মাতামুহুরী রেঞ্জে নিলামের পরিবর্তে দাখিলায় বাঁশ সরবরাহের দাবী

Bemboo

আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি :

বান্দরবান জেলাধীন লামা বন বিভাগের মাতামুহুরী রেঞ্জের বাঁশমহাল নিলামের পরিবর্তে দাখিলার মাধ্যমে বাঁশ সরবরাহের দাবী উঠেছে। এর মাধ্যমে রাজস্ব আয় বাড়বে। পাশাপাশি বাঁশ নির্ভর শ্রমজীবিদের অর্থনৈতিক উন্নতি হবে বলে দাবী স্থানীয় বাঁশ-বেত ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাতামুহুরী রেঞ্জের আয়তন ১ লক্ষ ২ হাজার ৮৫৪ একর। বিশাল এই বনভূমি জুড়ে রয়েছে বাঁশ বাগান। বিশাল এ বনভূমির আনাছে-কানাছে সুদীর্ঘকাল থেকে বসবাস করছে মুরুং, মার্মা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী। এসব জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি বাঙ্গালীরা মাতামুহুরী রেঞ্জের বাঁশ শ্রমিক হিসেবে কাজ করে রুজি-রোজগার করে।

স্থানীয় বাঁশ-বেত ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মোঃ গিয়াস উদ্দিন জানান, মাতামুহুরী রেঞ্জে প্রতিবছর কমপক্ষে ৫০ লক্ষ বাঁশ উৎপাদন হয়। বন বিভাগ এলাকাভিত্তিক বাঁশমহাল নিলাম দেয়। এতে সরকার তুলনামূলক কম রাজস্ব পায়। তার মতে নিলাম না দিয়ে দাখিলার মাধ্যমে বাঁশ সরবরাহের অনুমতি দিলে সরকার লাভবান হবে। পাশাপাশি বাঁশনির্ভর শ্রমিকরা উপকৃত হবে। বাঁশমহাল নিলামের ফলে কার্যত মাতামুহুরী রেঞ্জের বাঁশসম্পদ একটি প্রভাবশালী মহলের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে। বাঁশ শ্রমিক ও স্থানীয় ক্ষুদ্র বাঁশ ব্যবসায়ীরা নিলাম গ্রহীতা প্রভাবশালীদের কাছে জিম্মি হন।

স্থানীয় বাঁশ ব্যবসায়ী আবুল হাসেম বলেন, প্রচলিত বাঁশ মহাল নিলামে কঠিন শর্তের কারণে ক্ষুদ্র বাঁশ ব্যবসায়ীরা অংশ নিতে পারে না। এতে গুটিকয়েক ব্যক্তি লাভবান হয়। নিলাম না দিয়ে দাখিলা (টিপি)’র মাধ্যমে বাঁশ সরবরাহ করে সরকার আরো বেশী রাজস্ব বেশী পাবে।

দুর্গম এলাকার বাঁশ শ্রমিক কাইরী মুরুং, ধুংশো মার্মা ও লক্ষিজন ত্রিপুরা বলেন, পাহাড়ে বেশিরভাগ লোক বনজ-সম্পদ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। বাঁশ মহাল নিলামের নামে বাঁশ শ্রমিকরা নিলাম গ্রহীতাদের কাছে দায়বদ্ধ হয়ে পড়ে। নিলাম না দিয়ে দাখিলার মাধ্যমে বাঁশ সরবরাহ করা হলে তারা উপকৃত হবে।

স্থানীয় জেএসএস নেতা বাচিংনু মারমা ও থোয়াইম্রো মারমা বলেন, বাঁশমহাল নিলামের চেয়ে দাখিলার মাধ্যমে বাঁশ সরবরাহের অনুমতি দিলে শ্রমিকরা উপকৃত হবে। গত অর্থবছরে বাঁশমহাল নিলাম না হওয়ায় সরকার প্রয়োজনীয় রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে মাতামুহুরী রেঞ্জে বাঁশমহাল নিলাম থেকে ৬১ লক্ষ ৩৮ হাজার ১৬ টাকা রাজস্ব আদায় হয়। প্রতি চার বছর পরপর বাঁশমহাল নিলামের জন্য বন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয়। ২০১৩ সালে জুন মাসে ৪ বছর শেষ হয়েছে। মহাল নিলামে মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী অনুমতি পেতে দেরী হওয়ায় ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে বাঁশমহাল নিলাম দেয়া হয়নি।

এদিকে, মহাল নিলাম না হলে বাঁশ কাটা থেমে থাকেনি। ফলে বন বিভাগ পড়ে বিপাকে। জব্দ করা হয় কয়েক লক্ষ বাঁশ। স্থানীয়দের মতে, নিলাম প্রক্রিয়ার চেয়ে দাখিলার মাধ্যমে এসব বাঁশ সরবরাহের অনুমতি দিলে ভাল হতো। বন বিভাগ নিলাম প্রক্রিয়ার ঝামেলাও এড়াতে পারতো।

আলীকদম বাঁশ-বেত সমবায় সমিতির ৩৬ জন সদস্যের স্বাক্ষরিত এক আবেদনে দাবী করা হয়, নিলামের পরিবর্তে মাতামুহুরী রেঞ্জে উৎপাদিত বাঁশ দাখিলার মাধ্যমে অনুমতি দিলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে। পাশাপাশি শ্রমজীবি মানুষ উপকৃত হবে। এ রেঞ্জে যে পরিমাণ বাঁশ উৎপাদন হয় নিলামে এরচেয়ে কম বাঁশ দেখানো হয়। ফলে রাজস্ব আয় কমে যায়। দাখিলার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট রেঞ্জের আওতায় বাঁশ সরবরাহ হলে রাজস্ব বৃদ্ধি সম্ভব হবে।

সমিতির নেতাদের অভিযোগ, আলীকদমে নিবন্ধিত বাঁশ ব্যবসায়ী সমিতি থাকলেও চকরিয়ার কতিপয় বাঁশ ব্যবসায়ীরা আদিপত্য বিস্তার করছে। এতে বাঁশ শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা হয়রানী হচ্ছে।

মাতামুহুরী রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল করিম বলেন, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বন বিভাগ সদয় আছে। বিষয়টি বন বিভাগের উর্ধ্বতন মহলের বিবেচনার বিষয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন