মিসর দূতাবাসে হামলার হুমকি : কক্সবাজরের ‘হিরণের কাহিনী বানোয়াট,

http://i2.wp.com/newsevent24.com/media/uploads/2013/08/misor-dutabashe-hamlar-h.jpg

পার্বত্য নিউজ ডেস্ক:

ঢাকায় মিসর দূতাবাস বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার হুমকির অভিযোগে গ্রেফতার কক্সবাজারের ছাত্র শওকত আফসার হিরণের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। র্যাবের দাবি, সে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর হিরণের পরিবারের দাবি, সে কোনো রাজনীতির সঙ্গেই জড়িত নয়; সে ষড়যন্ত্রের শিকার।

তাকে নিয়ে আরেক ‘জজমিয়া’ কাহিনী সাজানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ তার পরিবারের। হিরণের পরিবার জানিয়েছে, সে রাজনৈতিকভাবে তেমন সক্রিয় ছিল না। তবে কক্সবাজারে তার ওঠাবসা ছিল বামপন্থী ও আওয়ামী লীগকে কেন্দ্র করে। তার আপন মামা কক্সবাজার আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। বোমা মেরে ঢাকায় মিসর দূতাবাস উড়িয়ে দেয়ার হুমকির অভিযোগে গত বুধবার ঢাকায় গ্রেফতার হয় হিরণ। এরপর তাকে চার দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। গ্রেফতার হওয়ার পর শওকত আফসার হিরণের গ্রামের বাড়ি কক্সবাজার সদর উপজেলার পালাকাটা এলাকাসহ পুরো জেলায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। খবর আমার দেশ।

এলাকাবাসী জানায়, হিরণ সম্পর্কে গণমাধ্যমে যেসব খবর বেরিয়েছে—তা তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। হিরণের ভাই নাসির মিয়া জানান, হিরণ ১৯ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিং করার জন্য কক্সবাজার থেকে ঢাকা গিয়েছিল। সে ঢাকা শহর চেনে না এমনকি ঢাকার কোনো অলিগলি চেনার প্রশ্নই ওঠে না। অথচ ঢাকা যাওয়ার একদিনের মধ্যে কীভাবে তার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব? তিনি বলেন, ঘটনাটি পুরো বানোয়াট।

তিনি আরও জানান, আমাদের পরিবার কখনও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। কিন্তু নিজেরা কোনো রাজনীতি না করলেও আত্মীয়স্বজন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার বদিউল আলমের আপন ভাগিনা হিরণ। হিরণের ভাই মোক্তার আহমদ ঈদগাহ পালাকাটা ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তার ফুফা আমান উল্লাহ সাধারণ সম্পাদক। হিরণ কক্সবাজার সিটি কলেজ থেকে এ বছর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করেছে। পরিবারের দাবি, হিরণ কোনো ষড়যন্ত্রের শিকার। সে এমন কাজ করতে পারে না।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, কক্সবাজার সিটি কলেজে পড়ার সময় সে চলাফেরা করত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে। বামঘেঁষা কবি-সাহিত্যিকদের প্রতি সে ছিল অনুরক্ত। ২০১০ সালে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত কবিতা মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কবিরা কক্সবাজার এলে শওকত আফসার হিরণ তাদের সঙ্গে আড্ডা দেয়। কক্সবাজার শহীদ মিনারসহ বিভিন্ন স্থানে ওইসব কবির সঙ্গে ফটোসেশন করে। কক্সবাজার শহীদ মিনারে একটি ছবিতে তার সঙ্গে অধ্যাপক মুনতাসির মামুন ও কবি মুহম্মদ নুরুল হুদাকেও দেখা যায়।

অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও বামধারার লেখক আনিসুল হকের সঙ্গে প্রোগ্রাম চলাকালীন হিরণের একটি ছবি ব্যাপক প্রচার হয়েছে। খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, কক্সবাজার সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের দনি পালাকাটার মরহুম সোলতান আহমদ মেম্বারের ছয় ছেলেমেয়ের মধ্যে সবার ছোট হিরণ। তার বড় ভাই নুরুল কবির বীমা প্রতিষ্ঠান ডেল্টা লাইফে কাজ করেন। মেজো ভাই জসিম উদ্দিন ও চতুর্থ ভাই আশেক উদ্দিন সৌদিপ্রবাসী। ৩য় ভাই হাফেজ সাহাব উদ্দিন স্থানীয় এক মসজিদের ইমাম। হিরণের এক ভাই নাসির উদ্দিন কাজ করেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফে।

পরিবারের দাবি, হিরণ চিন্তা-চেতনায় কোনো রাজনৈতিক দলে বিশ্বাসী হলেও নাশকতামূলক কাজ করবে—এটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না। র্যাব তাকে দিয়ে আরও একটি ‘জজমিয়া নাটক’ সাজাতে চায়। জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাস্টার আমান উল্লাহ ফরাজী জানান, হিরণকে এলাকার সাবেক মেম্বারের ছেলে হিসেবে চিনি। যে অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তা আমাদের বিস্মিত করেছে।

হিরণের খবরে নানা অসঙ্গতি : হুমকিদাতা কর্তৃক তথাকথিত চিঠিতে নিজের নাম, মোবাইল নম্বর এবং ই-মেইল আইডি উল্লেখ করার বিষয়টি অনেকের কাছেই রহস্যজনক মনে হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, সুদূর মিসরের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে উদ্বিগ্ন একজন মেধাবী ছাত্র কী এতটাই কাণ্ডজ্ঞানহীন হতে পারে! তাকে মিডিয়ার সামনে হাজির করা হলেও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে দেয়া হয়নি। তাকে ফার্মগেটের ফোকাস থেকে গ্রেফতার করার কথা বলা হলেও ফোকাসের পক্ষ থেকে এক প্রতিবাদলিপিতে জানানো হয়েছে সে (হিরণ) ফোকাসের ছাত্র নয় এবং ঘটনার দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য সেখানে যাননি। তাছাড়া মেডিকেলে ভর্তিচ্ছু একজন ছাত্র ঘটনার দিন ফোকাসে তথা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ে যাওয়ার কারণ কি? ফোকাস তো মেডিকেল কোচিং নয়!

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন