ফুটপাতের ব্যবসায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে স্বামীহারা ইয়াছমিন

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার জন্য কতভাবেই না মানুষ যুদ্ধ করছে। সে সংগ্রাম কখনও পুরুষ আবার কখনও ছুঁয়ে যায় বিধবা নারীদেরও। এরকম অনেক বিধবা আছে আমাদের আশেপাশে। হয়তো চোখ এড়িয়ে যায়। অথচ, একটু সহানুভূতি আর মানবিক উদার মনোভাব এই সব জীবন সংগ্রামের যুদ্ধে ছুটে চলা বিধবা নারীদের রক্ষা করতে পারে।

গত বৃহস্পতিবার শহরের হাসপাতাল সড়কে চৌরাস্তার মোড়ে দেখা যায়, এক নারী বিভিন্ন ফলমূল, সাথে কসমেটিক্স ও কম্বল বিক্রি করছে। রাস্তার এক পাশে কম্বল, ফল, কসমেটিক্সের ঝুঁড়ি ইয়াছমিনের অভাবের রাজ্যে চাহিদা পূরণের একমাত্র অবলম্বন।

কুতুবদিয়া উপজেলার আজম কলোনী নিজ বাড়ি হলেও শহরের পেশকার পাড়ায় ভাড়া বাসায় জীবন যাপন করছেন ইয়াছমিন।

পাঁচ বছর আগে স্বামী আবু আহমদ সাগরে মাছ আহরণ করতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। তার চার সন্তান এখনো তাদের বাবার জন্য তীর্থের কাকের মতো বাবাকে ফিরিয়ে পাওয়ার একবুক স্বপ্ন বুকে লালন করে অপেক্ষার প্রহর গুনছে। মায়ের একক উপার্জনে কোনমতে সংসার চললেও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ বহণ করার মতো এই পৃথিবীতে তাদের কেউ নেই।

বড় ছেলে কক্সবাজার টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের ৯ম শ্রেণির বর্তমানে অধ্যায়নরত ছাত্র, মেঝ মেয়ে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম ও সেঝ মেয়ে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী। পরিবারের সাথে থাকে তাদের নানী। ইয়াছমিনকে ব্যয় করতে হয় তার বৃদ্ধা মায়ের ঔষুধের খরচও। একজন বিধবা নারীর দ্বারা এসব কিভাবে সম্ভব এমন প্রশ্নের জবাবে অসহায় ইয়াছমিন জানান, শহর থেকে সুদূর গ্রামে গিয়ে বিভিন্ন জাতের ফলমূল- পেঁপে, আনারস, পিয়ারা, কলা, আতা ইত্যাদি চাষীদের কাছ থেকে অগ্রীম কিনে নিয়ে ফলগুলো খাওয়ার উপযোগী হলে ভ্যান গাড়ী যোগে তা শহরে নিয়ে এসে নির্দিষ্ট দামে বিক্রি করি। এছাড়াও উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে নানা ধরণের প্রসাধন সামগ্রী, কম্বল, দাঁতের ব্রাশ ও পরিবারে ব্যবহারযোগ্য বিভিন্ন জিনিসপত্র স্বল্পমূল্যে কিনে নিয়ে শহরে বিক্রি করি।
এর আগে কোর্ট মার্কেটে বিভিন্ন জাতের চাউল, শস্য, পান-সুপারী ইত্যাকার পণ্যদ্রব্য বিক্রি করে আসছিলেন বলেও জানান পরিশ্রমী ইয়াছমিন।

সন্তানদের লেখাপড়ার অসুবিধার কথা জানাতে গিয়ে ইয়াছমিন বলেন, অনেক সময় সন্তানদের বিদ্যালয়ের বেতন দিতে গিয়ে পরিবারের সবাইকে অনাহারে থাকতে হয়। আমার স্বল্প আয়ে পরিবারের সমস্যার সমাধান হয় না।

সন্তানদের লেখাপড়ার সুযোগ দিয়ে মানুষের মতো মানুষ করার স্বপ্ন থাকলেও দিনে দিনে তা বিফলের পথে।

এমতাবস্থায় জীবন সংগ্রামী স্বামীহারা ইয়াছমিন সমাজের সচেতন মহলের কাছে তার অসহায় সন্তানদের লেখাপড়ায় সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাদের উজ্জল ভবিষ্যতে ভুমিকা রাখার আকুল আবেদন জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন