বান্দরবানে রেশম চাষিদের পলু ঘর নির্মাণ প্রকল্পের টাকা হরিলুট

fec-image

বান্দরবানের লামা উপজেলায় রেশম চাষিদের পলু পালন ঘর নির্মাণের নামে ঘুষ বাণিজ্যসহ নানান যোগসাজশে কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎতের অভিযোগ উঠেছে প্রকল্পের ম্যানেজার ফেরদাউসুর রহমান ও অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর খিংওয়াইনু মার্মা মীমার বিরুদ্ধে।

অভিযোগ রয়েছে, তালিকাভুক্ত কয়েকজন রেশম চাষির বরাদ্দকৃত প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করে বহিরাগত সহ নামে-বেনামে চাষিদের পলুঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারি বরাদ্দ দেওয়া অর্থ উপকারভোগীদের পলুঘর নির্মাণের কথা থাকলেও উপকারভোগীদের কাছে পলু ঘরের নির্মাণের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

জানা যায়, রেশম চাষ সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে পার্বত্য জেলা সমূহের দারিদ্র বিমোচন শীর্ষক প্রকল্প ‘রাঙ্গামাটি’র বাস্তবায়নে সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৫০ জন পলু চাষিদের। সেসব চাষিদের জনপ্রতি ৪০ হাজার টাকা করে পলু ঘর নির্মাণের বরাদ্দ পায় মোট ৬০ লাখ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেশম চাষি ছেনুয়ারা বেগম মাঠকর্মী নূরুল ইসলামকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ না দেওয়ায় উপকারভোগীদের কপালে জোটেনি বরাদ্দের প্রণোদনা। একইভাবে মনোয়ারা বেগম নামে আরেক বৃদ্ধার নামের বরাদ্দের টাকা মাঠকর্মীর নুরুল ইসলামের নিকটাত্মীয় হুরে জান্নাতকে দিয়ে দেয়। পলু পালন ঘর নির্মাণে আর্থিক সহায়তা প্রদানের কথা বলে অফিস সহায়কের সমন্বয়ে জনপ্রতি ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও আছে মাঠ কর্মী নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাঠকর্মী নুরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, এইগুলো সব মিথ্যা! আমি কোন টাকা তুলেনি। আপনি অফিস গিয়ে দেখা করেন।

এ বিষয়ে অফিস সহায়ক খিংওয়াইনু মার্মা মীমার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অফিসের যাবতীয় কাজকর্ম স্যার নয় আমিই দেখাশোনা করি। এখানে আমরা সবাই এক’ কি বলবেন বলেন! আমি যা করেছি ম্যানেজার কথা অনুযায়ী কাজ করেছি।

সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, রুপসী পাড়া ইউনিয়নের নয়াপাড়া,মুরুং ঝিড়ি ও রুপসী পাড়াতে অধিকাংশ পুলু ঘর তৈরি নির্মানে বরাদ্দ পেয়েছিলেন। কিন্তু এই সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী ৪০ হাজার টাকা করে পেলেও উপকারভোগীদের পলুঘর নির্মাণের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রকৃত উপকার ভোগীদের বাদ দিয়ে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে স্বজনপ্রীতি করে এক পরিবারের ২ থেকে ৩ জন সদস্যকেও প্রকল্পের তালিকাভুক্ত করেছেন মাঠ কর্মী মোজাম্মেল হক। জনপ্রতি ৩ থেকে ৫ হাজার করে ফায়দা নেয়ার অভিযোগ করেন উপকারভোগীরা।

উপকারভোগীদের অভিযোগ, পলু ঘর বাবত বরাদ্দকৃত ৪০ হাজার টাকা পেতে মাঠকর্মীদের ২০ হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে হয়েছে তাদের। তবে নিজেদের ঘরের অংশ বিশেষ মেরামত করে দেখালেও হবে বলে জানিয়েছেন অফিসের লোকজন। এরই প্রেক্ষিতে অনেকেই গোয়ালঘর এবং রান্নাঘরকে সাময়িক পলু ঘর হিসেবে দেখিয়েছেন উপকারভোগীরা।

রেশম চাষী ছেনুয়ারা বেগম বলেন, পুলু ঘর নির্মাণের টাকা ৪০ হাজার পেয়েছি। মাঠ কর্মী নুরুল নিয়েছে ২০ হাজার আর আমাকে দিয়েছে ২০ হাজার। বাকি টাকা দিয়ে কীভাবে পলু ঘর নির্মাণ করবো?

আরেকজন উপকারভোগী মনোয়ারা বেগম বলেন, ৪০ হাজার টাকা কথা থাকলেও আমাকে এক টাকাও দেয়নি। টাকা দেওয়ার আগে মাঠ কর্মী বলেছে আমি নাকি রেশম চাষি না, পলু ঘর নির্মাণ করে কি করবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় ৬নং রুপসী পাড়া ইউপি চেয়ারম্যান সাচিং মারমা কাছে। তিনি এই প্রতিবেদকে বলেন, প্রকল্পের বরাদ্দ নিয়ে তারা আমাদের সাথে কোন সমন্বয় করেনি এবং স্বাক্ষর কিংবা সুপারিশ করতে আমরা টাকা নিয়ে থাকি সেসব রেকর্ড নাই।

তিনি আরো বলেন, রেজা ও রেশম বোর্ডের একটি মহিলা আছে খিংওয়াইনু মার্মা মীমা। তারা দুইজন যোগসাজশে এই পর্যন্ত রুপসী পাড়াতে ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা চারা বিতরণ করা কথা রয়েছে। কিন্তু এই চারা বিতরণ করেছে ১০ হাজার। আর বাকিগুলো চারা নিয়ে ৩৫ একর বাগান করেছে রেজা নামে এক ব্যক্তি। তাছাড়া তারা নামে বেনামে ব্যাংক থেকে টাকাগুলো তুলে সব টাকা আত্মসাৎ করেছে। অভিযোগ করেন ৫টি সম্প্রদায়ের মধ্যে শুধু একটি সম্প্রদায়ের মাঝে এসব অর্থ শেয়ার (বিতরণ) করেছে।

অভিযোগ স্বীকার করে প্রকল্পের ম্যানেজার ফেরদাউসুর রহমান বলেন, কিছুটা অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। তবে সরকারি প্রকল্পের টাকা উপকারভোগীদের না দিলে ফেরত চলে যাবে। তাই কোনমতে বিতরণ করে সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি প্রতিবেদককে টাকা দিয়ে ম্যানেজের চেষ্টা করে এসব বিষয়ে আর কথা না বলতে অনুরোধ জানান এই কর্মকর্তা ।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: নির্মাণ, পলু ঘর, বান্দরবান
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন