সীমান্তে স্থিতিশীলতা ফেরাতে মিয়ানমারে চীনা রাষ্ট্রদূতের বৈঠক

fec-image

সীমান্তে স্থিতিশীলতা ফেরাতে মিয়ানমারে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

মিয়ানমারের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরে চীনের সম্পর্কে টানাপোড়েনের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর দু’দেশের সীমান্তে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা নিয়ে আলোচনার জন্য রাজধানীতে নিপিধোতে এই বৈঠক করেন তারা।

রাষ্ট্রপরিচালিত ‘গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার’ পত্রিকা একমাস আগে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে হামলা শুরু করা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর একটি জোটের কথা উল্লেখ করে তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, “এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে…গৃহসামগ্রী, ভোক্তা পণ্য, কাপড় এবং ভবন নির্মাণ সামগ্রীবাহী ২৫৮ টি ট্রাকের প্রায় ১২০ টিই আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে।”

চীনের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের উত্তর–পূর্বাঞ্চলে মাসখানেক ধরেই সামরিক জান্তার সঙ্গে বিদ্রোহীদের লড়াই চলছে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বিদ্রোহীদের জোট সেনাদের ওপর বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই হামলা চালাচ্ছে।

শুক্রবার চীন থেকে মিয়ানমারে যাওয়া ট্রাকের বহর জ্বালিয়ে দেওয়ার খবর প্রকাশ করে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। বিদ্রোহীরাই ট্রাক জ্বালিয়েছে বলে জানানো হয়। যদিও বিদ্রোহী বাহিনীর পক্ষ থেকে একজন মুখপাত্র গাড়িবহর জ্বালানোর এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

চীনা রাষ্ট্রদূত চেন হাইয়ের সঙ্গে মিয়ানমার জান্তা কর্মকর্তাদের বৈঠক চলার মধ্যেই এমন সহিংসতার খবর এসেছে। মিয়ানমারে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফেরানোর আহ্বান জানিয়েছে চীন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার চীনা রাষ্ট্রদূত চেন হাই মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থান সয়ে এবং সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারের খবরে বলা হয়, বৈঠকে দুপক্ষ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, দুই দেশের জন্য লাভজনক দ্বিপক্ষীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন, সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফেরাতে সহযোগিতা করা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে।

২০২১ সালে মিয়ানমার জান্তা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর থেকে চীন এই সরকারকে সমর্থন দিয়ে আসছে। কিন্তু মিয়ানমারের উত্তর–পূর্বাঞ্চলে চীন সীমান্তে বছরের পর বছরের সহিংসতার কারণে দুই দেশের সম্পর্কে নানা সময়ই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ওই অঞ্চলটিতে প্রায়ই কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকে না।

চীন ওই এলাকার সীমান্তে বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে বলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষও দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ করে আসছে।

ভিন্নমতাবলম্বী ও জাতীয়তাবাদীদের ওপর সামরিক জান্তার দমনপীড়নের কারণে ইয়াঙ্গুনে গতসপ্তাহ শেষে বিরল বিক্ষোভ হয়। চীনা দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করে হাজার হাজার মানুষ। এক বিক্ষোভকারীর পোস্টারে লেখা ছিল, “আমরা চীন সরকারকে অনুরোধ করছি, দেশের উত্তরাঞ্চলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দেবেন না।”

পরে জান্তা সরকারের মুখপাত্র জো তুন বলেন, বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ওই বিক্ষোভ হয়েছে। তিনি চীনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের সমর্থন না দেওয়ার বিক্ষোভকারীদের দাবির বিষয়টি উল্লেখ না করে বলেন, পশ্চিমা গণমাধ্যম চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক ধ্বংস করতে চায়।

২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই জান্তা সরকার কঠিন সময় পার করছে। জান্তাবিরোধী বিভিন্ন বিদ্রোহী ও সশস্ত্র জাতিগত গোষ্ঠী মিয়ানমারের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর–পশ্চিশাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলর শত শত জান্তা ঘাঁটিতে অহরহ হামলা চালাচ্ছে।

এই সপ্তাহের শুরুর দিকে শান রাজ্যের লাউকাই শহরে রকেট হামলায় অন্তত ১০ জন নিহতের খবর জানিয়েছে গণমাধ্যম।

ওই এলাকায় তৎপর বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং জান্তা দুই পক্ষের মুখপাত্রই এই সহিংস হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং হামলার দায় অস্বীকার করেছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: চীন, মিয়ানমার, রাষ্ট্রদূত
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন