মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে চকরিয়ার মাতামুহুরী সেতু

Chakaria Pic. (Bridge) 13.05

চকরিয়া প্রতিনিধি:

ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর সেতুটি। মাঝখানে নতুন করে দেবে যাওয়ায় আবারও যানবাহন চলাচলে মারাত্মক বিঘœ ঘটছে। যে কোন সময় ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। অবশ্য সেতুর উপরিঅংশে দেবে যাওয়া এবং সৃষ্ট ক্ষত ঠেকাতে বালুভর্তি বস্তা দেওয়াসহ নানামুখি উদ্যোগ নিলেও তা কতটুকু ফলপ্রসূ হবে এনিয়ে সন্দিহান মানুষ। এ অবস্থায় বেশি আতঙ্কে রয়েছেন, এ সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও পর্যটকেরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রায় চার বছর আগে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার মাতামুহুরী সেতুর মাঝখানের ঢালাইয়ের একটি অংশে সামান্য দেবে যেতে শুরু করে। ওইসময় বর্ষা মৌসুম ছিল। এতে ভারী বৃষ্টিতে একটু একটু করে বিশাল অংশ দেবে গেলে ক্ষতস্থানে লোহার পাটাতন দিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করে। কিন্তু সেই পাটাতন অপেক্ষাকৃত একটু উচুঁতে স্থাপন করতে হওয়ায় ভোররাতে পর্যটকবাহী একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারালে পাশের রেলিং ভেঙে নিচে নদীর চরে পড়ে যায়। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় অন্তত ২০জনের প্রাণহানি ঘটে। এর পর সড়ক ও জনপথ বিভাগ ভেঙে যাওয়া রেলিং মেরামত এবং দেবে যাওয়া অংশ আবারও রিপিয়ারিং করে যানবাহন চলাচল নির্বিঘœ করে। এভাবে ঝুঁকির মধ্যেই এতদিন ধরে যানবাহন চলাচল করে আসছিল।

কিন্তু গেল কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে আবারও সেতুর মাঝখানের অংশ দেবে যাওয়ার উপক্রম হলে এবার নিচ থেকে বালির বস্তা দিয়ে কোনভাবে রক্ষার চেষ্টা করেন সওজ। কিন্তু এ চেষ্টা কতটুকু কাজ দেবে এ আশঙ্কাই থেকে যাচ্ছে। চরম ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে ব্যস্ততম মহাসড়কের মাতামুহুরী সেতুর ওপর দিয়ে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ চকরিয়া কার্যালয় সূত্র জানায়, যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে ঝুঁকি এড়াতে সেতুর নিচে মাটির ওপর থেকে গার্ডারের তলানী পর্যন্ত বালুর বস্তা দেওয়া হয়েছে। এর পর চলছে বালুর বস্তার চারিদিকে ইটের গাঁথুনি দেওয়ার কাজ, যাতে বালুভর্তি বস্তা সরে যেতে না পারে। এছাড়াও সেতুর ওপর দিয়ে যাতে দশ টন ওজনের বেশি পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করতে না পারে সেজন্য সেতুর দুই দিকে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ চকরিয়া উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু এহেছান মোহাম্মদ আজিজুল মোস্তফা বলেন, টানা কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বুধবার সকাল থেকে সেতুর মাঝখানে আবারও দেবে যাওয়া শুরু করে। দেবে যাওয়ার অংশের ওপর ইতিপূর্বে বসানো পাটাতনগুলো সরে যায়। এ অবস্থায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যস্ততম এ সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সার্বক্ষণিক নজরদারী বাড়ায়।

তিনি বলেন, ঝুঁকি এড়াতে সরে যাওয়া পাটাতনগুলো নতুন করে বসানো হয়েছে এবং সেতুর গার্ডারের নিচে বালুভর্তি বস্তা দেওয়া হয়েছে। এখন চলছে বালুর বস্তার চারিদিকে ইট দিয়ে গাঁথুনির কাজ। যাতে বালুভর্তি বস্তা সরে যেতে না পারে।

তাহলে স্থায়ী সমাধান কখন হবে, এমন প্রশ্নে আবু এহেছান মোহাম্মদ আজিজুল মোস্তফা বলেন,  তটুকু জানি, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি একসময় চারলেনের সড়ক এবং মাতামুহুরী নদীর ওপরও চারলেনের সেতু হবে। এ কারণে এখনই নতুন কোন সেতু নির্মাণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলকারী অসংখ্য ব্যক্তি বলেন, প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মাতামুহুরী সেতুর ওপর দিয়ে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। দিনের বেলায় তেমন সমস্যার সম্মুখিন না হলেও রাতের বেলায় দূরপাল্লার বাসগুলো সেতুটি পার হতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারানো এবং ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই অতিদ্রুত এ সমস্যা সমাধান করে যানবাহন চলাচল ঝুঁকিমুক্ত করার জোর দাবি জানাচ্ছি। না হয় যে কোন মুহূর্তে বড় ধরণের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

তারা আরও বলেন, গত চার বছর ধরে সেতুটির এ দুরবস্থার কারণে একের পর এক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এমনকি ইতিপূর্বে দূরপাল্লার একটি পিকনিক বাস দেবে যাওয়া অংশ দিয়ে পারাপারের সময় চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পতিত হয় বাসটি। এতে একসঙ্গে ২০জনের মতো নারী-পুরুষ প্রাণ হারায় এবং আহত হয় অনেকে। একইভাবে ছোট-খাটো বহু দুর্ঘটনা সংঘটিত হয় সেতুটির এমন দুর্দশার কারণে।

সওজ সূত্র জানায়, দেশ স্বাধীনের আগে ১৯৬০ সালে তৎকালীন আরাকান সডকের চকরিয়ার চিরিঙ্গার  মাতামুহুরী নদীর ওপর ৩০০ মিটার দীর্ঘ সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। এ সেতুর নির্মাণকাজের দায়িত্ব পান দি ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড’ নামের জাপানী একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৪ বছর ধরে এ নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার পর যান চলাচলে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এ সেতু। সেই থেকে অদ্যাবদি এই সেতুর দেখভাল করে আসছিল সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন