বান্দরবানে উপজাতি নারীদের তৈরি তাঁত বস্ত্রের ব্যাপক সম্ভাবনা

fec-image

৮০ দশকে পাহাড়ে ছিলনা গাড়িসহ উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। পাহাড়ে বসবাসরত উপজাতীয় জনগোষ্ঠির লোকজন দিনের পর দিন পায়ে হেঁটে নদী, ঝিরি ও পাহাড় পাড়ি দিয়ে চাল ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী জোগাড় করতে বছরে বাজারে আসতো ৩ থেকে ৪ বার ।

এসময় পার্বত্য অঞ্চল অনুন্নত ও পশ্চাৎপদ ছিল বিধায় স্থানীয় উপজাতীয় সম্প্রদায়ের লোকজন বাজার থেকে বস্ত্র ক্রয় করে পরিধান করার কল্পনাই করতে পারেনি।

পাহাড়ে উপজাতীয় সম্প্রদায়ের নারীরা নিজের ব্যবহারের প্রয়োজনে ঘরে বসেই তৈরি করতো থামি, ওড়না, চাদর, রুমাল তোয়ালে, জামা, গামছাসহ নারী পুরুষের বিভিন্ন প্রকারের বস্ত্র।

উপজাতী সম্প্রদায়ের নারীরা বাঁশের কাঠ কোমরের সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে বিশেষ কায়দায় এই বস্ত্র তৈরি করে বলেই এদিকে স্থানীয় ভাষায় কোমর তাঁত বলে।

বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলায় আধিকাল থেকে উপজাতীয় নারীদের কোমর তাঁত বুননের প্রচলন রয়েছে। এক সময় নিজ ব্যবহারের জন্য কোমর তাঁত বস্ত্র তৈরি করা হলেও বর্তমানে এটি তাদের ঐতিহ্য।

তবে বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বসবাসরত ১১টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপজাতীয় জনগোষ্ঠির মধ্যে বম ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের নারীরা কোমর তাঁত বস্ত্র বুননে বেশি পারর্দশী।

বান্দরবান সদর উপজেলার গেৎশিমনি পাড়া, শেরন পাড়া, বেতানী পাড়া, রুমা উপজেলার বেতল পাড়া, মুনলাই পাড়াসহ আরো অসংখ্য পাড়ায় নারীরা কোমর তাঁত বুননের দৃশ্য চোখে পড়বে।

বান্দরবান জেলা পর্যটন খাতে ধীরে ধীরে বিকশিত ও প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে এই কোমর তাঁতের বিভিন্ন বস্ত্র পর্যটকদের কাছে আর্কষণীয় হয়ে উঠে।

কোমর তাঁতের বিভিন্ন বস্ত্র বান্দরবানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের আছে তাদের প্রিয় মানুষকে দেয়ার মত একটি স্পেশাল উপহারে পরিণত হয়েছে।
তাই পর্যটকদের চাহিদা মিটাতে বান্দরবানের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে উপজাতীয় তরুণ-তরুণীরা কোমর তাঁতের বিভিন্ন পণ্য ও বস্ত্রের দোকান খুলে বসছে।

প্রাতিষ্ঠানিক কোন প্রশিক্ষণ ছাড়া সম্পূর্ণ ঘরোয়া শিক্ষা নিয়ে তরুণীরা চালিয়ে যাচ্ছে কোমর তাঁত বুনন কাজ।

তবে সরকারি- বেসরকারি প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহায়তা পেলে কোমর তাঁত বস্ত্রের আরো বেশি উৎপাদন বাড়বে।

স্থানীয় এসব বস্ত্র স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা সম্ভব। এতে বেকারত্ব দূরীকরণসহ স্বাবলম্বী হবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারী পুরুষ এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: উপজাতি, তাঁত বস্ত্র, নারী
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন