পুর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারের পানি বৃদ্ধিতে কক্সবাজারে বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধে ভাঙ্গন : কয়েকশত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি

DSC_0422

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার :

কক্সবাজারে পুর্ণিমার প্রভাবে উপকূলে সামুদিক জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। লোনা পানির প্রবল তোড়ে বিভিন্ন অঞ্চলের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। লোনা জল প্রবেশ করছে লোকালয়ে। চকরিয়ায় প্রায় চারশত ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে সামুদিক পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার উপকুলীয় রামপুর মৌজার বদরখালী ইউনিয়নের চিলখালী এলাকার ৫০-৬০টি চিংড়ি প্রকল্প। এতে প্রায় দুই কোটি টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে বলে জানান স্থানীয় চিংড়ি প্রকল্প মালিকরা।

স্থানীয় চিংড়ি প্রকল্প মালিক ও ব্যবসায়ী উপজেলার দরবেশকাটা এন্টারপ্রাইজের পরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, উপজেলার উপকূলীয় চিংড়ি জোনের চারিদিকে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধে ঘেরা। দীর্ঘদিন ধরে পাউবোর পক্ষ থেকে সংস্কার কাজ না করার কারণে বর্তমানে বেশিরভাগ এলাকার বেড়িবাঁধ অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় চিলখালী এলাকায় পুর্ণিমার প্রভাবে সামুদিক জোয়ারের পানির তোড়ে ভেঙ্গে যায় প্রায় চার’শ ফুট আয়তনের বিশাল বেড়িবাঁধ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেড়িবাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবাহিত হয়েছে নিকটস্থ চিংড়ি প্রকল্প সমূহে। এতে ওই এলাকার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান, ফিরোজ আহমদ, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপির চাষী ফজল কাদের, আবদুল মালেক, ছৈয়দুর রহমান, মনোয়ার আলম, আবদুল কাদের ও মাওলানা শহিদুল ইসলামের মালিকানাধীন প্রায় ৫০-৬০টি চিংড়ি প্রকল্প পানিতে তলিয়ে যায়।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম শফিকুল হক বলেন, পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না থাকায় চকরিয়া উপকুলের বেড়িবাঁধ সমূহে সংস্কার কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধ সংস্কারে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে আবেদন করা হবে। কুতুবদিয়া উত্তর ধুরুং ফের বেড়িবাধঁ ভেঙে তলিয়ে গেছে ৫’শ বসত-ঘর। পূর্ণিমার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে গত ৩ দিন ধরে উত্তর ধুরুং এলাকায় সাগরের লবনাক্ত পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। জরুরী ভিত্তিতে কাজ করা পাউবোর কাচা বেড়িবাঁধও ৩ দিনের মাথায় ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। পূর্বচর ধুরুং ও পশ্চিম চর ধুরুং এলাকায় ৩‘শ বাড়ি-ঘরে কোমর সমপরিমাণ পানি উঠেছে।

কৈয়ারবিল এলাকার লোকজন বলেন, বেড়িবাঁধ ভাঙা থাকায় মলমচর, মৌলভী পাড়া, পশ্চিম ঘিলাছড়ি, হাজি মফজল পাড়া, মৌলভী আফজল পাড়া, ফকিরা জামে মসজিদ পাড়ায় জোয়ারের লবনাক্ত পানি প্রবেশ করে  রোপিত আউশ, পুকুর তলিয়ে গেছে।

এদিকে পেকুয়ার তিনটি ইউনিয়নে আষাঢ়ি পূর্ণিমার জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিলীন হওয়া বেড়িবাঁধ ও কয়েকটি পয়েটে ভেঙ্গে সাগরের লোনা পানি ঢুকে কমপক্ষে ১০টি  গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে ওই অরক্ষিত বেড়িবাঁধ নিয়ে উপজেলার আড়াই লক্ষ মানুষ চরম আতঙ্কে দিনযাপন করছে।

মগনামা শরতঘোনা পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তাছাড়া পশ্চিমকুল, কাঁকপাড়া, শুদ্দখালিপাড়া, বেদেরবিলপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে সমুদ্রের পানি প্রবেশ করেছে। উজানটিয়া বিচ্ছিন্ন দ্বীপ করিয়ারদিয়ায় বিভিন্ন পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত ও কয়েকটি গ্রাম পানির নীচে তলিয়ে গেছে। রাজাখালী বকশিয়াঘোনা, নতুনঘোনা, মাতবরপাড়া, আমিনবাজার, ভাঙ্গার মুখসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে সমুদ্রের লোনা পানি প্রবেশ করছে সকাল সন্ধ্যা।

জেলা সদরের পোকখালীতে প্রবল সামুদ্রিক জোয়ারে বেড়িবাধ উপচে ১০-১২টি চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়েছে। পূর্ণিমা তিথির প্রবল জোয়ারের তোড়ে উপকুলীয় চিংড়ি উৎপাদান এলাকা গোমাতলীতে বহু ঘের প্লাবিত হয়ে কোটি টাকার চিংড়ি ভেসে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্থ ঘের মালিকরা জানান, পুর্ণিমার তিথি আরম্ভ হলে বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন মহেশখালী চ্যানেলে প্রতিদিন আস্বাভাবিক মাত্রার জোয়ার হতে থাকে। প্রবল দক্ষিনা হাওয়ায় প্রতিদিন ক্রমশ বাড়তে থাকে জোয়ারের উচ্চতা। সাগরে জোয়ারের এই রনরঙ্গিনী রূপ দেখে চিংড়ি ঘেরের বাইরের বেড়িবাঁধ, স্লুইচ গেইট মেরামত করতে কয়েকদিন ধরেই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন খামারীরা। কিন্তুশেষ রক্ষা হয়নি তাদের ভেসে গেছে তাদের কাঙ্খিত মৎস্য ভান্ডার।

এছাড়া উত্তর গোমাতলী আর-৬ স্লুইচ গেইট সংলগ্ন দক্ষিণ পার্শ্বের প্রায় ৬’শ ফুট বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপুর্ণ অবস্থায় রয়েছে। উচ্চমাত্রার জোয়ার জনিত প্লাবনে বোরাক ঘোনা, নেছার মেম্বার ঘোনা, কাঁটা ঘোনা, শহর আলীর ঘোনা ও মাদ্রাসাঘোনা সহ আরো ৭/৮টি ঘের ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এসব চিংড়ি প্রকল্প সমূহে এখন জোয়ার ভাটা চলছে।

জোয়ারের পানি বাড়লে আরও বিভিন্ন চিংড়ি ঘের প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন