১১ বছর ধরে পরিত্যক্ত বাজারে ইজারা দিচ্ছে রাঙামাটি জেলা পরিষদাধীন বাজার ফান্ড!

আলমগীর মানিক,রাঙামাটি:
দীর্ঘ ১১ বছর ধরে পরিত্যক্ত বাজারে ইজারা দিয়ে আসছে জেলা পরিষদাধীন বাজার ফান্ড। প্রতি বছর ইজারা দেওয়া হয় কাচালং বাজারে। কিন্তু সেখানে হাট না বসায় ইজারা আদায়কারী টোল আদায় করা হয় বিভিন্ন খোলা মাঠ ও সড়কের ওপর থেকে। এনিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরে একটি মাত্র সরকারি বাজারে এখন আর হাট বসে না। এর বিপরীতে এখন হাট বসানো হয় ব্যস্ত সড়ক ও মাঠে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয় কাচালং বাজারে। ওই অগ্নিকান্ডে দু-শতাধিক দোকান সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। এতে প্রায় আট-দশ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। অগ্নিকান্ডে দোকানের ভেতর আটকা পড়ে সুনীল তালুকদার নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুও হয়। তার পরে  দু বছর কোনো রকমে বাজার বসলেও ২০০২ সালে থেকে আর কাচালং বাজারে কোনো হাট বসে না। এখন কাচালং বাজারটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। বাজারটির  এপর্যন্ত সংস্কার কিংবা স্থানান্তরের ও কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বিক্রেতা উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়কের দু পাশে হাট বসান। এতে  হাটের দিনে যান চলাচল করতে নানা দূর্ভোগ পোহাতে হয়। অথচ দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ইজারা দেওয়া হচ্ছে। এই ইজারা দিচ্ছে রাঙামাটি জেলা পরিষদ বাজার ফান্ড। প্রতি বছর  পাঁচ থেকে সাড়ে সাত লাখ টাকা করে ইজারা দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

ক্রেতা-বিক্রেতারা অভিযোগ করেন, জেলা পরিষদ বাজার ফান্ড প্রতি বছর ইজারার মাধ্যমে কাচালং বাজার থেকে ১০ থেকে ১২  লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করে। দীর্ঘ ১১ বছর ধরে এ রাজস্ব আদায় করে আসছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কাচালং বাজার চালু কিংবা স্থানান্তরের  উদ্যোগ নেয়নি। বসার স্থান না পেয়ে বাধ্য হয়ে খোলা মাঠে ও ব্যস্ততম সড়কে বসতে হচ্ছে। ইজারা আদায়কারীও বেশি টাকা দাবি করে। এবিষয়ে ইজারা আদায়কারী মো. রহমান বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আমরা নিচ্ছি না। আমরা নিচ্ছি হাজারে ৩০ টাকা করে। নিয়ম আছে হাজারে ৬০টাকা। অন্যদিকে, ২০০৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর বাঘাইছড়ি পৌরসভা গঠিত হওয়ার পর থেকে একই বাজার থেকে ইজারার মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করছে। পৌরসভা প্রতি বছর ছয় থেকে সাত লাখ টাকা টোল আদায় করছে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন বলে জানা গেছে।  

বিক্রেতা মাষ্টার পাড়া গ্রামের মো. ফয়েজ বলেন, প্রতি বুধবার এলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাস ভবন-উপজেলা পরিষদের সড়কে জায়গা কাড়াকাড়ি হয়। অনেকে এ বিড়ম্বনা থেকে রেহায় পেতে মঙ্গলবার বিকেলে এসে সড়ক দখল করে নেই। বৃষ্টি হলে মালামাল ফেলে চলে যেতে হয়। অনেক সময় এক জনের মাল আরেক জন নিয়ে যায় বলে তিনি জানান।
ইজারা আদায়কারী মো.ইসকেন্দার বলেন, এবিষয়ে আমি জেলা প্রশাসককে বলেছি। অনুরোধ করেছি কাচালং বাজারটা যেন দ্রুত সংস্কার কিংবা স্থানান্তর করা হয়। আমরা দু বছর ধরে ইজারা নিয়েছি। সড়কে ও মাঠে ইজারা আদায় করতে আমাদেরও কষ্ট হয়। আমাদেরকে জেলা পরিষদ থেকে বলা হয়েছে ইজারা এলাকার এক কিলোমিটারের ভেতরে টোল আদায় করতে পারবো।

কাচালং বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী উৎপল তালুকদার বলেন, বাজারে হাট না বসায় আমাদের দীর্ঘ ১১ বছর ধরে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। প্রতি বছর কাচালং বাজারের নামে ইজারা দেওয়া কিন্তু ইজারা আদায় করা অন্য এলাকা থেকে। হাট না বসায় ইতিমধ্যে অনেক ব্যবসায়ী অন্যত্র চলে গেছে বলে তিনি জানান।
কাচালং বাজার কমিটির সভাপতি মো. আবদুল হাকিম বলেন, কাচালং বাজার থেকে প্রতিবছর টোল আদায় করা হচ্ছে। দ্রুত বাজারটি স্থাপন করার জন্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা প্রশাসকে জানানো হয়েছে। শুনেছি জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদ কাচালং বাজারের জন্য একটি টিলা দখল করে নিয়েছে। শিগগিরই ওই টিলা কেটে বাজার স্থাপন করা হবে বলে তিনি জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন চৌধুরী বলেন, প্রতি বুধবারে সড়কের দুপাশে হাট বসানো হয়। আমি চাইলে সেখানে হাট না বসানো জন্য ব্যবস্থা নিতে পারি। কিন্তু ওরা যাবে কোথায়। হাট বসানো বিষয়ে মাসিক সমন্বয় সভায় উত্থাপন করা হবে। এবং জেলা পরিষদকে অবগত করা হবে বলে তিনি জানান।
জেলা পরিষদের সদস্য বৃষকেতু চাকমা  বলেন, এবিষয়ে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহোদয়কে জানানো হবে। কাচালং বাজারটা কবে সংস্কার কিংবা স্থানান্তর করা হবে এ বিষয়ে পরে জানানো হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন