রাঙামাটি কলেজে ছাত্রলীগ-পিসিপি সংঘর্ষ, ওসিসহ আহত ১৫
স্টাফ রিপোর্টার:
রাঙামাটি সরকারী কলেজে ছাত্রলীগ ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের মধ্যে সংর্ঘষে ওসিসহ অন্তত ১৫জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় কলেজ গেইট এলাকার চারটি দোকান ভাংচুর, লুটপাট ও ২টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে সংঘর্ষকারীরা। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রাঙামাটি সরকারী কলেজ ক্যাম্পাসে এঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের উদ্ধার করে রাঙামাটি সদর হাসপাতাল ও সেনাবাহিনীর সিএমএইচে নিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীর তথ্য সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রাঙামাটি সরকারী কলেজে ছাত্রলীগের মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল শেষে ছাত্রলীগ কর্মী অর্ণব ত্রিপুরা সৌরভকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জেএসএস সমর্থিত সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) নেতাকর্মীরা মারধর করে। এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাধা দিলে পিসিপির নেতাকর্মীরা তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা করে। এসময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও সাধারণ ছাত্রসহ অন্তত ১৫জন আহত হয়।
আহতরা হলেন-মেহেদী হাসান (২০), ফারুক হোসেন (৩০), ফোরকান হোসেন (৩৫), বেলাল হোসেন, মাহামুদ হোসেন (২০), মঈনুদ্দিন (২০), আব্দুল কাদের (১৯), এ বি এম জোনায়েদ (১৭), আব্দুল হামিদ (৩০), নূর হোসেন (৩৩), অর্ণব ত্রিপুরা সৌরভ, মোঃ শাহ আলম, মোমিনুল ও ইউসুফসহ আরো অনেকে।
এ ঘটনায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া শুরু হয়। সংঘর্ষকারীদের ইট-পাটকেলে চারপাশ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে পুরো কলেজ ক্যাম্পাসে। উত্তেজিত সংঘর্ষকারীরা কলেজের সামনে চারটি দোকান ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়ে তাতে অগ্নিসংযোগ করে। এসময় ক্যাম্পাসে থাকা ২টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় সংঘর্ষকারীরা।
এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে সংঘর্ষকারীদের ইট-পাটকেলে আহত হয় রাঙামাটি কোতয়ালী থানার কর্মকর্তা মো. আব্দুর রশিদ। পুলিশ সংঘর্ষকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ট্রিয়ারশেল ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় সংঘর্ষকারীরা দুই দিকে অবস্থান নিয়ে রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘন্টাব্যাপী চেষ্টা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। এঘটনায় সাধরাণ মানুষের মধ্যে চাপা আতঙ্ক দেখা দেয়। বর্তমানে ঘটানাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
সংঘর্ষের ঘটনায় রাঙামাটি কলেজ ছাত্রলীগের সেক্রেটারী আহম্মদ ইমতিয়াজ রিয়াদ জানিয়েছে, ছাত্রলীগ কর্মী অর্ণব মিছিল শেষ করে কলেজ ক্যান্টিনে যাচ্ছিল তখন পিসিপি কর্মীরা তার উপর হামলা করে।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বাচ্চু চাকমা জানিয়েছে, আমাদের কর্মীরা কলেজে দাঁড়িয়ে ছিল তখন বিনা উস্কানিতে ছাত্রলীগ তাদের উপর হামলা চালিয়েছে।
রাঙামাটি জেলা পিসিপির সাধারণ সম্পাদক রিন্টু চাকমা জানিয়েছেন, আমাদের ছেলেরা খেলা নিয়ে কথা বলছিল তখন আমাদের উপর তারা হামলা করে নেতাকর্মীদের আহত করে।
রাঙামাটি সরকারী কলেজের সামনের দোকান ব্যবসায়ী শাহ আলম, মো. নূরুল আবছার, ইলিয়াছ, সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, কলেজে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মী ও উপজাতীয় কিছু উত্তেজিত ছেলে তাদের দোকান ভাংচুর, মালামাল ও টাকা পয়সা লুটপাট চালিয়ে দোকানে অগ্নিসংযোগ করে পালিয়ে যায়। এসময় তারা সড়কে থাকা ২টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ বিষয়ে রাঙামাটি কলেজ গেইট ব্যবসায়ী সমিতি নেতা মো. সিদ্দিক আহমেদ জানান, বিনা কারণে যারা দোকান পাট ভাংচুর, মালামাল ও টাকা পয়সা লুটপাট করেছে তাদের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ না পাওয়া পর্যন্ত কলেজ গেইট এলাকায় দোকান পাট খোলা হবে না।
রাঙামাটি ৯নং ওয়ার্ড পৌর কাউন্সিলর মো. বেলায়ত হোসেন টিটু জানান, রাঙামাটি সরকারী কলেজে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংর্ঘষের ঘটনা ক্যাম্পাসের বাহিরে সাম্প্রদায়িক রূপ নিতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন জানান, বর্তমানে রাঙামাটি সরকারী কলেজে সংর্ঘষের ঘটনায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনাস্থলসহ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অতিরিক্তি পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।