বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত রাজস্থলী উপজেলার কয়েকটি গ্রাম

fec-image

রাঙামাটি পার্বত্য জেলার রাজস্থলী উপজেলার সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে সেখান থেকে ৩ কিলোমিটারের অভ্যন্তরে থাকা গ্রামের বাসিন্দারা এখনও বিদ্যুতের আলো হতে বঞ্চিত। গ্রামের পাশে রয়েছে একটি উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাইমারি স্কুল।

রাজস্থলী হতে চন্দ্রঘোনা চট্রগ্রাম রাঙ্গামাটি চলাচলের একমাত্র রাস্তা রয়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় উপজেলার ২নং গাইন্দ্যা ইউনিয়নের গাইন্দ্যা পাড়া, খংসখই পাড়া, লংগদু পাড়া, মব্বই পাড়া, তুরগু পাড়া, গামারি বাগান, পৌয়তু পূর্নবাসন সহ প্রায় ৪ হাজার লোকের বসবাস। অতি পরিতাপের বিষয় যে ঐ এলাকার পাশে ইসলামপুর বিদ্যুৎ রয়েছে।তার কাছাকাছি পাড়াগুলোতে বিদ্যুৎ নেই।

উল্লেখিত পাড়াগুলোতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালিত টেকসই সামাজিক পাড়া কেন্দ্র , বৌদ্ধ মন্দির এতিম ছাত্রাবাস। বিদ্যুৎ না থাকায় ডিজিটেল যুগে স্কুলগুলোতেও ব্যাহত হচ্ছে আধুনিক শিক্ষা কার্যক্রম।

অপর দিকে মারমা, তনচংগ্যা, ত্রিপুরা, খিয়াং অধ্যুষিত এই দুই ইউনিয়নের মানুষ সভ্যতা থেকে এখনও অনেক দূরে। সড়ক যোগাযোগ নেই বললেই চলে, হাটাপথই এই উপজেলার মানুষের একমাত্র ভরসা। নেই বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক এই উপজেলা ঘিরে পর্যটন শিল্প বিকাশের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু যোগাযোগ দুর্গমতা না কাটলে তা সুদূর পরাহত। প্রকৃতির অপরূপ প্রতিচ্ছবি আর মাটির সোঁদা গন্ধে নিমিশেই আপনার সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। যে দিকে থাকাবেন শুধু উচু নিচু পাহাড় আর পাহাড়।

স্থানীয়রা উৎপাদন করে প্রচুর পরিমানে নানা জাতের ফল ও শাক সবজি। কিন্তু এর কোনোটাই বাইরে বাজারজাতের সুযোগ নেই; সব খেয়ে নেয় চাষিরা নিজেরাই। এই তাজা সবজি, আর প্রকৃতির নির্মল বাতাসই স্থানীয়দের স্বাস্থ্য সতেজ রাখতে সাহায্য করে। কারণ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনোকালেই তেমন ডাক্তার থাকেনি। বর্ষা মৌসুমে সামান্য কিছু সবজি ও ফল বাইরে থেকে আসা পাইকারেরা সংগ্রহ করলেও তার ব্যবসায়িক মূল্যায়ন উল্লেখ করার মতো নয়।

সে স্বাধীনতার পূূবে ১নং ঘিলাছড়ি ইউনিয়নে গড়ে উঠেছিল রাজস্থলী বাজার। বুধবার দিন বসে সাপ্তাহিক হাট। তখন লোকে গিজগিজ করে বাজারটি। নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের পসরা নিয়ে বাজারে বসে জুমিয়ারা। নানা রকম ফল, সবজি বিক্রি করে তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী কিনে নিয়ে যায়। অর্ধশতাব্দী পার হয়ে গেলেও পাহাড়ে অন্তত ৪ হাজার মানুষের বসবাস। তাদের মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় যেমন পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তেমনি বিদ্যুৎ না থাকায় টেলিভিশন দেখারও সুবিধা নেই। সরকারের দেওয়া ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা থেকে অনেক দূরে এই ৪ হাজার মানুষ। সোলারের সাহায্যে বর্তমানে কিছু এলাকায় টেলিভিশন দেখানো হচ্ছে।

স্থানীয়দের দাবি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিটি গ্রাম শহর হতে দেরি হলেও আপাতত তারা যেন মোবাইল নেটওয়ার্ক, বিদ্যুৎ ও শিক্ষার সুযোগটুকু পায়।

গাইন্দ্যা গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি বলেন, ‘এই গ্রামের বাসিন্দাদের আধুনিক সুযোগ সুবিধার জন্য বিদ্যুতের কোন বিকল্প নেই। বিদ্যুতের জন্য ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনাসহ সবকিছুর জন্য সমস্যা পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীর।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এলাকার জনসাধারণের মোবাইল চার্জ দিতে হলেও পার্শ্বর্বতী ইসলামপুর বাজার অথবা বাঙালহালিয়া বাজারে যেতে হয়।

গাইন্দ্যা গ্রামের ৯নং ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা ও রাজস্থলী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হলাগ্য মারমা বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান উবাচ মারমার মাধ্যমে ‘সমস্যা সমাধানের লক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণ উন্নয়ন প্রকল্প, রাঙ্গামাটি বরাবরে আবেদন করা হয়েছিলো। ওই প্রকল্পের অধীন থাকা চন্দ্রঘোনা আবাসিক সহকারি প্রকৌশলী আশফাকুর রহমান মুজিব সরেজমিনে এসে দেখে গেছেন। কিন্তু অধ্যাবধি কোন সুফল পাওয়া যায়নি।’

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী মুজিববর্ষ উদযাপনের মধ্যে দিয়ে সমগ্র বাংলাদেশে তথা গ্রামের আনাচে কানাচে বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দিচ্ছে সরকার। এ আশায় প্রহর গুনছেন ঐ দুর্গম পার্বত্য এলাকার প্রায় ৪ হাজার লোকের। তাই আমরা এলাকাবাসী আশা করছি মন্ত্রী দীপংকর তালুকদার সাংসদের মাধ্যমে আমাদের এলাকায় অতিদ্রুত বিদ্যুৎ সেবা পৌছে দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। শুধু তাই নয়, রাজস্থলী উপজেলার ১নং ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়, মাঘাইন পাড়া, ঝান্দিমইন, কুইক্যাছড়ি, মুবাছড়ি, ঘিলামুখ, অপর দিকে গাইন্দ্যা ইউনিয়নের চুশাক পাড়া, মনজাই পাড়া সহ বিদ্যুৎ বঞ্চিত পাহাড়ের মানুষ অন্ধকারে জীবন যাপন করছে। সরকারের উন্নয়নে পাহাড়ে জীবনমান রক্ষায় দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের লক্ষে জোর দাবি জানান ভুক্তভোগী বিদ্যুৎ বঞ্চিত এলাকাবাসী।

এ ব্যাপারে চন্দ্রঘোনা বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী আসফিকুর রহমান মুজিবের সঙ্গে মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মুজিববর্ষের ভেতরে (পরবর্তী বাজেটে) ওই এলাকায় বিদুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দ্রুত বিদ্যুৎ যাতে এলাকা এলাকায় পৌছে দিতে পারি সে ব্যবস্থা করবো উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্যুৎ, রাজস্থলী
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন