মণিপুরের আঁচ মিজোরামে, মেইতিদের রাজ্য ছাড়তে বলল ‘পামরা’

fec-image

ভারতের মণিপুরে দুই নারীকে বিবস্ত্র করে রাস্তায় হাঁটানো ছবি সামনে আসার পর থেকেই নতুন করে অশান্তির ছড়াতে শুরু করেছে মণিপুরের প্রতিবেশী রাজ্য মিজোরামে। সেখানে বসবাসকারী মেইতি সম্প্রদায়ের মানুষদের রাজ্য ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছে সাবেক জঙ্গি সদস্যদের সংগঠন পিস অ্যাকর্ড এমএনএফ রিটার্নিজ অ্যাসোসিয়েশন (পামরা)।

শুক্রবার পামরার এক বিবৃতিতেবলা হয়, দুই নারীকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর ঘটনায় মিজো যুবকদের মধ্যে যথেষ্ট ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। মিজোরামের পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং মণিপুরে দুর্বৃত্তদের দ্বারা সংঘটিত বর্বর ও জঘন্য কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে মণিপুরের মেইতি জনগণের জন্য মিজোরামে বসবাস করা আর নিরাপদ নয়।

এতে আরও বলা হয়েছে, মিজোরামের সব মেইতি জনগণকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই তাদের নিজ রাজ্য (মনিপুর) চলে যাওয়ার জন্য আবেদন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে মেইতিদের ওপর কোনো অত্যাচারের ঘটনা ঘটলে, এর জন্য তারা নিজেরাই দায়ী থাকবে।

এই বিবৃতির পরই মিজোরামের রাজধানী আইজলে মেইতিদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে রাজ্য সরকার। এছাড়া সেলেশই এলাকায় অবস্থিত ভেটি কলেজ, তানহারিল এলাকায় অবস্থিত মিজোরাম ইউনিভার্সিটিসহ বেশকিছু এলাকায় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোড়দার করা হয়েছে। পাশাপাশি বিশেষ বিমানে করে মেইতি সম্প্রদায়ের মানুষদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনার চিন্তাভাবনা করছে মণিপুর সরকার। কারণ মণিপুর এবং দক্ষিণ সমের কয়েক হাজার মেইতি সম্প্রদায়ের মানুষ মিজোরামে বসবাস করে আসছে। যদিও কখন এই ইভাকুয়েশন প্রক্রিয়া চালু হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

এদিকে, শুধু ন্যাকেড প্যারেডের ঘটনাই নয়। মণিপুরের পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ার পর থেকেই রাজ্যটিতে ঘটে যাওয়া অকল্পনীয় নৃশংসতার আরও একাধিক খবর সামনে আসছে। জানা যায়, গত ২৮ মে মণিপুরের কাকচিং জেলার সিরও গ্রামে প্রয়াত ভারতের এক স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্ত্রীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনা ঘটেছে। ঘরের ভেতর ওই বৃদ্ধাকে তালা বন্ধ করে রেখে বাইরে থেকে অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এই ঘটনায় স্থানীয় থানায় অভিযোগও করা হয়েছে।

৮০ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধা বিনোদেবীর স্বামী ছিলেন প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী এস চূড়াচাঁদ সিংহ। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামের হাতে সম্মানিত হয়েছিলেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সিরোগ্রামের চারপাশে তখন বোমা-গুলির লড়াই, একাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। তারই মধ্যে একদল অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত বিনোদেবীর বাড়িতে চড়াও হয়। দুর্বৃত্তরা প্রথমে বাইরে থেকে ঘরের তালা লাগিয়ে দেয়। এরপরই অগ্নিসংযোগ ঘটানো হয়। পাশাপাশি গুলিও চালানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে মণিপুরের এমন ঘটনায় উদ্বেগে রয়েছেন কলকাতার বিভিন্ন ফুটবল ক্লাবে খেলা সেই রাজ্যের বেশকিছু তারকা ফুটবলাররা। রীতিমত উৎকণ্ঠায় দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। জানা গেছে, ভারতের জাতীয় ফুটবল দলের তারকা ফুটবলার চিঙ্গলেন সানার বাড়িতেও অগ্নিসংযোগ ঘটানো হয়েছে।

কলকাতার মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কয়েকজন ফুটবলার তাদের গোটা পরিবার নিয়ে মণিপুর থেকে কলকাতায় চলে আসতে বাধ্য হয়েছে। আপাতত রাজারহাট, সিআইডি রোডের ফ্ল্যাটেই সেই সব ফুটবলার ও তাদের পরিবারের সদস্যের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রায় আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে মণিপুরের বিভিন্ন থানায় ধর্ষণ, অপহরণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগ, অস্ত্র লুঠের একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। সহিংসতায় এখনো পর্যন্ত ১৩০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ঘরছাড়া হাজার হাজার মানুষ। মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় নারী কমিশনও। তবে এত ঘটনার পরেও প্রশ্নবিদ্ধ পুলিশের ভূমিকা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: মণিপুর, মিজোরাম, মেইতি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন