পাহাড়ের নিরাপত্তায় থাকবে ‘মাউন্টেন পুলিশ’

fec-image

*২২৬০টি পদের অনুমোদন দিয়েছে জনপ্রশাসন *সদর দপ্তর হবে তিন পার্বত্য জেলায়

পাহাড়ের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন সবসময়ই চ্যালেঞ্জের।  সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবার পাহাড়ের ৩ জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের জন্য নতুন করে গঠন করা হচ্ছে ‘মাউন্টেন পুলিশ’ ব্যাটালিয়ন।  স্থানীয় অপরাধের পাশাপাশি পাহাড়ে সন্ত্রাসী সংগঠনের তৎপরতা, মাদক ও চোরাচালান ঠেকাতে কাজ করবে মাউন্টেন পুলিশ।  এই ব্যাটালিয়নের ক্যাম্পও করা হবে পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।  পাহাড়িদের নিরাপত্তায় ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী, বর্ডারগার্ড, জেলা পুলিশ, আনসার ব্যাটালিয়ন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন কাজ করছে।  এবার নতুন একটি বিশেষায়িত ইউনিট ‘মাউন্টেন পুলিশ’ গঠন করে নিরাপত্তাকের আরও জোরদার করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ।  আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধীনে এই ইউনিটে থাকবে ২২শ’রও বেশি সদস্য।

পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা) ফারুক আহমেদ বলেন, আর্মড পুলিশ মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন গঠনের প্রস্তাবটি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেটি যাচাই-বাছাই শেষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ২ হাজার ২৬০টি পদ সৃজনে সম্মতি দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবটি এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ে রয়েছে।  প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই শেষে ছাড় পাওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী সচিব কমিটিতে যাবে। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর পৃথক তিনটি আর্মড পুলিশ মাউন্টেন ব্যাটালিয়নের যাত্রা শুরু হতে পারে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, যাত্রা শুরুর পর রাঙামাটি পার্বত্য এলাকায় ১৮ আর্মড পুলিশ মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন, বান্দরবানে ১৯ আর্মড পুলিশ মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন এবং খাগড়াছড়িতে ২০ আর্মড পুলিশ মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন দায়িত্ব পালন করবে।  এই তিনটি ব্যাটালিয়নে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেওয়া ২ হাজার ২৬০টি পদের মধ্যে একজন ডিআইজি, পাঁচজন অতিরিক্ত ডিআইজি, ১১ জন পুলিশ সুপার, ২১ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ২১ জন সহকারী পুলিশ সুপার, চারজন মেডিকেল অফিসার, ২৩ জন নিরস্ত্র পরিদর্শক, ৪৮ জন সশস্ত্র পরিদর্শক, ৪০ জন নিরস্ত্র উপপরিদর্শক, ২০৭ জন সশস্ত্র উপপরিদর্শক, ৫১ জন নিরস্ত্র সহকারী উপপরিদর্শক, ২০৭ জন সশস্ত্র সহকারী উপপরিদর্শক, ৩৯৬ জন নায়েক এবং ১ হাজার ২২৫ জন কনস্টেবল রয়েছেন।

সব জনবলের মধ্যে ডিআইজির কার্যালয়ে ২ জন অতিরিক্ত ডিআইজি ছাড়াও ২ জন পুলিশ সুপার, ৩ জন করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপার, ৫ জন পরিদর্শক, ১০ জন উপপরিদর্শক, ১২ জন সহকারী উপপরিদর্শক ৬ জন নায়েক এবং ২৫ জন কনস্টেবলসহ মোট ৭০ জনের জনবলের কথা রয়েছে প্রস্তাবনায়। বাকি জনবলের মধ্যে প্রতিটি ব্যাটালিয়নে একজন অতিরিক্ত ডিআইজির নেতৃত্বে ৩ জন পুলিশ সুপারসহ মোট ৭৩০ জন করে জনবল থাকবে।

পার্বত্য এলাকার জেলাগুলোর কর্মকর্তারা জানান, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলাগুলো দুর্গম এলাকা হওয়ায় থানা পুলিশের সদস্যদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এসব এলাকায় গাড়িতেও যাতায়াত নেই। স্থানীয় অপরাধসহ পাহাড়ে নিত্যনতুন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। সন্ত্রাসী গ্রুপের অপতৎপরতা, মাদক ও চোরাচালান ঠেকানো স্থানীয় থানা পুলিশের মাধ্যমে পুরোপুরি সম্ভব নয়। পুলিশের মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন পাহাড়ের এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে ক্যাম্প তৈরি করে দায়িত্ব পালন করলে পাহাড়ে নিরাপত্তা আরও সুদৃঢ় হবে বলেও জানান তারা।

বান্দরবান আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি ও অধিনায়ক আলী আহমদ খান বলেন, বিভিন্ন অপরাধীদের ধরার জন্য মাদক, চোরাচালান বা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীসহ অন্যান্য যেকোনো অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ইস্যুতে যে সমস্ত গোয়েন্দা তথ্য দরকার তার জন্য আমাদের ইন্টেলিজেন্স টিম রয়েছে। আমরা সাইবার ইউনিট গঠন করেছি। যেসব দুর্গম এলাকায় জেলা পুলিশ যেতে পারে না, সে সব অঞ্চলে আমাদের অপারেশন চলছে।

এপিবিএনের ডিআইজি (অপারেশন) মাহবুব আলম জানান, সীমিত পরিসরে কাজ শুরু করেছে মাউন্টেন পুলিশ। তাদের মূল কাজ হবে পার্বত্য অঞ্চলের সন্ত্রাসী গ্রেফতার, মাদকদ্রব্য উদ্ধার, জঙ্গিদের কাজ মনিটর ও নিয়ন্ত্রণ করাসহ পার্বত্য অঞ্চলের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা।

পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, মাউন্টেন পুলিশ ব্যাটালিয়নের কার্যক্রম শুরুর আগে এসব ব্যাটালিয়নে নিয়োগ দেওয়া পুলিশ সদস্যদের সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তারা যাতে পাহাড়ে নানা প্রতিকূল পরিবেশে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে পারে।

নতুন ব্যাটালিয়নের কিছু কার্যক্রম এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে পার্বত্য অঞ্চলে কার্যক্রম শুরুর প্রক্রিয়া চলছে। এই ব্যাটালিয়নে নিয়োগ দেয়া পুলিশ সদস্যদের সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ দেয়াসহ পাহাড়ে প্রতিকূল পরিবেশে মানিয়ে নেয়ার বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলেও জানান ’মাউন্টেন পুলিশ’ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এছাড়াও তিন পার্বত্য জেলায় তিনটি ব্যাটালিয়ন গঠন করা হবে। ১৮ এপিবিএন রাঙামাটি, ১৯ এপিবিএন বান্দরবান ও ২০ এপিবিএন খাগড়াছড়িতে গঠন করা হবে বলেও জানায় সংশ্লিষ্টরা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: নিরাপত্তা, পার্বত্য জেলা, মাউন্টেন পুলিশ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন