প্রথমবারের মত খাগড়াছড়িতে আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস পালিত

Mountain Day 11.12.13

জেলা প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি :

পাহাড় পৃথিবীকে তার প্রয়োজনের প্রায় অর্ধেক স্বাদু পানি সরবরাহ করে। মানুষের জীবনে পাহাড় ও পর্বতের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জীবনের সাথে পর্বত ও পার্বত্যাঞ্চলের বন্ধন তৈরির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্বত দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। পাহাড় পৃথিবীর অস্তিত্ব রক্ষার একটি প্রধান অংশ। অথচ সচেতনতার অভাবে এ অংশটিকে প্রতিনিয়ত অবহেলা করা হচ্ছে, পাহাড়ের গাঁয়ে জন্মানো সবুজ গাছ-গাছালি কেটে ইটের ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে, অবাধে পাহাড় নিধন ও পাহাড়ে কেটে পৃথিবীর ভারসাম্য নষ্ট করে দিয়ে অক্সিজেনের চেয়ে কার্বন ডাইঅক্সাইড বৃদ্ধি করানোর ফলে প্রাকৃতিক দূর্যোগ বার বার দেখা দিচ্ছে বাসযোগ্য এই পৃথিবীতে। পাহাড় যখন কাটা হয় তখন কিন্তু স্বাভাবিকত: যে পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে তা কিন্তু পরিলক্ষিত হয় না। পরক্ষণে দেখা যায়, পাহাড়ী ঢলে নদী, নালা ভরাট হয়ে পানির সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে কৃষি কাজে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে কৃষকরা। আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী উপহার দেয়ার জন্য পাহাড় রক্ষা ও পাহাড় আইন যথাযথ বাস্তবায়ন করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

জাতিসংঘ ঘোষিত প্রথমবারের মত বাংলাদেশের তিন পার্বত্য চট্টগ্রামের ন্যায় ১১ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস পালন উপলক্ষে আজ বুধবার সকাল ৯টায় র‌্যালি পরবর্তী পার্বত্য জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।

দিবসটি পালন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দেন প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে উল্লেখ করেন, “বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ১১ ডিসেম্বর জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস-২০১৩ উদ্যাপন করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে বলে আমি মনে করি। এ উপলক্ষে আমি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল পার্বত্যবাসীকে শুভেচ্ছা জানাই। পৃথিবীর প্রায় এক দশমাংশ মানুষ পার্বত্য অঞ্চলে বসবাস করে। পার্বত্য অঞ্চল জীববৈচিত্র্যের এক অফুরন্ত উৎস। পর্বতমালা পৃথিবীকে তার প্রয়োজনের প্রায় অর্ধেক স্বাদু পানি সরবরাহ করে। তাই মানুষের জীবনে পাহাড় ও পর্বতের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জীবনের সাথে পর্বত শ্রেণি ও পার্বত্য অঞ্চলের মেলবন্ধন তৈরির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্বত দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা সব সময়ই পার্বত্য অঞ্চল ও পার্বত্যবাসীর উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী শান্তি ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তির আলোকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ গঠন করা হয়। গত পাঁচ বছরে সরকার পার্বত্যবাসীর জীবনমান উন্নয়ন, জীববৈচিত্র্যের উন্নত ব্যবস্থাপনা, বনায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্কসহ সকল খাতের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। আমি আশা করি, আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস পালন অনগ্রসর পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন বয়ে আনবে। পার্বত্য অঞ্চল, পার্বত্যবাসী ও পার্বত্য জীববৈচিত্রে সংরক্ষণে সচেতনতা সৃষ্টিতে আমি সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। আমি আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস-২০১৩ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সাফল্য কামনা করছি।”

‘Mountains-key to a sustainable future’ (পর্বত: টেকসই ভবিষ্যতে চাবি) এ প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে র‌্যালী পরবর্তী খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাথোঅং মারমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য সকাল ১০টায় জেলা পরিষয়দ মিলনায়তনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি’র বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো: আব্দুল খালেক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারনের বিভাগের উপ-পরিচালক অনিল চন্দ্র দেব, সিভিল সার্জন নারায়ন চন্দ্র দাশ,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নাল আবেদীন, পাজেপ সদস্য সাহেব আলী, পাজেপ নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রহমান তরফদার, আলো  ও তৃণমূল এনজিও সহ এনজিও কর্মকর্তাবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

আজ বুধবার সকাল ৯টায় দিবসটি পালনে বর্ণাঢ্য র‌্যালির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা করা হয়। খাগড়াছড়ি আদালত সড়কস্থ টাউন হল প্রাঙ্গণ হতে বর্ণাঢ্য র‌্যালী বের হয়ে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আলোচনা সভায় মিলিতি হয়। বর্ণাঢ্য র‌্যালীতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থা সমূহ যোগ দেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন