যে ছবি ভাইরাল বিজিবি মেজর আশিকুরের

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

কক্সবাজার, ২৪ অক্টোবর-কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের আঞ্জুমানপাড়া সীমান্তে ফের রোহিঙ্গাদের ঢল নেমেছে। গত ১৪ থেকে ১৬ অক্টোবর ওই সীমান্ত দিয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আঞ্জুমানপাড়াসহ বিভিন্ন সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে এখনও হাজার হাজার রোহিঙ্গা আটকা পড়ে আছে। মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পায়ে হেঁটে আসায় তাদের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

সীমান্তে নিয়োজিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর সদস্যরা, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম), ইউএনএইচসিআর, এমএসএফ, দেশি-বিদেশি এনজিওসহ দেশের বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা রোহিঙ্গাদের নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসা এক বৃদ্ধ রোহিঙ্গা নারীকে সম্প্রতি কোলে করে সীমান্ত পার করিয়ে দেন বিজিবির মেজর মো. আশিকুর রহিম। তার এই মানবিক দৃষ্টান্তের ছবি বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

অসুস্থ রোহিঙ্গা বৃদ্ধাকে কোলে করে চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন বিজিবি মেজর আশিকুর বিজিবির মেজর মো. আশিকুর রহিমের ছবিটি ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বিজিবি’র অতিরিক্ত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেও তিনি অসহায় এক রোহিঙ্গার প্রতি যে মমত্ববোধ দেখিয়েছেন, তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। নো-ম্যানস ল্যান্ড থেকে একজন বৃদ্ধ নারীকে কোলে করে নিরাপদে সরিয়ে আনার সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি হয়েছে।

মেজর আশিকুর রহিম বলেন, ‘দেখুন, আমরা তো সবসময় বাড়ি থেকে অনেক দূরে কাজ করি। চাকরির কারণে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলে যাই। এ কারণে বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে তেমন থাকার সুযোগ হয় না। এজন্য কোনও বয়স্ক মানুষ দেখলে নিজেদের বাবা-মায়ের কথা পড়ে। ওই দিনও ঠিক এমনটি হয়েছে। আজ আমার মা যদি এই রকম বিপদে পড়েন, তখন তো কেউ না কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবেন। এজন্য নিজের মায়ের কথায় মনে পড়ে গেল। কারণ, আমার মাও তো একদিন এ রকম বিপর্যয়ে পড়তে পারেন।’

অসুস্থ এক রোহিঙ্গা বৃদ্ধাকে কোলে করে চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন বিজিবি মেজর আশিকুরপ্রসঙ্গত, ২৪ আগস্ট রাতে মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংস ঘটনার পর সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। সীমান্ত পরিস্থিতি সামলানোর জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে নিয়ে আসা হয়। একইভাবে সিলেটে কর্মরত বিজিবি’র অতিরিক্ত পরিচালক মেজর আশিকুর রহিমকেও ডেপুটেশনে উখিয়ায় নিয়ে আসা হয়।

মেজর আশিকুর বলেন, ‘আসলে আমরা প্রথম দিন যখন কাজ শুরু করি, তখন আমাদের অন্য সদস্যরা ওখানে কাজ করছিল। মানবিক বিপর্যয় যেটা হয়েছে এটি তো আমাদের সবারই জানা। বৃদ্ধ ওই নারী তো হাঁটতেও পারছিলেন না। তাকে তো আরও বহু পথ পাড়ি দিয়ে হেঁটে যেতে হবে। ওই দিন ইউএনএইচসিআর -এর সঙ্গে আমাদের একটি সমন্বয় হয়। অসুস্থ ও বয়স্ক লোক দেখলে তাদের পৃথক করে গাড়িতে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হবে বলে সমঝোতা হয়।

তখন দেখলাম যে, এক বৃদ্ধ নারী বহুদূর থেকে হেঁটে আসছিলেন এবং কিছু দূরে গিয়ে মাটিতে পড়ে যান তিনি। তখন তাকে প্রথমে ইউএনএইচসিআর -এর একজন কর্মী কোলে করে নিয়ে আসছিলেন। পরে দেখলাম যে, ওই লোকটিও তাকে নিয়ে আসতে ব্যর্থ হচ্ছেন। কারণ, তার হাত ব্যথা করছিল। তখন আমি এগিয়ে গেলাম এবং ওই বৃদ্ধ মাকে সাহায্য করেছিলাম বাকি পথটুকু নিয়ে আসার জন্য।’

‘এই বৃদ্ধ মাকে কোলে নিয়ে আসার বিষয়টি তেমন বড় কিছু নয়’ উল্লেখ করে মেজর আশিকুর আরও বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকের মানবিকতাবোধ আছে। আছে দৃষ্টিভঙ্গি। এই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতে হবে। আমি যখন ওই বৃদ্ধ মাকে কোলে নিয়ে হাঁটছিলাম, তখন মনে হয়েছিল, আমার মাকে নিয়ে আমি নো-ম্যানস ল্যান্ড পার হচ্ছি।’

 

সূত্র: দেশ বিদেশে

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন