শান্ত পাহাড় আবারও অশান্ত: নাশকতা এড়াতে কারফিউ বলবৎ

রাঙামাটি
স্টাফ রিপোর্টার :

শান্ত পাহাড় আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে। ক্ষণে ক্ষণে আতঙ্ক আর নানা গুজব। চার দিকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। সব মিলিয়ে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় বেঁচে আছে রাঙামাটির মানুষ। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সব রকম চেষ্টা চালানো হচ্ছে। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যার ও পুলিশ মোতায়নসহ  টহল জোরদার করা হয়েছে। তবুও স্থানীয় উপজাতি ও বাঙালীদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। তাই নাশকতা এড়াতে কারফিউ জারি করে জেলা প্রশাসন।

গত রোববার উপজাতি ও বাঙালীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার পর রাঙামাটি জেলা প্রশাসন এক আদেশে রোববার সন্ধ্যা ৭টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করেন। তা পরবর্তিতে ৩ ঘন্টা বিরতি দিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করে জেলা প্রশাসন। কিন্তু বিকাল ৫টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৭টা পর্যন্ত আবারও কারফিউ বলবৎ রাখা হয়।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি শহর এলাকায় কারফিউ চলাকালে কোন রকম নাশকতা ও অপ্রীতিকর ঘটনা দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ বলবৎ থাকবে।

এদিকে জেলার বিরাজমান পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে সোমবার দুপুরে ২টি পৃথক পৃথক রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছে জেলা প্রশাসন ও রিজিয়ন কমান্ডার। বৈঠকে জেলা প্রশাসক মোঃ সামসুল আরেফিন, ডিআইজি মোসারফ হোসেন, পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যজিস্ট্রেট সাইফ উদ্দিন আহমেদসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ৩০৫ রিজিয়নে কমান্ডার, জিওসি সাব্বির আহম্মেদ এনডিসি, পিএসপি.এ এফ.ডাব্লিউ.সি ও র‌্যাব এর মেজর জাহাঙ্গীর রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।

বৈঠকের পর জেলা প্রশাসক মোঃ সামসুল আরেফিন সাংবাদিকদের জানান, বর্তমানে জেলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। যে কোন নাশকতা এড়াতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে শহরবাসীকে ধৈর্য ধরার আহবান জানান।

আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে শহরে অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিব, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাব ৭ এর কয়েকটি দল টহল দিচ্ছে। কারফিউ ভঙ্গের কারণে রবিবারর রাত থেকে এ পর্যন্ত ৩০ জনকে আটকের খবর নিশ্চিত করেছে কোতয়ালী থানার এস আই আনোয়ার। তবে এর মধ্যে অধিকাংশই বাঙালী।

জানা গেছে, শনিবার (১০ জানুয়ারি) রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্বোধনের আগে সন্তু লারমা সমর্থিত সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও ছাত্রলীগ দু’পক্ষের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এসময় উভয় পক্ষের নেতাকর্মী, পুলিশ, সাংবাদিক ও পথচারীসহ ১৫জন আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন মো. শামসুল আরফিন ১৪৪ ধারা জারি করে। শহরে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবির টহল জোরদার করা হয়। এঘটনার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এলেও দেখা দেয় সাম্প্রদায়িক প্রতিহিংসা।

অন্যদিকে গত রবিবার (১১ জানুয়ারি) জেলা প্রশাসনের ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকার পরও রাঙামাটি শহরের বনরূপা বাজারে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৫০/৬০ জনের একদল উপজাতি সশস্ত্র গ্রুপ হামলা চালায় সাধারণ বাঙালী ব্যবসায়ীদের উপর। এসময় মো. জাহিদ, দিদারুল আলম, ইউসুফ, নাজিমসহ আরো বেশ কয়েকটি দোকানে ভাংচুর ও লুটপাট করে উপজাতি সংঘর্ষকারীরা।

ঘটনার খবর শুনে স্থানীয় এলাকাবাসী ও পুলিশ সংঘর্ষকারীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। কিন্তু আগে থেকে প্রস্তুত উপজাতি সশস্ত্র গ্রুপটি আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ সাধারণ মানুষের উপর গুলি ছোড়ে এবং ইটপাটকেল, গুলতি, মার্বেল ও তীর নিক্ষেপ করে। এসময় কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কয়েক রাউন্ড শর্ট গানের গুলি ছোড়ে ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। অন্যদিকে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে শহরের কলেজ গেইট, আমানতবাগ, বিজয়স্বরণী, তবলছড়ি, কাঠালতলী ও ভেদভেদী এলাকায়।

সংঘর্ষ চলাকালে রাতে শহরের ভেদভেদী এলাকায় ৪টি বাঙালীর দোকানে আবারও হামরা চালায় একদল উপজাতি যুবক। এসময় তারা দোকানের মালিককে মারধর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মী ও স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে টানটান উত্তেমজনা শুরু হয় । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জেলা প্রশাসন কারফিউ জারি করে। মাঠে নামে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি। বর্তমানে রাঙামাটি শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

এব্যাপারে রাঙামাটি সদর থানার কর্মকর্তা (ওসি) মনু সোহেল ইমতিয়াজ জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারফিউ চলবে। তিনি বলেন, কারফিউ চলাকালীন শহরবাসীকে স্ব-স্ব বাড়ি-ঘরে অবস্থান করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার মাইকিং করে বলা হচ্ছে। কারো কাছে আঘাত করতে সক্ষম এমন কোন দ্রব্য বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারফিউ ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন