টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব বাদ দেয়া হয়েছে।”

সংবিধান সংশোধন করে আদিবাসী জাতিসমূহের স্বীকৃতি, ঐতিহ্যগত ও প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি, আদিবাসী অধিকার সংক্রান্ত সকল চুক্তি ও অঙ্গীকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, আদিবাসীদের বেহাত হওয়া জমি উদ্ধারসহ ১০ দফা দাবিতে আগামী ৩ থেকে ৯ অগাস্ট ঢাকায় টানা কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, আদিবাসী নেতা শক্তিপদ ত্রিপুরা, রবীন্দ্রনাথ সরেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজীব মীর, এনজিওকর্মী নুমান আহমেদ খান উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন