বান্দরবানে অনুমোদনহীন হাইসাওয়ার কার্যক্রম শুরু প্রকল্প বাস্তবায়নে হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন

 Bandarban haisowar angio 25.8.2013

জমির উদ্দিন:

 বান্দরবানে সরকারের অনুমোদনহীন হাইসাওয়ার প্রকল্প কাজ শুরু করে দিয়েছে বেসরকারী এনজিও সংস্থা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন। শতশত কোটি টাকা আত্মসাত করার  লক্ষ্যে প্রকল্প সর্ম্পকে স্থানীয় প্রশাসনকে না জানিয়ে কার্যকলাপ পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, এনজিও হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন গতকাল রবিবার থেকে অনুমোদনহীন হাইসাওয়ার প্রকল্প বাস্তবায়নের যাত্রা শুরু করেছে বান্দরবান সদর, লামা, রোয়াংছড়ি, থানছি এবং রোঙ্গামাটি জেলার ইউপি সচিবদের নিয়ে। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসনকে না জানিয়ে সকালে বান্দরবান শহরের বাঘালাটাস্থ তুলা উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রের হল রুমে সচিবদেরকে প্রকল্প সর্ম্পকে ধারণা, অবহিতিকরণ ও বাস্তবায়নের জন্য ৫দিন ব্যাপী “হাইসাওয়ার প্রকল্পের ধারণা ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা” নামে শীর্ষক মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু করেছে। এ কর্মশালায় প্রায় ২৬জন ইউপি সচিবকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকা থেকে ঢাকাস্থ পিএমআইডি’র টিমকে প্রশিক্ষক হিসেবে আনা হয়েছে। প্রশিক্ষকরা হলেন টিম লিডার কায়েদ-ই-আযম ও সদস্য আবুল কালাম আজাদ ও হাইসাওয়া প্রকল্পের কর্মকর্তা সংযুক্তা চাকমা।

এবিষয়ে কর্মশালায় উপস্থিত বেসরকারী এনজিও সংস্থা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের উপজেলা ইউসিবিও কর্মকর্তা সচিব চাকমা জানান, অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে তিন পার্বত্য জেলার ওয়াটার-স্যানিটেশন ও জনগনের সাস্থ্য সংকট নিরসনের জন্য শতকোটি টাকা ব্যয়ে হাইসাওয়ার প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে। তিনি হাইসাওয়ার প্রকল্প এখনো বাংলাদেশ সরকার কোন প্রকার অনুমোদন না দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। প্রকল্প ও প্রশিক্ষণ সর্ম্পকে প্রশাসন জানে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবিষয়টি হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মংমংসিং এবং আমন্ত্রিত সচিবদের চেয়ারম্যানরা বলতে পারবে বলে জানান।

এ ব্যাপারে প্রশিক্ষক আবুল কালাম আজাদ জানান, আমরা হাইসাওয়া প্রকল্প সর্ম্পকে সচিবদের ধারণা ও বাস্তবায়ন ও কেনাকাটা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন এবং এলাকায় প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে সচিব ও চেয়ারম্যানদের সহযোগিতা করবেন। এবিষয়ে জানতে এ প্রতিবেদক গতকাল হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মংমংসিং’এর মোবাইল বন্ধ থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।

এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনকে না জানিয়েছে ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করে সচিবদের জোরপূর্বক এনে প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণ করায় ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এতে স্থানীয় উপজাতী-বাঙ্গালী সাধারন জনগন সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এব্যাপারে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেলা উদ্দিন এ প্রতিবেদককে জানান, হাইসাওয়ার প্রকল্প ও সচিবদের প্রশিক্ষণ সর্ম্পকে তিনি কিছুই জানে না। এনজিও সংস্থা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন এবিষয়ে প্রশাসনকে কিছু জানায়নি। বেআইনীভাবে সচিবদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে অন্যায় কাজ করেছে। এবিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিতিকরণসহ প্রশাসনিকভাবে এনজিও সংস্থা ও সচিবদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানান। একই কথা জানিয়ে রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসনকে না জানিয়ে কোন এনজিও সংস্থা কোন প্রকল্প ও কর্মকান্ড পরিচালনা করতে পারে না। এটি নিয়ম বহিভূত বলে জানান।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক কে.এম.তারিকুল ইসলাম হাইসাওয়া প্রকল্প সর্ম্পকে তিনি কিছুই জানায়নি। এবিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে অনিয়ম পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন।
জানাগেছে, বান্দরবান সদর, লামা, রোয়াংছড়ি, থানছি উপজেলা ৪টি ইউনিয়ন থেকে ১৭ ইউপি সচিব এবং রাঙ্গামাঠি থেকে ৯ সচিব ও খাগড়াছড়ি থেকেও ইউপি সদস্যদের কর্মশালার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। হাইসাওয়ার প্রকল্পের অধিনে বান্দরবান থেকে হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন রাঙামাঠি থেকে গ্রীণহিল ও খাগড়াছড়িতে ডেমো এনজিও কর্যক্রম পরিচালনা করবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন