যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা চায় চীন

fec-image

রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতায় আগ্রহী চীন। আগামী মাসের শীর্ষ বৈঠকের আগে বেইজিংয়ের সামরিক সম্মেলনে সেই ইঙ্গিত মিলেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ডয়চে ভেলে।

ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার নিন্দা করার বদলে চীন গত প্রায় ২০ মাস ধরে রাশিয়ার সঙ্গে বরং আরও নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলেছে৷ সমালোচকদের মতে, আনুষ্ঠানিকভাবে নিরপেক্ষ অবস্থানের দোহাই দিলেও এই ঘনিষ্ঠতা চীনের প্রকৃত অবস্থান স্পষ্ট করে দিচ্ছে৷ দুই দেশই পশ্চিমা বিশ্বের কড়া সমালোচনা করে বিকল্প এক আন্তর্জাতিক কাঠামোর পক্ষে সওয়াল করছে৷ সোমবার বেইজিংয়ে চীন ও রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা এক সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করেছেন৷

ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন বলছে, শিয়াংশান ফোরাম নামের বাৎসরিক আন্তর্জাতিক সামরিক সম্মেলনের উদ্বোধনের সময় চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর অনুপস্থিতি নজর কেড়েছে৷ গত সপ্তাহে লি শাংফুকে আচমকা বরখাস্ত করা হয়৷ তবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন৷

তিনি পশ্চিমা বিশ্বকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তারা বড় বিপদ সৃষ্টি করছে৷ তার মতে, রাশিয়ার সঙ্গে সংকট আরও জোরাল করে পশ্চিমা বিশ্ব পরমাণু শক্তিধর দেশগুলির মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে৷ এর পরিণাম বিশাল বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে৷ শোইগুর অভিযোগ, ‘হাইব্রিড যুদ্ধ’ চালিয়ে রাশিয়ার কৌশলগত পরাজয়ের চেষ্টা করছে পশ্চিমা বিশ্ব৷

রাশিয়ার মতো সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা না করলেও চীনের সামরিক কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান ঝাং ইয়ুশিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘কিছু দেশ’ ইচ্ছাকৃতভাবে অস্থিরতা সৃষ্টি করে অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে সরকার উচ্ছেদের চেষ্টা করছে৷

তাইওয়ানের প্রসঙ্গ টেনে এনে তিনি বলেন, সেটি চীনের মৌলিক স্বার্থের জায়গা৷ তার মতে, কোনো দেশের অন্যান্য দেশের প্রধান ও স্পর্শকাতর বিষয়ে প্ররোচনা জোগানো উচিত নয়৷ রাশিয়া ও চীনের মতে, কিছু বৈদেশিক শক্তি ইউরোপের পর এশিয়া মহাদেশেও অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে৷

রাশিয়ার মতো মরিয়া হয়ে পশ্চিমা বিশ্বের কড়া সমালোচনা না করে চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার প্রতিও আগ্রহ দেখাচ্ছে৷ ঝাং ইয়ুশিয়ার ভাষণের বাকি অংশে সেই অবস্থানের প্রতিফলন দেখা গেছে৷

তিনি বলেন, চীন রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতা ও সমন্বয় আরও গভীর করতে চায়৷ সেই সঙ্গে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও দুই পক্ষের সুবিধার লক্ষ্যে বেইজিং ওয়াশিংটনের সঙ্গেও সামরিক সহযোগিতা গড়ে তুলতে আগ্রহী৷

উল্লেখ্য, চীনের সামরিক সম্মেলনে এক মার্কিন প্রতিনিধিদলও অংশ নিচ্ছে৷ তবে সেই দলের সদস্যরা চীনা সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন কিনা, তা স্পষ্ট নয়৷ আগামী নভেম্বর মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের শীর্ষ বৈঠকের আগে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ছে৷ গত সপ্তাহেই চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই ওয়াশিংটন সফর করে বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন৷

যুক্তরাষ্ট্র চীনের সামরিক সম্মেলনকে গুরুত্ব দিলেও বাকি পশ্চিমা দেশগুলি হয় যোগদান করেনি, বা ছোট আকারের প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে৷ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করতে তারা মঞ্চ সিঙ্গাপুরে ‘শাংরি লা ডায়ালগ’-কেই গুরুত্ব দিচ্ছে৷

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: চীন, যুক্তরাষ্ট্র, সামরিক সহযোগিতা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন