সন্ন্যাসিনী ধর্ষণ নিয়ে উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গ, রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব কেন্দ্রের

SONNASINI

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রবীণ খ্রিস্টান সন্ন্যাসিনী ধর্ষণকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। বর্বরোচিত ওই ঘটনা নিয়ে আজ (মঙ্গলবার) জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের বৈঠক হবে দিল্লিতে। জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান নাসিম আহমেদ জানিয়েছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের রানাঘাটে সন্ন্যাসিনী ধর্ষণের ঘটনা ছাড়াও সামগ্রিকভাবে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হবে।’

অন্যদিকে রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান ইন্তাজ আলী শাহ নদিয়ার জেলা শাসক পি বি সালিম এবং পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষকে সাত দিনের মধ্যেই এই ঘটনা নিয়ে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আজ (মঙ্গলবার) পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশনের দু’জন প্রতিনিধি রানাঘাটে যাচ্ছেন পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে।

এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার রানাঘাটে ১৩ মার্চ গভীর রাতে ‘কনভেন্ট অফ জেসাস অ্যান্ড মেরি’ স্কুলে দুষ্কৃতীদের হামলা এবং ৭১ বছর বয়সী এক সন্ন্যাসিনীকে গণধর্ষণের অভিযোগে কেন্দ্রের পক্ষ থেকেও রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।

সোমবার সংসদে এ নিয়ে বিভিন্ন দলের এমপিরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। রাজ্যসভায় সিপিআই এমপি ডি রাজা সন্ন্যাসিনী ধর্ষণের এই ঘটনাসহ হরিয়ানায় নির্মীয়মাণ গির্জা ভাঙার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন।

তিনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে প্রচার ও আক্রমণের ঘটনা বাড়ছে। এমনকি অসমের গুয়াহাটিতে এক উগ্র দক্ষিণপন্থী নেতা গিয়ে বলে এসেছেন, ঈশ্বর শুধু হিন্দুদের ধর্মস্থানে থাকেন। আর কোনো সম্প্রদায়ের ধর্মস্থানে নয়। এসব কী হচ্ছে? আমরা কি সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র বজায় রাখতে ব্যর্থ হব? সংবিধান যদি ধ্বংস করার চেষ্টা হয় তাহলে দেশের ঐক্য সব থেকে বেশি ধাক্কা খাবে।’

সংসদে সিপিআই, সিপিএম সমাজবাদী পার্টিসহ বিভিন্ন দলের এমপিরা রানাঘাটের ঘটনাসহ দেশের অন্যত্র সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাকভি বলেছেন, ‘আমরা কোনো ধর্মস্থান বা ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধে আক্রমণের বিরুদ্ধে। কিন্তু এ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের।’

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই রানাঘাটের ঘটনায় সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিলেও এখনও সিসিটিভি ফুটেজে পাওয়া দুষ্কৃতীরা গ্রেফতার হয়নি। অপরাধীরা যাতে বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য সীমান্তে বিএসএফকে সতর্ক করা হয়েছে।

সোমবার সন্ধ্যায় রানাঘাটের ওই কনভেন্ট স্কুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিদর্শনে যান। পরে নির্যাতিতা সন্নাসিনীকে দেখতে রাণাঘাট হাসপাতালে যান। রাতে সেখান থেকে ফেরার পথে নজিরবিহীন বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। তাকে চার বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রীত্বের আমলে এত বড় বিক্ষোভ-অবরোধের মুখোমুখি হতে হয়নি এর আগে।

রানাঘাটের ঘটনায় পুলিশ অপরাধীদের গ্রেফতার করতে না পারায় এবং সিবিআই তদন্তের দাবিতে প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে বিক্ষোভকারীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায়।

এভাবে অবরোধ এবং ব্যাপক বিক্ষোভ করার পেছেন অবশ্য সিপিএম এবং বিজেপি’র চক্রান্ত রয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি অভিযোগ করেছেন।

আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে তৃণমূলের পক্ষ থেকে এর প্রতিবাদে রাণাঘাট কলেজ ময়দানে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয়া হয়েছে। ফলে ফের রাজ্য রাজনীতি উত্তাল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।-আইআরআইবি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন