পার্বত্য বাঙালী নেতারা কোথা থেকে নাজিল হয়েছেন, আপনাদের জন্ম কোথায়- মখা আলমগীর
বর্তমান সরকারের আমলেই পার্বত্য চট্রগ্রাম শান্তিচুক্তির পরিপূর্ন বাস্তবায়ন হবে- গওহর রিজভী
পার্বত্য নিউজ রিপোর্ট:
বাঙ্গালী নেতৃবৃন্দরা কোথা থেকে নাজিল হয়েছেন ? আপনার জন্ম কোথায়, কোথায় হতে এসেছেন? আপনারা তো এখানকার অধিবাসী না? পার্বত্য চট্রগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) আইন- ২০১৩ বিষয়ে রাঙ্গামাটিতে স্থানীয় বাঙ্গালী নেতৃবৃন্দের সাথে অনুষ্ঠিত মত বিনিময় সভায় বাঙালী নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড.মহিউদ্দিন খান আলমগীর । স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর সভায় উপস্থিত বাঙ্গালী নেতৃবৃন্দ তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং মন্ত্রীর এহেন বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবী জানান। এই সময় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সভাস্থলে বিশৃংখল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক, পৌর মেয়রের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও বাঙ্গালী নেতৃবৃন্দের ক্ষোভ তাতে বিন্দুমাত্র প্রশমিত হয়নি। তার প্রমাণ পাওয়া যায় তাদের বক্তব্যে এই বিষয়টি তারা টেনে আনেন।
এর আগে জেলা প্রশাসকের সন্মেলন কক্ষে মত বিনিময় সভা শান্তিপূর্ন পরিবেশে শুরু হয়। ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর ছাড়া ও প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্ঠা ড. গওহর রিজভী, পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার এম.পি উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জেলা বিএনপির সম্পাদক মোঃ শাহআলম, আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট মোখতার আহমেদ, রাঙ্গামাটি পৌরসভার মেয়র সাইফুল ইসলাম ভুট্টো, রাঙ্গামাটি নাগরিক পরিষদের সভানেত্রী বেগম নূর জাহান, সমঅধিকার আন্দোলনের নেতা মশিউল আলম হুমায়ূন,, পেয়ার আহমেদ, জাহাঙ্গীর কামাল, বিএনপি নেতা এ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ, পার্বত্য চট্রগ্রাম গন পরিষদের চেয়ারম্যান জালালুদ্দীন চৌধুরী আলমগীর, সাবেক পৌর মেয়র মোঃ হাবিবুর রহমান, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মনিরুজ্জামান মহসিনসহ স্থানীয় বিভিন্ন বাঙ্গালী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
বাঙ্গালী ও বিএনপি নেতৃবৃন্দ ভূমি কমিশন আইনের সংশোধনীতে যে সব সংশোধনী আনা হয়েছে তার মধ্যে একাধিক ধারার পূণঃ সংশোধনীর দাবী জানান। এই সব দাবীর মধ্যে ছিল, ভুমি কমিশনে ২ জন বাঙ্গালী সদস্য অর্ন্তভুক্তকরণ। ফ্রিন্স ল্যান্ডের মালিকানা সরাসরি সরকারের হাতে ন্যস্ত করা, ভূমি কমিশনে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয় উপজাতীয়দের পরিবর্তে পার্বত্য জেলার নাগরিকদের অগ্রাধিকার দেয়া, চাকমা সার্কেল চীফের পরিবর্তে তার মনোনীত সদস্য অন্তর্ভূক্তের বিধান বাদ দেয়া , ভুমি জরিপ শুরু করা, পার্বত্য চট্রগ্রামে ভুমি বন্দোবস্তী কার্যক্রম পূনরায় চালুকরণ, ভুমি সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সাথে পার্বত্য জেলার বাঙ্গালী নেতৃবৃন্দের বিশেষ বৈঠকের ব্যবস্থা করা প্রভৃতি।
এই সময় সভায় উপস্থিত আইনমন্ত্রণালয়ের লেজিস্টিলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক সচিব জানান, সংশোধিত আইন পবিত্র ধর্মগ্রন্থ নয় যে এর সংশোধন করা যাবেনা। তিনি সংশোধিত আইনের বিভিন্ন ধারার ব্যাখ্যা প্রদান করেন।
এর আগে রাঙ্গামাটি সার্কিট হাউজে স্থানীয় রাজনৈতিক দল, জনপ্রতিনিধি ও সরকারী কর্মকর্তাদের সাথে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সূযোগ্য কণ্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সংবিধান অনুযায়ী সকল নাগরিকের সমান অধিকার রক্ষায় অঙ্গিকারাবদ্ধ। ধর্ম, বর্ণ কিংবা বাসস্থানের নিরিখে কোন নাগরিক যাতে কোনরূপ বৈষম্যের শিকার না হয় সেদিকে সরকার অত্যন্ত সজাগ রয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্রগ্রামে সহসা ক্যাডেস্ট্রাল সার্ভে শুরু করার প্রয়োজন রয়েছে। এর ফলে এখানকার জমির একটি স্থায়ী চিত্র উঠে আসবে। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্রগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) আইন ২০১৩ নিয়ে যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে সে বিভ্রান্তি দূর করতে হবে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী পাহাড়ী-বাঙ্গালীর মধ্যে কোন বিভেদ নেই ।
মতবিনিময় সভায় পার্বত্য ভুমি কমিশন আইন নিয়ে আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করার উপর গুরুত্বারোপ করে আওয়ামীলীগ নেতারা অভিযোগ করেন, পার্বত্য ভূমি কমিশন (সংশোধনী) আইনটি মন্ত্রী পরিষদের পাশ করার পর থেকে পার্বত্যাঞ্চলে পাহাড়ি-বাঙ্গালী কেউই শান্তিতে নাই। তারা আইনটি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে সঠিকভাবে পর্যালোচনা করে এবং এই আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যপারে সুপারিশ করে জানান, সামান্য কিছু অবহেলার কারনে বর্তমানে সরকারের সকল অর্জন ধ্বংস হতে পারেনা।
পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্ঠা এবং পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী পার্বত্য চট্রগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) আইন ২০১৩ বিষয়ে পার্বত্য চট্রগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এর চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার সাথে মত বিনিময় সভায় মিলিত হন। তবে এই সময় কোন সাংবাদিককে সভাস্থলে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। পরে মত বিনিময় সভা শেষে সভাস্থল থেকে বের হয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্ঠা ড.গওহর রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান সরকারের আমলেই পার্বত্য চট্রগ্রাম শান্তিচুক্তির পরিপূর্ন বাস্তবায়ন করা হবে। পার্বত্য ভূমি কমিশন সংশোধনী আইন নিয়ে ভুল বোঝানো হয়েছে এবং অনেকে ভুল বুঝেছেন। আমরা তাদের বুঝিয়েছি এই আইন দুই পক্ষের জন্য ভালো হবে এবং পাহাড়ে শান্তি আনবে। এতে কারো জন্য ক্ষতি হবে না। আইনটি সংশোধনীর জন্য সংসদে উপস্থাপনের পর এটি এখন স্থায়ী কমিটিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে একান্ত এই বৈঠকের সূত্র ধরে পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার এম.পি প্রথমবারের মতো পার্বত্য চট্রগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদে যান। পার্বত্য চট্রগ্রাম আঞ্চীরক পরিষদ চেয়ারম্যান সন্তু লারমা এই সময় দীপংকর তালুকদারের সাথে করমর্দন করে তাকে স্বাগত জানান।