মহেশখালীর রাখাইন সম্প্রদায়ের জীবন-যাপন

alamincox_0007_1271751758_1-image

ডেস্ক নিউজ:

কক্সবাজার: রাখাইন (রাক্ষাইন)  একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আরাকান রাখাইনদের আদি বাসভৃমি। নৃতাত্তিক বিচারে এরা মঙ্গোলীয় মহাজাতির অšতর্ভুক্ত  ভোট-বর্মি জনগোষ্ঠীর ছোট শাখা। কারও কারও মতে রাখাইন উপজাতি তাদের আদি প্রতিবেশী মারমাদের সমগোত্রীয়। বাঙ্গালিদের নিকট এরা মগ নামে পরিচিত, অনেকে এদের বার্মিজ নামেও আখ্যায়িত করে থাকে। রাখাইনদের দেহ বৈশিষ্ট মোটামুটি ভাবে মঙ্গোলীয় দের মতো, যেমন তাদের করোটি গোল, নাক চ্যাপ্টা, উচ্চতা মাঝারি থেকে খর্বতার দিকে, চুল কালো এবং গায়ের রং হালকা বাদামি। রাখাইনদের অংশবিশেষ পনেরো শতক থেকে চট্রগ্রামের রামু ও সংলগ্ন এলাকায় বসতি শুরু করলেও আঠারো শতকে আরাকানের রাজনৈতিক দূর্যোগ তাদের অনেককেই স্বদেশভৃমি ত্যাগে বাধ্য করে।

তারা ক্রমান্বয়ে চট্রগ্রাম ও পার্বত্য চট্রগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করতে থাকে। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে রাখাইন জনসংখ্যা প্রায় সতের হাজার, যার শতকরা ৮০ ভাগ বাস করে কক্সবাজার এলাকায়।ধর্মবিশ্বাসে বৌদ্ধ হলেও রাখাইনদের মধ্যে আদিবাসী সুলভ সংস্কার, যাদু ও অতিপ্রাকৃত শক্তিতে বিশ্বাস কমবেশি উপস্থিত। এরা সহজ সরল সাদামাটা জীবনযাত্রায় অভ্যস্থ। ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে গৌতম বুদ্ধের জন্মবার্ষিক অনুষ্ঠান গুরুত্বপূর্ন। এরা বৈশাখী, মাঘী ও প্রবারণা পূর্নিমাসহ বসন্ত  উৎসব পালন করে। সংক্রান্তিতে তিনদিনব্যাপী ”সাংগ্রাই” উৎসব  এদের সবচেয়ে বড় সামাজিক অনুষ্ঠান।

মহেশখালীতে বর্তমানে বড় রাখাইন পাড়া, ছোট রাখাইন পাড়া, ঠাকুরতলা ও মুদিরছড়া মোট ৪টি গ্রামে আনুমানিক ৩৫০ টি রাখাইন পরিবার বসবাস করছে। মোট রাখাইন জনগোষ্ঠী সংখ্যা ১৮০০ জন (প্রায়)।হস্তচালিত তাঁত সম্বন্ধে ধারণা এবং বর্তমান অবস্থা।  হস্ত চালিত তাঁত বাংলার একটি ঐতিহ্য। আবহমান কাল ধরে হস্তচালিত তাঁতের মাধ্যমে বাংলার গুণী পোশাক শিল্পীরা যে ঐতিহ্যবাহী কাপড় তৈরী করছে তার সুনাম দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ভীনদেশে ও ছড়িয়ে পড়েছে । মহেশখালীর প্রেক্ষাপটে এই শিল্পের একমাত্র উত্তরাধীকারী হল রাখাইন জনগোষ্টিরা । হস্তচালিত তাঁতের মাধ্যমে বিভিন্ন রকমের শাল,বেডসিট,বিভিন্ন গজ কাপড় দীর্ঘদিন ধরে তৈরী করছে যার সুনাম দেশেবিদেশে ছড়িয়ে আছে ।

একজন দক্ষ তাঁিত দিনে ৫-৬ গজ কাপড় বুনতে পারে। হস্ত চালিত তাঁেতর প্রধান উপকরন হল সুতা ও রং। সুতা ২ ধরনের টানা সুতা ও বুনা সুতা সুতা প্যাঁচানের জন্য একটি ড্রামের প্রয়োজন হয়। একটি ড্রামের সহায়তায় ৪-৫টি তাঁত যন্ত্র চালানো যায়। কিন্তু বর্তমানে এই শিল্প অনুন্নত বিপনন ব্যবস্থা, সুষ্ঠ রক্ষনাবেক্ষন, উপকরনের অভাব, কাপড় বুনার প্রয়োজনীয় সংখ্যক অর্ডার না পাওয়া প্রভৃতি প্রতিকুলতার কারনে মহেশখালীতে তাঁত শিল্প হারিয়ে যাচেছ । যার প্রমান স্বরূপ সমগ্র মহেশখালীতে মাত্র একটি হস্তচলিত তাঁত রয়েছে । এই শিল্পের শিল্পীরা পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় যোগ দিচ্ছে ।রাখাইন সম্প্রদায় প্রধানত কৃষিজীবী। এরা কাপড় বোনা, লবণ বা গুড় তৈরির মতো নানাধরনের কাজও করে।

কৃষিকাজে নারীপুরূষ উভয়ে অংশ নেয়। তবে গরূমহিষ বা হাঁসমুরগি প্রতিপালনে মেয়েরা অগ্রণী ভৃমিকা নিয়ে থাকে। কৃষিকাজ ব্যাতিত কেউ কেউ অবস্থানুযায়ী জীবিকার তাগিদে ছোটখাটো ব্যাবসায় বা শিক্ষকতার কাজ করে। নাপ্পি, ভাত, মাছ, ডাল, সাধারণ তরিতরকারি রাখাইনদের নিয়মিত খাদ্য। তবে শƒকুরের মাংস বা শুঁটকি তাদের প্রিয় আহার্য, উৎসব-অনুষ্ঠানে নকশি পিঠা ও পায়েস-মিষ্টান্ন তৈরির প্রথা প্রচলিত। রাখাইন পুরূষ লুঙ্গি-ফতুয়া এবং মেয়েরা কাজ করা লুঙ্গি ও ব্লাউজ পরে থাকে। এছাড়া মেয়েরা গায়ে নানা ধরনের অলংকার ও মাথায় ফুল পরতে ভালবাসে। সাধারণত অভিভাবকদের ব্যবস্থামতে বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়, তবে যুগের প্রভাবে প্রেমজ বিয়েও স্বীকৃত।

রাখাইন সমাজের পণ প্রথা অনুসারে বিয়েতে পুরুষদের পণ দিতে হয় যার কারনে সমাজে অবিবাহিত নারীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সামাজিক সমস্যা যেমন: বিবাহ ও জন্মহার হ্রাস প্রভৃতি দেখা দিচ্ছে।  পিতা পরিবার-প্রধান হলেও সমাজে নারীপুরষের সমান অধিকার স্বীকৃত। সম্পত্তীতে পুরুষ-কন্যার সমান অধিকার। রাখাইনদের মধ্যে আদিবাসীসুলভ সারল্য, মানবিক মূল্যবোধ, ভাগ্যনির্ভরতা ও জাতিগত মর্যাদাবোধ অত্যন্ত্য প্রবল।

রাখাইনদের মাতৃভাষা ভোট-বর্মি ভাষাগোত্রের অন্তর্গত। রাখাইন শিশুর শিক্ষা শুরু হয় বৌদ্ধ  মাঠের পাঠশালায় (কিয়ং)। সেখানে ভাষা ও ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হয়। মহেশখালীর প্রেক্ষাপটে রাখাইন জনগোষ্টির  শতকরা ৪০ ভাগ দরীদ্র বা দারীদ্র সীমার নীচে বসবাস করে । মহেশখালীর রাখাইন জনগোষ্ঠীর মূল পেশা: কাপড়ের ব্যবসা, স্বর্ণ ব্যবসা,মহাজনী, দর্জি, হস্ত চালিতশিল্প, নাপ্পিও মাছ ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।

সুত্র: ইন্টারনেট

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন