সিমেন্টবোঝাই ট্রাকের চাপা: পরবর্তীতে যা জানা গেল

fec-image

কক্সবাজার শহরের কলাতলির মোড়ে সিমেন্টবোঝাই ট্রাকের চাপায় ৩ জন নিহতের ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে নেমেছে পুলিশ।

ট্রাক ও সিমেন্টের মালিকের প্রাথমিক তথ্যও পুলিশের হাতে পৌঁছেছে। ট্রাকের চালক ও হেলপারের পরিচয় নিশ্চিত করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর থেকে ট্রাকের চালক ও হেলপার পলাতক রয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছে পুলিশ। ট্রাক ও সিএনজি অটোরিকশাটি জব্দ করা হয়েছে। যান্ত্রিক ক্রটি নাকি চালক বা হেলপালের গাফিলতিতে এ দুর্ঘটনা হয়েছে সে বিষয়টি জানতে বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেয়া হবে। এছাড়াও ট্রাকটির মালিক কে এবং সিমেন্টগুলো কোথা থেকে কার জন্য নেয়া হচ্ছে এই তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। এরপর ট্রাকটি কে চালিয়েছে, হেলপার কে ছিল কিংবা হেলপার ট্রাকটি চালিয়ে ছিল কিনা এই তথ্যগুলো সংগ্রহ এবং তাদেরকে আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, শনিবার (৬ মার্চ) রাতে সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকের চাপা দেয়ার ঘটনায় নিহত ৩জনের মৃতদেহ আইনী প্রক্রিয়া শেষে রবিবার বিকেলে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় আহত আরও ৯ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এদিকে, দুর্ঘটনাস্থল কলাতলীর মোড় এলাকায় রবিবার (৭ মার্চ) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকটি দুর্ঘটনাস্থলেই রয়েছে। ট্রাকের উপর বিধ্বস্ত সিএনজি অটোরিকশাটি রাখা হয়েছে। সিমেন্টের বস্তাগুলো নিচে পড়ে রয়েছে। ঘটনার পরপরই কলাতলীর মোড়ে ফুটপাত দখল করা অবৈধ দোকানপাট সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের জনবলও বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এদিকে দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করেছে পুলিশ। তারা হলেন, কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ কলাতলি আদর্শ গ্রামের লাল মিয়ার স্ত্রী মোমেনা বেগম (৬৫), রোটারী ক্লাব অব ঢাকা আরবানের সাবেক সভাপতি ও নৌ-স্কাউটার মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন (৪১) এবং কক্সবাজার জেলা বারের সিনিয়র আইনজীবী ও চকরিয়ার বদরখালির বাসিন্দা মোহাম্মদ ওসমান গণি (৪৮)। এদের মধ্যে এডভোকেট মোহাম্মদ ওসমান গণির রবিবার ভোর চারটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

আহতরা হলেন, উখিয়া কোটবাজার এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আমিনের ছেলে অটোরিক্সা চালক জসিম উদ্দিন (২৫), একই এলাকার বশরত আলীর ছেলে মোহাম্মদ মুজিব (৪৫), কক্সবাজারস্থ ট্যুর গাইড কর্মী শফিউল্লাহর ছেলে মো. জিকু (৩০), মহেশখালীর আবুল কাশেমের ছেলের মো. জয়নাল (৩৫) ও আবুল হোসেন (৪৫), আবুল হোসেনের ছেলে মো. রাশেদুল (১৬)। তবে আহত আরও ৩জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, শনিবার (৬ মার্চ) রাতে কক্সবাজার শহরের কলাতলি মোড়ে ঢালু থেকে নামার সময় সিমেন্ট বোঝাই একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারায়। এসময় ট্রাকটি সড়কের পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা অটোরিক্সা, ইজিবাইক ও মোটর সাইকেলসহ কয়েকটি গাড়ি চাপা দেয়। এতে কয়েকজন ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে এবং ধাক্কায় বেশ কয়েকজন আহত হয়।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। পরে পুলিশ ও উদ্ধার কর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় জনতার সহায়তায় ট্রাক চাপা অবস্থায় পড়ে থাকা ২জনের মৃতদেহ এবং ৩জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এতে আহত হয় অন্তত আরও ৫/৬জন। এসময় চালক ও সহকারী পালিয়ে গেলেও ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে।

পরে হতাহতদের উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মোহাম্মদ শাহীন আব্দুর রহমান চৌধুরী বলেন, দুর্ঘটনার পর ২ জনকে মৃত অবস্থায় এবং ১০ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে ৩ জন গুরুতর এবং ৭ জন সামান্য আহত হয়েছে।

এদিকে, কলাতলীর সড়ক দুর্ঘটনার শিকার সিমেন্টবাহী ট্রাকটির ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে গেছে দুইটি সিএনজি ও একটি ব্যাটারি চালিত টমটম। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২টি ভাসমান দোকান।

এ ঘটনায় নিহত এডভোকেট ওসমান গণি চকরিয়ার বদরখালীর মোক্তার আহমদের ছেলে। তিনি স্বপরিবারে শহরের পূর্ব বাহারছরায় বসবাস করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ১ম ব্যাচের এই কৃতি মুখ কক্সবাজারের আদালত অঙ্গণে বেশ প্রসিদ্ধ। রয়েছে যথেষ্ট সুনাম। ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি খুবই স্বচ্ছ। জনপ্রিয় এই আইনজীবীর মৃত্যুর খবরে সর্বস্তরে শোক বিরাজ করছে।

নিহত অপরজন মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন স্ত্রী সন্তানসহ কক্সবাজার বেড়াতে এসেছিলেন। সড়ক দুর্ঘটনার সাথে সাথে দমকল বাহিনীর পাশাপাশি উদ্ধার কাজে নেমে পড়ে পুলিশসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনানের নেতৃত্বে একটি টিম উদ্ধার কাজে অংশ নেয়।

ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান জানিয়েছেন, সড়ক আইন না মেনে বেপরোয়া ট্রাক চালনার কারণে মর্মান্তির সড়ক দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

ফুটপাত দখল করে অবৈধ পার্কিং, অনিয়ন্ত্রিত যানজট ও সড়ক আইন না মানার জন্য বারবার এমন ঘটনা ঘটছে বলে দাবি করেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন