মাতারবাড়ি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প: জেলা প্রশাসকসহ ২৮জনের বিরুদ্ধে মামলা

স্টাফ রিপোর্টার:
কক্সবাজারের মহেশখালী মাতারবাড়ি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণে ভূয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ২৩কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোং বাংলাদেশ লি: এর পিডি সহ ২৮জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

বুধবার মাতার বাড়ির বাসিন্দা এ.কে.এম কায়সারুল ইসলাম বাদী হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার আসামীরা হলেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো:রুহুল আমিন, সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো:জাফর আলম, সাবেক জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা আরেফিন আক্তার নুর, মহেশখালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোং বাংলাদেশ লি: এর পিডি ইঞ্জিনিয়ার মো:ইলিয়াছ, জেলা ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সাবেক প্রধান সহকারি আবুল কাশেম মজুমদার, সাবেক কাননগো আবদুল কাদের, সাবেক সার্ভেয়ার ফখরুল ইসলাম ও বাদশা মিয়া, মহেশখালী মাতার বাড়ী এলাকার বাসিন্দা রফিকূল ইসলাম, মহিবুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, মোহাম্মদ হারুন, জমির উদ্দিন, এরফান, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, মো: সেলিম, জি.এ ছমি উদ্দিন, নুর আহমদ, মো:নুরুল ইসলাম, আবুল বশর, আশরাফ আলী, দানু মিয়া, মির কাশেম, মো:সেলিম উদ্দিন, রিদুয়ান, আনিছুর রহমান ও ছকি আলম। বিজ্ঞ বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ২০জানুয়ারীর মধ্যে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য দূর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর কক্সবাজারের দায়িত্বপ্রাপ্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট মো:আবদুর রহিম।

বাদী আবেদনে অভিযোগ করেছেন, মহেশখালী দ্বীপের মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহনের ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়ার নামে ঘটেছে এই হরিলুটের ঘটনা। সরকার ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে মাতারবাড়ী দ্বীপে দেশের সর্ববৃহৎ কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রকল্পটির জন্য ১ হাজার ৪১৪ একর জমি হুকুম দখল করা হয়। এই বৃহৎ বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা। জাইকা এ প্রকল্পে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়ে অর্থায়ন শুরু করে। কয়লা বিদ্যূৎ প্রকল্পটির জমি হুকুম দখলের পর মাতারবাড়ীর কিছু লোক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের বিরোধিতা শুরু করে দেয়।

পরবর্তীতে প্রকল্পের ক্ষতি পুরণের টাকা মূল্যায়ন করতে গিয়েই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা জোট বেঁধে জালিয়াতির কাজে নেমে পড়ার অভিযোগ উঠে। দ্বীপের চিংড়ি প্রকল্পের মালিকদের নানা ভাবে প্রলোভন দিয়ে ভুয়া কাগজ সৃজনের মাধ্যমে মৎস্য কর্মকর্তাদের দিয়ে ‘অবাস্তব রিপোর্ট’ তৈরী করে হাতিয়ে নেয়া হয় কোটি কোটি টাকা। চিংড়ি প্রকল্পের প্রতি কেজি চিংড়ির মূল্য ৮০০ টাকা হিসাবে প্রতিটি চিংড়ি প্রকল্পে চিংড়ির মওজুদ দেখানো হয় অস্বাভাবিক হারে।

মহেশখালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ ধরণের অবাস্তব প্রতিবেদন দেয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। আর এরকম অবাস্তব প্রতিবেদনের ফলে একটি চিংড়ি প্রকল্পে যেখানে এক কোটি টাকার ক্ষতি পুরণ হওয়ার কথা সেখানে তারও কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। মাতারবাড়ীর জালিয়াত চক্রটি নিজেদের কোন জমি এবং চিংড়ি প্রকল্প না থাকা সত্বেও সম্পূর্ণ জালিয়াতির মাধ্যমেই এই বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মহেশখালীর মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১ হাজার ৪১৪ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ ২৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তার মধ্যে ৪০ কোটি টাকার চেকও বিতরণ করা হয়। কিন্তু প্রাথমিক অনুসন্ধানে ২৩ কোটি টাকার জালিয়াতি ধরা পড়েছে। আর এ টাকা আদায়ে ২১ জনের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা হয়েছে।

সুত্র মতে, মহেশখালীর মাতারবাড়ীর দেশের সবচেয়ে বড় এ প্রকল্প অনুমোদনের আগেও অতিরিক্ত ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল পরিকল্পনা কমিশন। শুরুতে ৪০ হাজার ৩২০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও কমিশনের আপত্তির মুখে তা থেকে প্রায় ৪ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা কমানো হয়। পরে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। তা সত্ত্বেও এতে বাড়তি ব্যয় হচ্ছে বলে মনে করেন পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে নির্মিত হচ্ছে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। সঙ্গে থাকছে কয়লা খালাসের বন্দর ও অবকাঠামো। সব মিলিয়ে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প এটি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন