মাতামুহুরী নদীতে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর, ড্রেজিং জরুরী

মাতামুহুরি

লামা(বান্দরবান) প্রতিনিধিঃ

লামা ও আলীকদমের বুক চীরে প্রবাহিত মাতামুহুরী নদীর বুকে জেগে উঠেছে অসংখ্য ছোট-বড় চর। ফলে মাতামুহুরী বুকে নৌযান চলাচল, কাঠ ও বাঁশ পরিবহনে মারাত্বক সংকট দেখা দিয়েছে।

এছাড়াও আসন্ন বোরো ও রবিশস্য মৌসুমে পানি সংকটের আশংকা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। নদীর পানি কমে যাওয়ায় বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্য প্রজাতিও বিলুপ্ত হতে চলেছে। ফলে সহস্্রাধিক জেলে পরিবারে হতাশা বিরাজ করছে। মাতামুহুরী নদীর নাব্যতা পুনরুদ্ধারে আলীকদম সদর থেকে লামা পৌর এলাকার শেষ সীমানা পর্যন্ত ড্রেজিং জরুরী হয়ে পড়েছে।

খরস্রোতা মাতামুহুরী নদীর উৎপত্তি আলীকদম উপজেলা সদর থেকে ৬০-৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তবর্তী একটি পাহাড়ের পাদদেশে। পার্বত্য লামা-আলীকদম উপজেলায় সভ্যতার সূচনা ঘটেছিল মূলত: এ নদীকেই ঘিরেই। উৎপত্তিস্থলে থেকে সর্পিল গতিতে একেবেঁকে নদীটি পশ্চিমমুখী বাঁক নিয়ে আলীকদম-লামা ও চকরিয়া উপজেলার বুক চিরে প্রবাহিত হয়ে মিশেছে বঙ্গোপসাগরে।

আলীকদমের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আলীমুদ্দিন জানান, ১৯৮০-৮৫ সালেও মাতামুহুরী নদীর গভীরতা ছিল ৫০-৬০ ফুট। প্রস্থ ছিল ৫০০-৭০০ মিটার। কিন্তু নদীর সাথে সংযোগকারী ঝিরি ও খালগুলি থেকে নির্বিচারে পাথর আহরণের কারণে পানির উৎস হারিয়ে গেছে। ফলে গত ৫-৭ বছরে ভরাট হয়ে এ নদীর গভীরতা ১৫-২০ ফিটে চলে এসেছে। দু’পার ভেঙ্গে গিয়ে নদীর প্রস্থ দাঁড়িয়েছে ১০০০-১২০০ মিটারে। বর্তমানে নৌযান চলাচল করছে মাত্র ৪-৫ ফিট পানির মধ্যে দিয়ে। বর্ষা শেষ না হতেই নদীর বুকে জেগে উঠে ছোট-বড় অসংখ্য চর।

প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে লামা ও আলীকদম উপজেলার কয়েক হাজার চাষী মাতামুহুরী নদীর পানি দিয়ে জমিতে সেচ দেন। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চাষীরা রবিশস্য ও বোরো চাষে নির্দিষ্ট স্থান বা কুম থেকে আগের মত পানি পান না। নির্দ্ধিষ্ট স্থান বা কুমের পানি দিয়ে চাষাবাদ করতে গেলে খরচ বাড়বে দ্বিগুণ।

জানা গেছে, মাতামুহুরী নদীর পানি দিয়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়ে থাকে। তাছাড়া এ নদী দিয়ে কাঠ, বাঁশ ও বিভিন্ন মালামাল চকরিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আনা-নেয়া হয় খুব কম খরছে। এবার এ পথে আন-নেয়া বন্ধ হওয়ার আশংকা রয়েছে। বিশেষ করে লামা বনবিভাগের বাঁশ পরিবহনে বিপাকে পড়তে হতে পারে ইজারাদারকে। নদী দিয়ে বাঁশ পরিবহন করে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব পাচ্ছে লামা বনবিভাগ, লামা পৌরসভা ও বান্দরবান জেলা পরিষদ।

স্থানীয়রা জানান, মাতামুহুরীর নদীর মাছ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে লামা ,আলীকদম ও চকরিয়া উপজেলার সহস্রাধিক জেলে পরিবার। নদী ভরাট হওয়ার মৎস্য শুন্যতা দেখা দিয়েছে নদীতে। ফলে তাদের মাঝে বিরাজ করছে হতাশা। নদী ভরাট হওয়ার পেছনে ব্যাপক হারে পাহাড় কাটা, নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, পাহাড় ও ঝিরি খুঁড়ে অবাধে পাথর উত্তোলন ও মাতামুহুরী নদীর তীরে (খাস ভুমি) ব্যাপক হারে তামাক চাষকে দায়ী করছেন এলাকার সচেতন মহল।

তারা বলছেন, এ সমস্ত কারণে মাটির উপরিভাগ নরম হয়ে বৃষ্টির পানির সাথে মাটি এসে মাতামুহুরী নদী ভরাট হয়ে গেছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন