বান্দরবানে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী আটকের দাবি ক্য শৈ হ্লা‘র
বান্দরবান আওয়ামী লীগের সভাপতি ক্য শৈ হ্লা বলেছেন, বান্দরবানে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা সরকারি উন্নয়ন কাজ ও সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রায় প্রভাব ফেলছে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সন্ত্রাসীদের ভয়ে এলাকায় যেতে পারছেন না। শিক্ষার্থীরা স্কুল কলেজে যেতে ভয় পাচ্ছে। পাহাড়ের মানুষ সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মী হয়ে পড়েছে। নতুন বছরে এসেও সন্ত্রাসীদের এই কর্মকাণ্ড মানুষকে ভাবিয়ে তুলছে।
রবিবার (৫ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় বান্দরবানে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ও জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বান্দরবানের দূর্গম পাড়াবাসীদের ডেকে ডেকে চাঁদা চাইছে সন্ত্রাসীরা। এই কারণে সরকারি উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এই অবস্থা চলতে থাকলে উন্নয়ন কাজ থমকে যাবে।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আরও বলেন, সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে জানতে পেরে সন্ত্রাসীরা মোবাইল ফোনে বিভিন্নজনকে হুমকি দিয়েছে। ইতোপুর্বে বান্দরবানের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নজরে আনা হয়েছিল, এবার প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এই নেতা।
চাঁদা আদায় ও হুমকিদাতা হিসেবে তিনি জেএসএস, জেএসএস সংস্থারপন্থি, মগবাহিনীসহ দলছুট অজ্ঞাত কয়েকটি বাহিনীর নাম উল্লেখ করেন।
মতবিনিময়ে বান্দরবান সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রাজু মং মারমা বলেন, মনজয়পাড়া এলাকায় মগবাহিনী, জেএসএসসহ সংষ্কারপন্থিদের নাম দিয়ে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছে। তিনি নিজে আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
রাজবিলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ক্য অং প্রুও একই অভিযোগ তোলেন।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পাইহ্লা অং মারমা বলেন, শান্তিচুক্তি করার পরও চুক্তিকারীরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে সাধারণ মানুষের ঘুম হারাম করে দিচ্ছে। সন্ত্রাসীরা তাকে মুঠোফোনে হুমকি দিয়েছে বলে দাবি করেন।
পৌর কাউন্সিলর অজিত দাশ, কুহালং ইউপি চেয়ারম্যান সাবু খয়, রাজবিলা ইউপি চেয়ারম্যান ক্যঅং প্রু এ সময় বক্তব্য রাখেন।
পৌর কাউন্সিলর অজিত দাশ বলেছেন- নতুন বছরে যেন ইতোপূর্বে নিহত পরিবারের মতো আর কারো বুক খালি না হয় সে জন্য সাংবাদিকদের ভূমিকা রাখতে হবে। লেখনীর মাধ্যমে পাহাড়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি কমলে মানুষ কিছুটা স্বস্থি পাবে। এ সময় তিনি আইন শৃংখলা বাহিনীর জোরদার অপারেশন প্রয়োজন বলে মনে করেন।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পাইহ্লা অং মারমা বলেন, শান্তিচুক্তি করার পরও চুক্তিকারীরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে সাধারণ মানুষের ঘুম হারাম করে দিচ্ছে। সন্ত্রাসীরা তাকে মুঠোফোনে হুমকি দিয়েছে বলেও দাবি করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে এ সময় কুহালং ইউপি চেয়ারম্যান সাবু খয়, রাজবিলা ইউপি চেয়ারম্যান ক্যঅং প্রু উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমান সরকারের আন্তরিকতার ফসল শান্তিচুক্তি। চুক্তি হওয়ার পর পাহাড়ে অনেকাংশে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড শিতিল হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি কিছু স্বার্থনেসী মহল দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সম্প্রীতির পাহাড়ে পুনরায় অশান্তি তৈরী করেছে। যা অত্যান্ত উদ্বেগজনক ও মর্মান্তিক।
পাহাড়ে সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়ন ও অর্জিত সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে পরিকল্পিতভাবে এই সন্ত্রাসী কার্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। পরিস্থিতি অস্বতিশীল করে সরকারি উন্নয়ন কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য, পাহাড়ে সরকারের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা বাধাগ্রস্থ করছে। পাহাড়ে আঞ্চলিক দলগুলোর আধিপত্য বিস্তার, অর্ন্তকোন্দল ও বিভাজনের ফলে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। পাহাড়ের বিভিন্ন জনগণ ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলোর সাথে দেশি সন্ত্রাসীগুলোর লিয়াজোর অভিযোগের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, নামে বেনামে সন্ত্রাসী বাহিনীর অনৈতিক অত্যাচারের শিকার হচ্ছে সাধারণ নিরীহ জনগণ। এমনকি সরকারি দলের প্রতিভাবান ত্যাগী নেতাকর্মীরা সন্ত্রাসীদের টার্গেটের শিকার হচ্ছে।
সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে দিবালোকে জনবসতিতে প্রবেশ করে অব্যাহতভাবে হুমকি দিচ্ছে। এ ছাড়াও অনেক আগে থেকে অন্যান্য সন্ত্রাসীর সদস্যরা বিভিন্নভাবে চাঁদা আদায় করে আসছে। সন্ত্রাসীদের নির্ধারিত চাঁদা দিতে ব্যর্থ হলে নিরীহ মানুষ নির্যাতন, অপহরণ ও হত্যার শিকার হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের উদ্ধৃতি দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, মিয়ানমারের এএলপির সন্ত্রাসীরা মগ পার্টির নাম ধারণ করে সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম চালাচ্ছে। সন্ত্রাসীদের এই কর্মকাণ্ডের কারনে হতদরিদ্ররা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। অনাহারে অর্ধহারে জীবন যাপন করছে মানুষ।
এই অবস্থায় সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মী নির্যাতিন সাধারণ নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবন যাপন নিশ্চিত করতে এবং বান্দরবানের সম্প্রীতির সুবাতাস ফিরিয়ে আনতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানান।