পাহাড়ে পাহাড়ে কঠিন চীবর দানোৎসব

06.11

মুজিবুর রহমান ভুইয়া :

ঈদ-উল-আযহা আর শারদীয় দুর্গোৎসবের পরপরই পাহাড়ে শুরু হয়েছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ‘দানোৎত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব’। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসবকে ঘিরে পাহাড় থেকে পাহাড়ে বাজছে উৎসবের সুর। এ উৎসবকে ঘিরে পাহাড়ের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে উৎসবের আমেজ। ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে মাসব্যাপী চলবে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় এ ‘কঠিন চীবর দানোৎসব’। মাসব্যাপী পার্বত্য জনপদের প্রতিটি বৌদ্ধ মন্দিরে পালিত হবে ঐতিহ্যবাহী কঠিন চীবর দানোৎসব। এসময় পাহাড়ের আকাশে আকাশে ভেসে বেড়াবে ফানুস বাতির আলোকসজ্জা।

প্রতি বছরই কঠিন চীবর দানোৎসবকে ঘিরে পাহাড়ের বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে লাখো বৌদ্ধ ভক্তের সমাগম ঘটে। আর তাই প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও মন্দিরগুলোকে সাজানো হচ্ছে বর্ণিল সাজে। প্রতিদিন শত শত দায়ক-দায়িকা অংশ নিচ্ছেন বৌদ্ধ মন্দিরগুলোর প্রস্তুতি কাজে। প্রতিটি বৌদ্ধ মন্দিরেই চলছে কঠিন চীবর দানোৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি। দানোৎত্তম কঠিন চীবর দানোৎসবকে ঘিরে বৌদ্ধ ধর্মালম্বী সম্প্রদায়ের এ ধর্মীয় উৎসবগুলোতে থাকেনা কোন জাতিগত ভেদাভেদ। সকল সম্প্রদায়ের মানুষের উপস্থিতিতে এই ধর্মীয় উৎসবগুলো হয়ে উঠে প্রাণবন্ত।

এ বিষয়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একাধিক ব্যাক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, দানোৎত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব উদযাপন করতে পাহাড়ের বৌদ্ধ ধর্মালম্বী সম্প্রদায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। কঠিন চীবর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব হলেও এ উৎসবে পার্বত্য জনপদের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি অনেক অতিথিও অংশগ্রহণ করে থাকেন।

বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের বৃহৎ এই ধর্মীয় উৎসবের শুরু হয় ‘চরকায় সুতা কাটা’র মধ্য দিয়ে। রাতব্যাপী পূর্ণলাভের আশায় বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা চরকায় সুতা কাটা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধর্মীয় কার্যক্রমে অংশ নেন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে তৈরি করা চীবর (বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় গেরুয়া বস্ত্র) উৎসর্গের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত ঘটে এ মহাদানযজ্ঞের। আর এটাই কঠিন চীবর দান।

জানা গেছে, একমাত্র বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও বিশাখা প্রবর্তিত হাজার বছরের নিয়মে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এ মহাদানযজ্ঞের আয়োজন করা হয় না। পার্বত্য চট্টগ্রামের মধ্রে খাগড়াছড়ির য়ংড বৌদ্ধ বিহার আর রাঙ্গামাটির রাজ বনবিহারে সবচেয়ে বড় পরিসরে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এ উৎসবে দেশ এবং দেশের বাইরে থেকেও হাজার হাজার বৌদ্ধ ভক্ত ছুটে আসেন। বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের বৃহৎ এ ধর্মীয় উৎসবে পাহাড়ী-বাঙ্গালী সব সম্প্রদায়ের উপস্থিতিতে সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়। বিশেষত সারারাতব্যাপী চরকায় সুতা কেটে ধর্মীয় গুরুদের জন্য বিশেষভাবে তৈরী চীবর দেখতে সকলেই রাত জেগে থাকে।

এই উৎসবের বিষয়ে বৌদ্ধাধর্মালম্বী বিভিন্ন সূধীজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আড়াই হাজার বছর আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় তার প্রধান সেবিকা মহাপূণ্যবতী বিশাখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা কেটে রং করণ, বয়ন ও সেলাই শেষে চীবর দানকার্য সম্পাদন করেন। বৌদ্ধরা এ ধর্মীয় উৎসবকে দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব বলে। তারই আলোকে মূলত বৌদ্ধাধর্মালম্বীরা বৃহৎ এই কঠিন চীবর দান উৎসব এর আয়োজন করে থাকেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিটি কোনায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব ‘দানোৎত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব’-কে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে করতে স্থানয়ি প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন