বান্দরবানের থানচিতে খাদ্যঘাটতি মোকাবেলায় সেনাবাহিনীর উদ্যোগে হেলিকপ্টারযোগে চাল বিতরণ
স্টাফ রিপোটার:
বান্দরবানের থানচির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দুর্গম এলাকায় জুমচাষিদের খাদ্যঘাটতি মোকাবিলায় রোববার সকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্যোগে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারযোগে খাদ্যশস্য পাঠানো হয়েছে। খাদ্য ঘাটতিতে পড়া জুম পরিবারগুলোর মাঝে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খাদ্যশস্য সরবরাহ করা হবে জানিয়েছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক।
জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক বলেন, জেলার কোথাও খাদ্যাভাব নেই। প্রতিটি দোকানে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল মজুদ রয়েছে। গত বর্ষা মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জুমের ফলন ভালো না হওয়ায় তাদের খাদ্যঘাটতি দেখা দিয়েছে। সেটি পূরণের জন্য খাদ্যশস্য পাঠানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৪৬ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে আরও ১০০ টন চাল বরাদ্দ এসেছে। খাদ্যঘাটতিতে পড়া বসবাসকারীদের আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খাদ্যশস্য সরবরাহ করা হবে।
থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনোয়ার হোসাইন বলেন, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকা তিন্দু ইউনিয়নের জিন্নাহপাড়া, দলিয়ন বমপাড়া ও রেমাক্রি ইউনিয়নে বড়মদ এলাকায় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে ৩৬০০ কেজি পৌঁছেছে। সোমবার আরো ৬৪০০ কেজি চাল পৌছার কথা রয়েছে।
এ ছাড়াও সাঙ্গু নদীর তীরের কাছাকাছি এলাকায় বসবাসকারীদের জন্য নৌকায় করে ১২ টন চাল পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, রবিবার থানছি সদরে তিন্দু এলাকার লোকজনের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়েছে। থানচি সদর ও বলীপাড়া ইউনিয়নের কিছু পরিবারে অভাব রয়েছে। সেখানেও আ টটন চাল বিতরণ করা হবে।
খাদ্য ঘাটতিতে পড়া ২ হাজার ৫০ পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। রেমাক্রি ও তিন্দু ইউনিয়নে এর ইমধ্য ৩৮ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। জুন মাসের জন্য ৩৬ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
তিনি আরো বলেন, মঙ্গলবার ত্রাণ ও পূনর্বাসন মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসন থেকে পৃথক তদন্তদল খাদ্য ঘাটতি এলাকা পরিদর্শন এবং ভবিষ্যৎ খাদ্যঘাটতি মোকাবেলা চিহ্নিতকরণ সুপরিশমালা তৈরী করার কথা রয়েছে।
এদিকে, জেলা প্রশাসন থেকে প্রথম দফা বরাদ্দ দেওয়া ১৬ মেট্রিক টন চাল থেকে রেমাক্রি ইউনিয়নে বড় মদক এলাকায় ৩০০ পরিবারের মধ্যে ২০ কেজি করে মোট ৬ মেট্রিকটন চাল বিতরণে অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ করেছে প্রুসাঅং পাড়ার কারবারি মংছো মারমা।
তিনি অভিযোগ করেন, ২০ কেজির বদলে তার গ্রামে আটটি পরিবারকে ৪ কেজি ৭৫০ গ্রাম করে চাল দিয়েছে। তার পাশের গ্রাম উষামং পাড়াতে পাঁচটি পরিবারেও একই পরিমাণে চাল দিয়েছে।
“তবে বড়মদক ভেতর পাড়াতে ৬ কেজি করে দিতে দেখেছি। এ ব্যবধানটা কেন জানি না।”
তবে থানচি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, বিষয়টি খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, তালিকাভুক্ত কিছু পরিবার চাল নিতে আসেনি। তাই বাইরে কিছু মানুষকে ত্রাণের চাল দেওয়া হয়েছে। এ কারণে কম দেওয়া হয়েছে।
রেমাক্রি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুইসুইথোয়াই মারমা বলেন, এই মৌসুমি সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হলে কর্মসংস্থান, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা প্রয়োজন।
থানচি উপজেলার জনপ্রতিনিধিরা বলেছেন, দুর্গম এলাকায় সড়ক যোগাযোগ না থাকায় তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে না পাড়ায় ঐ এলাকার জুমচাষিরা প্রতিবছর এ সময়ে কম বেশী খাদ্য-সংকটে পড়েন। জুমচাষের পাশাপাশি আয়ের বিকল্প উপায় খুঁজে বের করা দরকার।
তিন্দু ইউপি চেয়ারম্যান মং প্রু মারমা বলেন, যোগাযোগের বিচ্ছিন্নতার কারণে দুর্গম এলাকাগুলোতে কর্মসংস্থান নেই এবং কর্মসংস্থান না থাকায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও নেই। বাজারে পর্যাপ্ত চালের সরবরাহ রয়েছে।