সাজাভোগ শেষে ১৬ বাংলাদেশীকে ফেরত দিল মিয়ানমার
টেকনাফ প্রতিনিধি:
মিয়ানমারের কারাঘরে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাভোগ শেষে ১৬ বাংলাদেশীকে ফেরত দিয়েছে বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি-বিজিপি পর্যায়ে দেড় ঘন্টাব্যাপী পতাকা বৈঠকের পরে তাদের ফেরত দেওয়া হয়।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানারের কারাঘরে বিভিন্ন মেয়াদে আটক বাংলাদেশীদের সাজাভোগের পর মুক্তির বিষয়ে আলোচনার জন্য বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে দেড় ঘন্টাব্যাপী পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মংডুস্থ ১ নং পয়েন্ট অব এন্ট্রি এন্ড এক্সিট এলাকায় উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি-বিজিপি পর্যায়ে এ বৈঠক হয় ।
বৈঠকে বাংলাদেশের ১৭ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ৪২ বিজিবির উপ-পরিচালক আজাহারুল আলম ও মিয়ানমারের ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মিয়ানমারের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা ইউ মই মাইন অং।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা মোস্তফা, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি টেকনাফ থানার ওসি (তদন্ত) কবির হোসেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় সদর বিওপির মিলনায়তনে ৪২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর মো: আবদুল হান্নান খান সংবাদ সম্মেলনে জানান, মিয়ানমারে বিভিন্ন অপরাধে সাজা শেষ হওয়া ১৬ বাংলাদেশিকে ফেরত দেওয়ার জন্য একটি চিঠি ও ঠিকানা সম্মলিত তালিকা অনুযায়ী মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের চিঠিসহ ১৬ জনের তালিকাটি স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এ প্রেক্ষিতে দু-দেশের পতাকা বৈঠকে অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ এবং আন্তরিক পরিবেশে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় মানব ও মাদকপাচারসহ সীমান্তে বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোচনা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, মিয়ানমারের কারাগারে বর্তমানে কতজন বাংলাদেশী নাগরিক সাজাপ্রাপ্ত এবং সাজার মেয়াদ শেষ হওয়া নাগরিকদের সংখ্যা সম্পর্কে মিয়ানমার কোন তথ্য সরবরাহ করেনি। তবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাদেরকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
মিয়ানমারের কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগের পর ফেরত আসা বাংলাদেশীরা হচ্ছে, কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোদারবিল ছৈয়দ আলমের ছেলে মো: আয়াছ (২৪), হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনছিপ্রাং এলাকার আবদুর রহমানের ছেলে অলি আহমদ(৩৪), ছৈয়দুল হকের ছেলে নুরুল কবির (৩৪), সার মোল্লার ছেলে বাশাত করিম (৩২), লম্বাবিল এলাকার জানে আলমের ছেলে আমির হোসেন (৩৫), সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপের পশ্চিমপাড়ার রশিদ ইসলামের ছেলে এরশাদ উল্লাহ(২৪) ও তার ভাই সৈয়দ উল্লাহ(২২), জামাল উদ্দিনের ছেলে নুরুল ইসলাম(৪৫), জালিয়াপাড়ার সৈয়দ হোছনের ছেলে মো: আব্দুল্লাহ(৩৬), ক্যাম্পপাড়ার আলতাজ হোসনের ছেলে জাকির হোসেন(৩৪), দক্ষিণপাড়ার মমতাজের ছেলে হাসিম উল্লাহ মিয়া (৩৪), নয়াপাড়ার লাল মোহাম্মদের ছেলে জাকির হোসেন (৪৩), রুহুল্ল্যার ডেপার ফজল আহমদের ছেলে মো: আলম (২০), উখিয়া উপজেলার সোনারপাড়ার অলি আহমদের ছেলে মো: নুরুল আলম (৩৪), পূর্ব মরিচ্যার মৃত গোলাম নবীর ছেলে এনায়েত উল্লাহ(৩৫) ও চকরিয়া উপজেলার আকিয়ামনি এলাকার দেলোয়ার হোসনের ছেলে মায়ার খান মিরহান (৩২)।
ফেরত আসা টেকনাফের নয়াপাড়ার জাকির হোসেন জানান, নাফনদীতে মাছ শিকারে গিয়ে সীমান্তরক্ষীর হাতে আটক হয়ে দীর্ঘ ৩ বছর ৫ মাস কারাভোগ করেছেন। তিনি বিজিবির প্রচেষ্টায় দেশে ফিরতে পারায় সন্তুষ্ট হয়ে এবং বিজিবিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তারমত আরও শতশত বাংলাদেশী নাগরিক মিয়ানমারের কারাগারে মুক্তির প্রহর গুনছে। সে দেশের কারাগারে অমানুষিক যন্ত্রনা ভোগ করছেন তারা। বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ যোগাযোগ এবং তৎপরতার অভাবে তারা দেশে ফিরতে পারছেনা বলে তিনি দাবী করেন।
অন্যদিকে ফেরত আসা মালয়েশিয়াগামী যাত্রী চকরিয়ার মায়ার খান মিরহান জানান, ২০১২ সালের ২৫ জুন ৮০ জন মালয়েশিয়াগামী যাত্রী বোঝাই নৌকায় টেকনাফের কাটাবনিয়া ঘাট থেকে রওয়ানা দিয়ে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিল। ৩৬ মাস মাস কারাভোগের পর তাদের দলের ১১ জন ফেরত আসলেও বাকীদের ব্যাপারে তারা কিছুই জানেনা বলে তিনি জানিয়েছেন।