সাজেকের দুর্গম জনপদে ডায়রিয়া কবলিতদের সেনাবাহিনীর চিকিৎসা সেবা

sajek

শাহজাহান কবির সাজু:

যেখানে চিকিৎসা তো দুরের কথা পায়ে হেঁটে যেতেও লাগে প্রায় তিন-চারদিন, যেখানে নাগরিক সেবা বিন্দুমাত্র কল্পনা করা যায় না- সেই দুর্গম সাজেকের শিয়ালদহ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় সংবাদে সেখানকার চিকিৎসা বঞ্চিত অসহায় মানুষগুলোকে চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে পাহাড়ী জনপদে আবারো মানব সেবার এক অনন্য নজির স্থাপন করলো বাংলাদেশের সেনাবাহিনী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিজিবির সাজেক বিওপি হতে প্রায় ১০ কি. মি. উত্তরে নতুন স্থাপিত শিয়ালদহ বিওপি ও তারও উত্তরে প্রত্যন্ত পাহাড়ি জনপদ শিয়ালদহ পাড়া, অরুণ কারবারী পাড়া, লবণ কারবারী পাড়া ও কাইস্যা পাড়ায় মৌসুমী বৃষ্টি শুরু হওয়ার সাথে সাথে ডায়রিয়া ও কলেরার প্রাদুর্ভাব ঘটে এবং বেশ কয়েকজন মারা যায়। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকায় কোনো প্রকার যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় খবর পৌঁছাতে দেরি হয়ে যায়।

খাগড়াছড়ি রিজিয়ন ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবের সংবাদটি প্রথম পায় ১৪ মে ২০১৫ তারিখ সকাল ১০.৩০ ঘটিকায়। ২৪ পদাতিক ডিভিশনের অনুমতিক্রমে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সহায়তায় খাগড়াছড়ি রিজিয়ন হতে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি মেডিকেল টিম ৭২টি বিভিন্ন রকম ঔষধ (যার মূল্য আনুমানিক ১,৬৭,০০০ টাকা) সহ হেলিকপ্টারে দ্রুত শিয়ালদহ বিওপিতে পৌঁছে একটি আউট পেসেন্ট ক্লিনিক স্থাপন করে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৫৬ জন ডায়রিয়া ও অন্যান্য রোগীর চিকিৎসা করে এবং ঐ একই দল আরও একটি অস্থায়ী হসপিটাল স্থাপন করে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১০ জনকে ইনসেনটিভ কেয়ারে রেখে চিকিৎসা প্রদান করে।

উক্ত আউট পেসেন্ট রুমে শুক্রবারও ১০৫ জন ও হসপিটালে আরও ৪ জন ইনসেনটিভ কেয়ারে রেখে চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলা হয়। এছাড়াও বাঘাইহাট জোন একটি ও বিজিবি সেক্টর হতে একটি মেডিকেল টিম উক্ত আউট পেসেন্ট রুম ও হসপিটালকে সহযোগিতা করে আসছে।

জানা গেছে, ডায়রিয়া কবলিত এলাকায় মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি থাকলেও মূলত : শিয়ালদহ পাড়ার ৫৪টি পরিবারে ২৭০ জন, অরুন কারবারী পাড়ায় ৪টি পরিবারে ২৭ জন, কাইস্যা পাড়ার ৪৩টি পরিবারে ১৬০ জন ও লবন কারবারী পাড়ার সামান্য কয়েকজনের মধ্যে এ পর্যন্ত ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও তিনজনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেলেও মূলত : তারা মাসালং এর চাইল্যাতলী গ্রামের।

এদিকে শিয়ালদহ বিওপিতে এখনও রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসছে এবং এই চিকিৎসা সেবা ও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে নিশ্চিত করেছেন খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের কমাণ্ডার।তিনি খাগড়াছড়ি বিজিবি’র সেক্টর কমাণ্ডারকে সাথে নিয়ে শুক্রবার হেলিকপ্টারযোগে আরও অনেক ঔষধ ও শুকনা খাবারসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং এসময় আগামীকালও হেলিকপ্টারযোগে পর্যাপ্ত শুকনা খাবার ও সুপেয় পানি পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করা হয়।

অপরদিকে খাগড়াছড়ি সিভিল সার্জন ও রাঙামাটি সিভিল সার্জনের অফিস হতেও দুইটি মেডিকেল টিম ঘটনা স্থলের উদ্দেশ্যে রওনা করলেও অধ্যাবধি ডায়রিয়া কবলিত এলাকায় পৌঁছতে পারেনি বলে জানা গেছে।। তবে বাঘাইছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হতে দুজন মেডিকেল অ্যাসিস্টেন্ট মোট ২০টি কলেরা স্যালাইনসহ উক্ত স্থানে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে।

সেনাবাহিনীর এই তৎপরতা ও দ্রুত চিকিৎসা সেবা দুর্গম পাহাড়ী জনপদে স্থাপন করলো আরো একটি বিরল দৃষ্টান্ত। স্থানীয় বাসিন্দারা সবাই উপজাতি গোত্রের হলেও সেনাবাহিনীর এই চিকিৎসা সেবায় সন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।  সেনাবাহিনী তড়িৎ ব্যবস্থা না নিলে আরো বেশ কয়েকজন মানুষের প্রাণহানী ঘটতো বলে তারা গণমাধ্যমের কাছে মতপ্রকাশ করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন