বান্দরবানের দুর্গামাঞ্চলে তৃষ্ণা মেটায় ঘোলা পানি

Bandarban water pic-2

নিজস্ব প্রতিবেদক:
বান্দরবানের দুর্গম অঞ্চলে যারা ভ্রমণ বা হাইকিংয়ে যান তাদের লেখাতে পাবেন ঝর্ণার ঝিরিঝিরি শব্দ শোনার মুগ্ধতা। শীতল পানিতে হাত-মুখ ধুয়ে তার ক্লান্তি জুড়ান। পানি পানের তৃপ্তিও জানিয়ে রাখেন। অথচ বান্দরবানের পাহাড়ি অঞ্চলে এখন অনেকে পান করছেন ঘোলা পানি। পানির উৎসস্থলগুলো ধীরে ধীরে শুকিয়ে আসায় নদী ও ঝর্ণার ঘোলা পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। আক্রান্ত হচ্ছেন ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের পেটের পীড়ায়।

সাধারণত এসব অঞ্চলের খাবার পানির প্রধান উৎস হলো পাতকুয়া ও ঝর্ণার স্বচ্ছ জলধারা। পাতকুয়ার জমে থাকা শীতল ও স্বচ্ছ পানি শুকনো মৌসুমে বিশাল পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর তৃষ্ণা নিবারণের অন্যতম ভরসা। পাহাড়ের চূড়ায় বসবাসকারীরা ব্যবহার করেন ঝর্ণার পানি। কিন্তু নির্বিচারে বন উজাড় এবং ঝিড়ি-ঝর্ণা থেকে পাথর উত্তোলনের কারণে পানির এ উৎসগুলো ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে। এভাবে এক দশকের মধ্যে জেলার ছোট-বড় কয়েকশ ঝর্ণাধারা সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেছে বলে দাবি স্থানীয়দের।

মাঝেরপাড়ার বাসিন্দা জ্ঞানরঞ্জন তঞ্চঙ্গ্যা ও চিম্বুক এলাকার বাসিন্দা লনগান ম্রোসহ কয়েকজন জানান, তাদের এলাকায় খাবার পানির কোনো সুব্যবস্থা নেই। বিশুদ্ধ পানির সংকটের কারণে ঝিরি-খালের পানি পান করেন তারা। সুপেয় পানির জন্য যেতে হয় অনেক দূর। পাহাড় বেয়ে উঠা-নামা করতে হয়। সবসময় দূর থেকে পানি আনা সম্ভব হয় না। তাই বাধ্য হয়ে ঝিরি-খালের ঘোলা পানি ব্যবহারের কারণে ডায়রিয়াসহ নানান রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। তারা এ সমস্যার প্রতিকার চান।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘ পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে বান্দরবানের প্রত্যন্তাঞ্চলের বাসিন্দাদের। পানি সংগ্রহকারীদের অধিকাংশই নারী। কেউ কেউ পাতকুয়ার পাথর সরিয়ে ঘোলা পানি ছেঁকে সংগ্রহ করছেন খাবারের পানি।

স্বাস্থ্য বিভাগসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর শুস্ক মৌসুমে মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দেয়। ছড়া এবং খালের দূষিত পানি ব্যবহারের কারণে দুর্গমাঞ্চলের গ্রামগুলোতে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ আক্রান্ত হন ডায়রিয়া ও পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে।

এদিকে এসব অঞ্চলে পানির চাহিদা মেটাতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থাগুলো স্থাপন করেছে কয়েক হাজারের বেশি রিংওয়েল ও টিউবওয়েল। যেগুলো অধিকাংশ এখন অকার্যকর হয়ে পড়ে রয়েছে। সংস্কারেও নেই কোনো উদ্যোগ। জিএফ পাইপলাইনের মাধ্যমে দুর্গমাঞ্চলগুলোতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নেওয়া কোটি টাকার প্রকল্পগুলোও কাজে আসেনি। এমনকি জেলায় পানির চাহিদা কতটুকু সেটিও জানাতে পারেনি কর্মকর্তারা। তবে চাহিদার বিপরীতে শতকরা ২৫ ভাগ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিভাগ।

এদিকে, পাহাড়ে বিশুদ্ধ পানির উৎসস্থলগুলো দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান স্থানীয়রা। এ বিষয়ে বান্দরবান জনস্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সোহরাব হোসেন জানান, ‘ভূ-প্রকৃতিগতভাবে বান্দরবান জেলায় পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। এ ছাড়াও বনাঞ্চল উজাড় ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানির উৎসস্থলগুলো শুকিয়ে গেছে। এগুলো সংস্কারের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য রিংওয়েল, টিউবওয়েল এবং জিএফএস নির্মাণ কার্যক্রম চলছে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে গৃহীত প্রকল্পগুলোর সুবিধাও ভোগ করছে লোকজন।

তবে এ প্রকল্পগুলো ঠিকমত কার্যকর হলে দীর্ঘমেয়াদী কোনো সুফল পাওয়া যাবে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন