হামাস যুদ্ধবিরতিতে সায় দিলে হামলা থামাবে হিজবুল্লাহও

fec-image

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস যদি প্রস্তাবিত ৪০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সায় দেয়, তাহলে সেই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে ইসরায়েলে হামলা থেকে বিরত থাকবে লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র ইসলামী গোষ্ঠী হিজবুল্লাহও। গোষ্ঠীটির হাইকমান্ডের বরাত দিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে রয়টার্স।

বিশ্বের বৃহত্তম এই ইসলামপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীটির এক নেতা মঙ্গলবার রয়টার্সকে এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘যে মুহূর্তে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব অনুমোদন করবে হামাস, সেই মুহূর্ত থেকে এই প্রস্তাব ও হামাসের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে (লেবাননের) দক্ষিণাঞ্চলে আমাদের সামরিক অপারেশন থামিয়ে দেবো। এর আগের বারের বিরতির সময়ও আমরা এমন করেছিলাম।’

প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর গাজায় হামাস-ইসরায়েলি বাহিনীর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরদিন থেকে হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়ে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত থেকে ইসরায়েলের ভূখণ্ডকে লক্ষ্য করে প্রায় প্রতিদিন রকেট-ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে হিজবুল্লাহ। সীমান্ত থেকে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েয়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীও (আইডিএফ)।

গত চার মাসের এই যুদ্ধে হিজবুল্লাহর হামলয় অন্তত ১২ ইসরায়েলি সেনা নিহত এবং ৬ জন বেসামরিক ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। আর আইডিএফের পাল্টা হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ২০০ জন হিজুবল্লাহ যোদ্ধা এবং ৫০ জন বেসামরিক।

এছাড়া দুপক্ষের যুদ্ধের কারণে গত চার মাসে লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তের দুই প্রান্ত থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কয়েক লাখ মানুষ।

শিয়াপন্থী এই গোষ্ঠীটির আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা জানিয়েছেন, তারা প্রত্যাশা করছেন যে গাজায় যদি দ্বিতীয় দফা যুদ্ধবিরতি হয়, তাহলে লেবাননকে লক্ষ্য করে হামলা বন্ধ করবে আইডিএফ।

‘হামাস যদি যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়, তাহলে আমরা (ইসরায়েলে) হামলা বন্ধ করব। কিন্তু যুদ্ধবিরতির সুযোগে যদি আইডিএফ লেবাননে বোমা বর্ষণ অব্যাহত রাখে, তাহলে বাধ্য হয়েই সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে আমাদের,’ রয়টার্সকে বলেছেন গোষ্ঠীটির আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা।

এ প্রসঙ্গে আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য হিজবুল্লাহর মিডিয়া কার্যালয়ে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স, কিন্তু কার্যালয়ের কোনো কর্মকর্তা এ ইস্যুতে মন্তব্য করতে চাননি।

চলতি ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে অবশ্য হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা সৈয়দ হাসান নাসরাল্লাহ বলেছিলেন, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসন বন্ধ হলেই ইসরায়েলে হামলা বন্ধ করবে গোষ্ঠীটি।

প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা গাজার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জন মানুষকে হত্যার পাশাপাশি ২৪০ জন ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে ধরে নিয়ে যায়। অভূতপূর্ব সেই হামলার পর সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।

চার মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান সেই অভিযানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন ২৯ হাজারেরও বেশি মানুষ, আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭০ হাজার। এছাড়া ইসরায়েলি বাহিনীর গোলায় বাড়িঘর হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন আরও লাখ লাখ ফিলিস্তিনি।

এই যুদ্ধের শুরু থেকেই হামাস ও ইসরায়েলের সরকারের মধ্যে মধ্যস্থতার ভূমিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতার। এই তিন দেশের ব্যাপক প্রচেষ্টায় গত ২৫ নভেম্বর প্রথম যুদ্ধবিরতি হয়েছিল গাজায়। সেই বিরতির সময় নিজেদের কব্জায় থাকা জিম্মিদের মধ্যে শতাধিক ব্যক্তিকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস। বিনিময়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে দেড়শ জনকে ছেড়ে দিয়েছিল দেশটির সরকার।

সম্প্রতি আবার গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। তার জেরেই প্যারিসে বৈঠক হয়েছে গত সপ্তাহে। বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন ইসরায়েল, কাতার, মিসর এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এবং সেখানে গাজায় দ্বিতীয় দফায় ৪০ দিনের যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাবের খসড়া অনুমোদন করেছেন তারা।

ইতোমধ্যে হামাসের কাছে খসড়াটি পাঠানো হয়েছে। গোষ্ঠীটির জ্যেষ্ঠ নেতারা জানিয়েছেন, খসড়াটি পর্যারোচনা করছেন তারা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: হামাস, হামাস ইসরায়েল যুদ্ধ, হিজবুল্লাহ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন